আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা। প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসেও প্রার্থী ও সমর্থকদের সহিংসতা থামছে না। নির্বাচনী ক্যাম্পে গুলিতে মৃত্যুও হয়েছে নেতকর্মীদের।
গতকাল বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রার্থীর এক সমর্থককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। নিহত ব্যক্তির নাম ডালিম সরকার (৩৫)। এছাড়াও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সহিংসতায় মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এর আগের দিনও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৯৬-এ। এর মধ্যে ভোটে অংশগ্রহণকারী ২৭টি দলের বাইরে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। এ মুহূর্তে ৩০০ আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, শেষ
সময়ে নির্বাচনী প্রচারে কোথাও কোথাও সহিংসতায় জড়াচ্ছেন প্রার্থীর সমর্থকরা। গত মঙ্গলবার বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র
প্রার্থী এ কে ফাইয়াজুল
হক রাজুর নির্বাচনী মিছিলে হামলা হয়। এতে তার
৪০ কর্মী আহত হন বলে
দাবি করেছেন ফাইয়াজুল হক। এ সময়
নৌকার সমর্থকরা ১৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ
ও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া
মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড
ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়
বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নে নৌকার ক্যাম্পে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর। নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভনের পথসভায় হামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই সমর্থক আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে থানায় করা এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ শহর-সংলগ্ন ঝিনুকমালা আবাসনে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে। হামলায় ঝিনুকমালা আবাসনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম আহত হন। রাত সাড়ে ১০টায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বৈন্যা মোড়ে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হন বৈন্যা গ্রামের হোসেন আলী (৫০) ও বাবু মিয়া (৩৫)। গাইবান্ধার পলাশপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া একই দিন গভীর রাতে মাদারীপুরের কালকিনিতে নৌকার একটি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসূত্র বলছে, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৪৩৬টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১১৬টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৬টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ২৭৩ প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় পাঁচ শতাধিক শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাদের মধ্যে আবার অন্তত ৭০ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির ১৫ জনসহ অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও শোকজ করা হয়েছে। শোকজ নোটিশ পাওয়া বাকিদের মধ্যে আছেন দলের কর্মী-সমর্থক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্দেশে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে নিয়মিত আদালতে কয়েকটি মামলা করা হয়। গতকাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত।
মামলা
হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী
লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত দুই
প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসনের আ
ক ম বাহাউদ্দিন বাহার
ও বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র
দেবনাথ শম্ভুকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে যথাক্রমে ১
লাখ ও ৫০ হাজার
টাকা জরিমানা করে শেষবারের মতো
সতর্ক করা হয়েছে। বেপরোয়া
প্রার্থীদের লাগাম টানতে মঙ্গলবার এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর
প্রার্থিতাও বাতিল করে ইসি। যদিও
গতকাল তিনি উচ্চ আদালত
থেকে আবার প্রার্থিতা ফিরে
পেয়েছেন।
নির্বাচন প্রচারণা সমর্থক সংঘর্ষ মৃত্যু
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।