একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া ৫৫ জন প্রার্থী দ্বাদশ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রীও রয়েছে।
জানা যায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৬ জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছে ১৩ জন এমপি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্তমান ১২ জন সংসদ সদস্যও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে হেরেছেন। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ৩ প্রার্থী ভোটে হেরেছেন।
তথ্যসূত্র বলছে,
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি
ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২৫টিতে
জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৬২টি আসনে। জাতীয়
পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি
আসনে। এছাড়াও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে
১টি আসন।
নৌকা
প্রতীক নিয়ে পরাজিত ২৬ সংসদ সদস্য
হলেন:
হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী
লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
মো. মাহবুব আলী, যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী
স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা-১৯ আসনে
(সাভার ও আমিনবাজারের একাংশ)
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। নৌকা প্রতীক নিয়ে
নির্বাচন করা বাকি প্রার্থীরা হলেন- নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া)
আসনে অসীম কুমার উকিল,
মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ,
কালকিনি ও ডাসার) আসনে
আবদুস সোবহান মিয়া, মুন্সিগঞ্জ-৩ (মুন্সিগঞ্জ সদর-গজারিয়া) আসনে মৃণাল কান্তি
দাস, বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) ধীরেন্দ্র দেবনাথ, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম,
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)
আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ
নেজামুদ্দিন নদভী, যশোর-৬ (কেশবপুর)
আসনে শাহীন চাকলাদার, গাজীপুর-৫ (সদর-কালীগঞ্জ)
আসনে মেহের আফরোজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বদরুদ্দোজা
মো. ফরহাদ হোসেন, দিনাজপুর-১ আসনে মনোরঞ্জন
শীল গোপাল, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে
আ ক ম সরওয়ার
জাহান, কুষ্টিয়া-৪ আসনে সেলিম
আলতাব জর্জ, শেরপুর-১ আসনে আতিউর
রহমান আতিক, ময়মনসিংহ-১ আসনে জুয়েল
আরেং, ময়মনসিংহ-৬ আসনে মোসলেম
উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৭ আসনে হাফেজ
রুহুল আমীন মাদানী, ময়মনসিংহ-১১ আসনে কাজিম
উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা-২ আসনে সেলিমা
আহমাদ, কুমিল্লা-৩ আসনে ইউসুফ
আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৪ আসনে হেরেছেন
রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল
হাসেম, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)
আসনে শহিদুল ইসলাম ও ঝিনাইদহ–২
আসনে তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা
১৩ সংসদ সদস্য হলেন:
গাইবান্ধা-৪ আসনে মো.
মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নওগাঁ-৩ আসনে মো.
ছলিম উদ্দীন তরফদার, নওগাঁ-৪ আসনে মুহা.
ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, রাজশাহী-৪ আসনে এনামুল
হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনে শফিকুল
আজম খান, জামালপুর-৪
আসনে মো. মুরাদ হাসান,
সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোয়াজ্জেম
হোসেন, হবিগঞ্জ-২ আসনে আবদুল
মজিদ খান, সাতক্ষীরা-২
আসনে মীর মোস্তাক আহমেদ,
যশোর-৪ আসনে রণজিত
কুমার রায়, ময়মনসিংহ-৯
আসনে আনোয়ারুল আবেদীন খান, চট্টগ্রাম-১২
আসনে সামশুল হক চৌধুরী এবং
কক্সবাজার-১ আসনে জাফর
আলম।
জাতীয়
পার্টির পরাজিত ১২ সংসদ সদস্য
হলেন:
ঢাকা-৪ আসনে
সৈয়দ আবু হোসেন, গাইবান্ধা-১
আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান,
কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ,
নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান ও নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল,
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন, বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান এবং বগুড়া-৩ আসনে নুরুল
ইসলাম তালুকদার, রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে
মসিউর রহমান (রাঙ্গা), পিরোজপুর-৩
আসনে রুস্তম আলী ফরাজী।
১৪ দলের পরাজিত
তিন সংসদ সদস্য হলেন:
পিরোজপুর-২ আসনে ১৪
দলের শরিক জেপির চেয়ারম্যান
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের
সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স
পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জ–১
আসনের সংসদ সদস্য বিকল্পধারার
মাহি বি চৌধুরীও দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচন বিএনপি বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়, তা উপজেলা
নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে—এমন আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকার
সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মন্ত্রী-এমপিদের
প্রভাবমুক্ত রাখতে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দেয় দলটি।
কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অটল থাকেন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা।
বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের মধ্যে
১০ জন জিতেছেন আর হেরেছেন চারজন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত-
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন।
বগুড়া-১ আসনের এমপি শাহদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল
সারিয়াকান্দি উপজেলায় এবং ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন সোনাতলা উপজেলা থেকে নির্বাচন করে
জয়ী হয়েছেন।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নুরে
আলম সিদ্দিকী নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে
কিছু ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন।
খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা রামগড় উপজেলার
চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্ব প্রদীপ কারবারীও জয়ী হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলায় নির্বাচনে লড়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী এবং মাদারীপুর-২
আসনের এমপি শাহজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান। তিনিও জয়ী হয়েছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন আতাউর
রহমান আতা। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুবউল-আলম
হানিফের চাচাতো ভাই।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচা ও এক চাচাতো
ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়েন। তাদের মধ্যে জয়ী হন ছোট চাচা
শফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের এমপি শামসুল
হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন ও ভাতিজা আব্দুল কাদের দুজন একই উপজেলায় চেয়ারম্যান
পদে নির্বাচন করে হেরে গেছেন।
টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো
ভাই ধনবাড়ী উপজেলায় হারুনার রশিদ হিরা নির্বাচনে হেরে গেছেন।
নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক শরীফুল হক
পলাশ উপজেলায় হেরেছেন। মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাহাব
উদ্দিনের ভাগনে সোয়েব আহমেদ বড়লেখা উপজেলায় পরাজিত হয়েছেন।
এর আগে, হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি
মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমি ও মুন্সীগঞ্জ-৩-এর এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচা
আনিছ উজ্জামান আনিস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি স্বজন প্রার্থী
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা
আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা আগামীকাল শুক্রবার
(১০ মে) অনুষ্ঠিত হবে। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য
জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার (১০ মে) বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা
জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত
হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন
ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মন্তব্য করুন
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথমধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে
গতকাল বুধবার (৮ মে)। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।
নির্বাচন অনেকটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে উপজেলা নির্বাচনের
প্রথম ধাপের ভোটের মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায় ভোটারের খরা।
বুধবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন
কিছু সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। জাল ভোট দেওয়া, জবরদস্তি এবং ভোট কিনতে টাকা বিলানো,
মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার এসবের অভিযোগও ছিল।
মাদারীপুর সদর, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা, নোয়াখালীর
সুবর্ণচরে কিছু কেন্দ্রে সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায়
বোমাবাজি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কাঁদানে গ্যাসের
শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। ভোটে অনিয়মের অভিযোগে বগুড়ায় দুই সহকারী প্রিসাইডিং
কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই জেলার আরেক কেন্দ্রে প্রিসাইডিং
কর্মকর্তাসহ দুজনকে আটক করা হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোটের এদিনে রাত সাড়ে ১২টায় ১২২টি উপজেলায়
চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১০১ জনই
আওয়ামী লীগের।
দেশে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৪৪টি। এর
মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি—এই
চারটি দলের মোট ১২ জনের মতো দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ এবার তাদের কোনো প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক না দিলেও প্রতিটি
উপজেলায় দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূল
প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রচারে উত্তেজনা ও প্রভাব বিস্তারের যে তথ্য ভোটের আগে ছিল, এর
প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের নাম এসেছে।
গতকাল বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
৮ চেয়ারম্যানসহ ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী
লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উপজেলা ভোটের প্রথম পর্ব নিয়ে
অখুশি নয়।
দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলবিহীন ভোটে
৪০ শতাংশ ভোট পড়লেই তারা সন্তুষ্ট থাকবেন। বরং ভোটের দিন বড় সংঘাত, প্রাণহানি হয়নি
এটাই বড় সাফল্য। পরের পর্বগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
ভোট গ্রহণ শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে (সিইসি) কাজী
হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের
মধ্যে হতে পারে বলে প্রধান নির্বাচন। নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এমন ৩৪টি
ঘটনায় ৩৭ জনকে আটক করা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম চার
ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে থাকতে পারে। আর প্রথম দুই ঘণ্টার হিসাব জানিয়ে বলা
হয়েছিল, ৭ থেকে ৮ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।
ভোটারের কম উপস্থিতির ব্যাখ্যায় সিইসি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে
অনেকেই ধান কাটতে থাকায় ওরা ভোট দিতে আসেননি। সকালে বেশ কিছু জায়গায় ঝড়–বৃষ্টি হয়েছে,
এটা একটা কারণ হতে পারে।’ ভোটের হার নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য
করতে চাননি সিইসি।
উপজেলা নির্বাচনের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম চারটি নির্বাচনে
গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল। সেগুলোতে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল বেশি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। সেবার ভোট পড়ে
৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। এবারও বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ইসলামী
আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো ভোট বর্জন করেছে।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বিরোধী দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে প্রথমবারের মতো দলীয়
সিদ্ধান্তে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র ভোট করার সুযোগ দেয়
আওয়ামী লীগ।
ইসির হিসাবে, জাতীয় নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই
নির্বাচনের চার মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচন শুরু হলো। চার ধাপে ৪৫০টির মতো উপজেলায়
ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। সর্বশেষ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে
৩০-৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক। অনেকের আশঙ্কা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন
খুনোখুনি–মারামারির মাধ্যমে সমাপ্ত হবে। প্রাণহানি ছাড়া একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন
হয়েছে।
২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি
ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। সেবার পাঁচ ধাপে উপজেলা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা
গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত বলে তখন জাতীয় সংসদে বলেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
এর আগে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট
পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। সে বছর ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়। দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগের
নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৃতীয় উপজেলা পরিষদের
নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ গত দুই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি
ব্যাপকভাবে কমেছে।
২০১৯ সালে প্রথমবার বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো উপজেলা নির্বাচন
বর্জন করে। এর আগের নির্বাচনগুলোতে দলটির নেতারা অংশ নিয়েছিল। এরপর থেকেই ভোটারের উপস্থিতি
কমতে থাকে। এবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস
চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ৭৫ জন অংশ নিয়েছেন। তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করেছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের বেশির ভাগেরই উপজেলা
ভোটে কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। দু-একটা দলের স্থানীয় নেতারা কিছু কিছু উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪–দলীয় জোটের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা
বলেন, অর্থ, প্রভাব, পেশিশক্তি ও লোকবল—এসব বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে
নামার মতো শক্তি তাঁদের নেই। এ ছাড়া প্রশাসন আওয়ামী লীগের নেতা ছাড়া অন্যদের খুব একটা
পাত্তাও দেয় না। ফলে শুধু শুধু ভোটে নেমে লাভ কী?
এদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উপজেলা ভোটের প্রথম পর্ব নিয়ে অখুশি
নয়। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলবিহীন ভোটে ৪০ শতাংশ ভোট পড়লেই
তারা সন্তুষ্ট থাকবেন। বরং ভোটের দিন বড় সংঘাত, প্রাণহানি হয়নি—এটাই বড় সাফল্য। পরের
পর্বগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, এখন ৪০ শতাংশ
ভোটই একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। ভোটে প্রাণহানি এড়ানোই বড় সাফল্য মনে করেন তারা।
বুধবার (৮ মে) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক। অনেকের
আশঙ্কা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন খুনোখুনি–মারামারির মাধ্যমে সমাপ্ত হবে। প্রাণহানি
ছাড়া একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে’।
তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, উপজেলার এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ
হলেও ভোট নিয়ে মানুষের মধে৵ আস্থার সংকট রয়েছে। সে কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচনেও
ভোটারের উপস্থিতি কম।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন,
একসময় বাংলাদেশের নারীদের দল বেঁধে ভোট দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে খবর হতো। এখন আস্থাহীনতার
কারণে ভোটার আসে না। কারণ, ভোট দিতে পারবে কি না, দিলে সঠিকভাবে গণনা হবে কি না এবং
ফলাফল পাওয়া যাবে কি না, সেই আস্থাহীনতা আছে।
তিনি আরও বলেন, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বর্জনও ভোটার কমিয়ে দিয়েছে।
মূলত নির্বাচন কমিশন ও ভোট-ব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতার কারণে দলগুলোও ভোট বর্জন করছে।
এটা গণতন্ত্রের জন্য দুঃসংবাদ।
উপজেলা নির্বাচন ভোটার খরা ইসি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট সম্পন্ন হয়েছে গতকাল বুধবার (৮ মে) । বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করলেও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলটির বহু নেতা নির্বাচনে অংশ নেন। যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করেছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন নেতা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়, তা উপজেলা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে—এমন আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দেয় দলটি। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অটল থাকেন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথমধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার (৮ মে)। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন অনেকটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটের মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায় ভোটারের খরা। বুধবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। জাল ভোট দেওয়া, জবরদস্তি এবং ভোট কিনতে টাকা বিলানো, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার এসবের অভিযোগও ছিল।