অভ্যন্তরীণ
নানা টানাপোড়েনের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের
নিয়ে শনিবার (৯ মার্চ) কাউন্সিল করতে যাচ্ছেন রওশন
এরশাদ। শেষ মুহূর্তে নিজের
অনুসারী অনেকেই দশম জাতীয় সম্মেলনে
যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন
সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান। আবার নেতৃত্ব ঠিক
করা নিয়েও নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
জাতীয়
পার্টির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের
১ জানুয়ারি। এরপর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে
অন্তত ছয় ভাগে বিভক্ত
হয়েছে দলটি। তারপর থেকে এরশাদ-রওশন
ও জি এম কাদের
বলয়কেই জাপার মূল ধারা হিসেবে
বিবেচনা করা হতো। সাবেক
রাষ্ট্রপতি ও সেনা শাসক
এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই নেতৃত্ব
নিয়ে রওশন, কাদের অর্থাৎ দেবর-ভাবির মধ্যে
দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।
চলতি
বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে
কোন্দলের মাত্রা চরমে ওঠে। নির্বাচনে
পরাজিত প্রার্থীরা সরাসরি পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের
ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে
মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সভা ডেকে
ফল বিপর্যয়ের জন্য দোষারোপ করেন।
তাদের পদত্যাগও চান পরাজিত প্রার্থীদের
অনেকেই। এ ঘটনা কেন্দ্র
করে দলে থাকা দীর্ঘদিনের
মিত্রদের একে একে বহিষ্কার
করেন জি এম কাদের।
এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি
জি এম কাদের ও
মুজিবুল হক চুন্নুকে চেয়ারম্যান
ও মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে
জাপার স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হন রওশন এরশাদ।
মূলত
রওশন অংশে তিনি ছাড়া
বাকি শীর্ষ নেতাদের সবাই দল থেকে
বহিষ্কৃত। বহিষ্কৃত নেতাদের হাতে নিয়েই নতুন
করে দল গঠন করতে
যাচ্ছেন সাবেক এই বিরোধী দলের
নেতা। যদিও দলের প্রধান
পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশনকে এখনো বহিষ্কার করেননি
জি এম কাদের।
শনিবার
(৯ মার্চ) দলটির
একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠার
পর থেকে জাপায় সবচেয়ে
বড় ভাঙন হতে যাচ্ছে।
যদিও ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার
মধ্যে রংপুরসহ ১৭টি জেলা সম্মেলনে
যোগ দিচ্ছে না। অন্য জেলার
নেতাকর্মীরাও কমবেশি এখন দুই ভাগে
বিভক্ত। তবে কেন্দ্রের বিরোধের
কমবেশি প্রভাব পড়েছে সবখানেই।
হুসেইন
মুহম্মদ এরশাদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ
রাজনৈতিক সহচর ও রওশনের
সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফিরোজ
রশীদ।
বিভক্তি
প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে
অনেক চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত সম্ভব
হয়নি। জাপা ভাঙছে। এজন্য
কে দায়ী, তা হয়তো সময়
মূল্যায়ন করবে’।
সম্মেলনে
নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে জি এম কাদেরের
পক্ষে দল থেকে বহিষ্কারের
হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ করে
তিনি বলেন, বেশিরভাগ জেলা নেতারা আমাদের
সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তাদের
নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি লোক
পাঠানো হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে
অনেকেই সরাসরি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। সম্মেলনে না আসতে নানা
প্রলোভন দেখাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও জি
এম কাদেরের কাছে নেতাকর্মীদের কদর
বেড়েছে। এটা ভালো দিক।
রাজনীতিতে এসব খেলা হবে,
এটাই স্বাভাবিক উল্লেখ করে সাবেক এই
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ
জানিয়েছি।
রওশন
অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, নানা কারণে সৃষ্ট
মতবিরোধে অনেকেই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।
তাদের মধ্যে রয়েছেন জাপার সাবেক মহাসচিব ও এরশাদের ভাগ্নে
মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন এরশাদের সাবেক
রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএম আলমসহ
বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
সূত্রগুলো
বলছে, কাজী মামুনুর রশীদকে
