নানা
নাটকের পরও রাজনৈতিক সমঝোতা
হচ্ছে না রওশন এরশাদ ও জি এম
কাদেরের মধ্যে। নিজ নিজ অবস্থানে
কঠোর উভয়েই। এরকম বাস্তবতায় আবারও
চূড়ান্তভাবে ভাঙতে যাচ্ছে মূলধারার জাতীয় পার্টি।
আগামী
শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় পার্টির ব্যানারে রওশন এরশাদের ডাকা
জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ
লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে
গুলশানে একটি বৈঠকও হয়েছে।
দলের
উভয় অংশের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের মধ্যে জাপা ভাঙার বিষয়টি
চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে
সমঝোতার আশা করেছিলেন অনেকেই।
তাদের ধারণা ছিল, দলের স্বার্থে
নমনীয় হতে পারেন রওশন
ও জি এম কাদের।
নেতাকর্মীদের মধ্যে
গুঞ্জন ছিল, সমঝোতার জন্য
জি এম কাদের যে
কোনো দিন রওশনের বাসায়
এসে কথা বলবেন। এজন্য
তৃতীয় একটা পক্ষ চেষ্টা
করে রীতিমতো ব্যর্থ হয়েছে।
নেতাকর্মীদের
সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, জি এম কাদের
মনে করেন, তার নামে নির্বাচন
কমিশনে দল ও প্রতীকের
নিবন্ধন রয়েছে। তা ছাড়া জাতীয়
পার্টি এখন বিরোধী দল।
সংসদে ১৩ জন সংসদ
সদস্য রয়েছেন। এমন বাস্তবতায় রওশনপন্থিরা
চেষ্টা করলেও দল ছিনিয়ে নেওয়ার
সুযোগ নেই। বয়সের কারণে
রওশনের দল পরিচালনা ও
দলকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
এই প্রেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে রওশনপন্থিরা ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরবে।
রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক
এমপি গোলাম মসিহকে হারিয়েছেন রওশন। রওশনপন্থিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে
জি এম কাদেরের সঙ্গে
আবারও হাত মিলিয়েছেন হুসেইন
মুহম্মদ এরশাদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ
রাজনৈতিক সহচর ও সাবেক
রাষ্ট্রদূত মসিহ। তবে এখনো তিনি
প্রকাশ্য হননি।
এদিকে রওশনপন্থিরা
মনে করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাপায় সৃষ্ট
গৃহদাহে অনেকের দল থেকে বহিষ্কৃত
হয়েছেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছায়
পার্টি ছেড়ে আসার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে
লাগিয়ে নতুন করে দল
গঠনের গতি বেড়েছে। এরশাদের
স্ত্রী হিসেবে রওশনকে দিয়ে দল গোছানো
ও জাতীয় পার্টির স্বীকৃতি আদায়েও সফল হওয়া সম্ভব
বলে মনে করেন তারা।
এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে
আস্তে আস্তে মিত্রহারা হবেন জি এম
কাদের। এমনকি সমঝোতার জন্য এগিয়ে আসতে
বাধ্য হবেন তিনি। এদিকে
অভিযোগ উঠেছে, রওশনপন্থিরা গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেওয়াসহ
রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রলোভন দেখিয়ে কাদেরপন্থিদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা
অব্যাহত রেখেছেন।
জাপা
সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী
দলের নেতা ও জাপা
চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের
সঙ্গে সম্প্রতি একাধিক বৈঠক করেছেন গোলাম
মসিহ। সূত্র বলছে, রওশনপন্থিদের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা জি এম কাদেরের
কাছে তিনি বলে দিয়েছেন
বলেও জানা গেছে।
জাপার
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত
নেপথ্যে থেকে এখন জি
এম কাদেরকে শক্তি জোগাচ্ছেন গোলাম মসিহ ও এরশাদের
সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। যে কোনো সময়
তাদের আবারো দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে
ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
রওশন
এরশাদের অন্যতম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত গোলাম মসিহর আকস্মিক পাল্টে যাওয়া নিয়েও আছে বিস্তর আলোচনা।
সাবেক বিরোধী দলের নেতা রওশনের
ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করছেন, অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে
তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে
চাইলে গোলাম মসিহ বলেন, তিনি
কোনো অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে
যুক্ত নন। মূলত রওশনপন্থিদের
কর্মকাণ্ড পছন্দ না হওয়ায় তিনি
নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
প্রয়োজনে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
এদিকে
৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রওশনের ডাকা সম্মেলন নিয়ে
কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যদিও
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সম্মেলনের পোস্টার চোখে পড়েছে। কাদের
পক্ষ বলছে, মূলত চাপ সৃষ্টির
জন্যই দল থেকে বহিষ্কৃত
কয়েকজন রওশনকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি
স্বার্থে জাপা ভাঙার চেষ্টা
চালাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে সম্মেলন নাও হতে পারে।
রওশনের
সঙ্গে থাকা ছয়জন শীর্ষ
নেতা জানান, তারা এরই মধ্যে
জি এম কাদেরের সঙ্গে
থাকা বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী
নেতাসহ এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই
এই অংশে ভেড়ার আশ্বাস
দিয়েছেন দাবি করে নেতারা
জানান, কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর, উপজেলা কমিটির নেতারাও সম্মেলনে এ অংশে আনুষ্ঠানিক
যোগ দেওয়ার কথা।
তবে
সবকিছু নির্ভর করছে আগামী ৬
মার্চ বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এমপি
ও প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের পর। এই বৈঠকে
পরিষ্কার হবে, কারা জি
এম কাদেরের সঙ্গে থাকছেন, কারা থাকছেন না।
প্রত্যাশা অনুযায়ী হেভিওয়েট ও এমপিদের বাগিয়ে
আনা সম্ভব না হলে রওশনের
সম্মেলন যথাসময়ে হবে কি না
সন্দেহ রয়েছে। প্রয়োজনে সম্মেলন পেছানো হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রওশন এরশাদের
গুলশান-২-এর বাসায়
সাবেক সংসদ সদস্য কাজী
ফিরোজ রশিদের নেতৃত্বে নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি
কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে
রওশন এরশাদ, মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদসহ
কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
জানতে
চাইলে রওশন অংশের মুখপাত্র
সুনীল শুভরায় বলেন, ‘ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী যথাসময়ে জাপার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই আমাদের
সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা অপেক্ষা করছি।
আশা করি, সম্মেলনের দিন
চমক থাকবে। তিনি বলেন, সম্মেলনের
তারিখ পরিবর্তন নিয়ে একটি অংশ
অপপ্রচার চালাচ্ছে’।
রওশনপন্থিদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যে কারও স্বাধীনতা আছে রাজনৈতিক দল করার। কিন্তু তাদের সঙ্গে কারা আছে বা থাকবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
ভাঙন জাতীয় পার্টি জাপা রওশন এরশাদ জি এম কাদের
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।