মহাসচিব করা নিয়ে রওশন
অংশে বড় রকমের মতবিরোধ
দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা তার নেতৃত্বে দল
পরিচালনার সম্মতি দিচ্ছেন না। কেউ কেউ
এ কারণে বেঁকে বসেছেন। কিন্তু মহাসচিব হিসেবে রওশনের পছন্দের তালিকায় প্রথম কাজী মামুন। দলে
মহাসচিব পদে অন্যতম প্রার্থী
সাবেক এমপি সৈয়দ আবু
হোসেন বাবলা। গতকাল শুক্রবার রাতে কাজী ফিরোজ
রশীদের নামও এ পদের
জন্য শোনা গেছে।
এমন
বাস্তবতায় আজ সকাল ১০টায়
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গতকাল
বিকেলে সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা গেছে,
আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। মিলনায়তনের বাইরে রওশন এরশাদের ছবিসহ
টানানো হয়েছে বিশাল ব্যানার। ভেতরে চলছে সাজসজ্জার কাজ।
নেতাকর্মীদের জন্য বাইরে চেয়ারের
ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নজরজুড়ে
সাঁটানো হয়েছে সম্মেলনের পোস্টার।
সাজসজ্জার
দায়িত্বে থাকা নেতারা জানিয়েছেন,
প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার
নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন।
তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, কাউন্সিলে না আসতে নেতাকর্মীদের
নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদিও নেতাকর্মী ঠেকানোর
কথা রীতিমতো অস্বীকার করেছেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি
কালবেলাকে বলেছেন, জি এম কাদেরের
নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি হলো মূল ধারা।
যারা দল করে না
বা দল থেকে বহিষ্কৃত
তারা শনিবারের সম্মেলনে যোগ দেবে। কাউন্সিলে
যাওয়ার স্বাধীনতা তো সবার আছে।
অন্যদিকে
রওশপন্থি বেশ কয়েকজন নেতা
জানিয়েছেন, সম্মেলনে কাদের অংশের ১০ জনের বেশি
প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ৩০ জনের বেশি
কেন্দ্রীয় নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাদান
করার কথা রয়েছে। এ
ছাড়া মাঠপর্যায়ে গত নির্বাচনে পরাজিত
শতাধিক প্রার্থী আসছেন রওশনের ছাতার নিচে। সেইসঙ্গে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে আজকের সম্মেলনে।
কাদের অংশের নেতারা বলছেন, মূলত সম্মেলনে রাজধানী থেকে কিছু ভাড়া করা লোক নিয়ে লোকসমাগমের চেষ্টা চলছে। সারা দেশের পরীক্ষিত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কেউ সম্মেলনে আসছেন না। দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর থেকে হাতেগোনা কয়েকজন সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে রংপুর থেকে কেউ আসছেন না।
কাউন্সিল রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে প্রায় পরিত্যক্ত আবর্জনার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের ওজন বাড়াতে এবং রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য নতুন স্টান্টবাজি গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন? গতকাল তিনি ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাঁর কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিরক্ত এবং অনুৎসাহী। বারবার সাংবাদিকদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি বাড়িতে গিয়েছেন এবং সেখানে রীতিমতো নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আজ সারাদিন দলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি ফোন করা হলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন, বিশ্রামে আছেন কিংবা পরে ফোন করুন- এরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই নীরবতা বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একের পর এক ভুল কৌশল বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, প্রথম দফা ভোটগ্রহণের পর সেই কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির ভোট বর্জন যেমন সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়নি ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাননি। সাত জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে আগামী ধাপগুলোতে যারা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারা আবার নতুন করে উৎসাহ পাবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। এর ফলে বিএনপির বহিষ্কার কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।