বিএনপির বেশ কিছু নেতা যারা বিভিন্ন সময় বেশ সরব এবং অত্যন্ত কর্মমুখর
ছিলেন তারা এখন নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন, বিশেষ করে ৭ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর বিএনপির
অনেক নেতাকেই দেখা যাচ্ছে তাদের দলীয় কর্মকান্ডে এক ধরনের অনিহা। তারা ঠিক-ঠাক মতো
দলের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছেন না। কেন তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিলেন? এনিয়ে বিএনপির
মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের মতের মিল হচ্ছে না, বিএনপির
চিন্তা এবং কর্মসূচীর সঙ্গেও তারা একমত হতে পারছেন না। এজন্য তারা একরকম হতাশা থেকেই
নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম খান
যারা এরকম নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম স্থায়ী কমিটির
সদস্য নজরুল ইসলাম খান। নজরুল ইসলাম খান বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দীর্ঘদিন
তিনি বিএনপির সঙ্গে জড়িত। কোন সময় তার বিচ্যুতি দেখা যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে
দেখা যাচ্ছে যে, নজরুল ইসলাম খান এতোটা সক্রিয় নন। দায় সারা ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীতে
তিনি অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আগের মতো উদ্যমী হয়ে তাকে কর্মসূচীতে দেখা যায় না। নজরুল
ইসলাম খানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, যে ধারায় বিএনপি চলছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। আর একারণেই
হতাশা থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।
আব্দুল আওয়াল মিন্টু
আব্দুল আওয়াল মিন্টু বিএনপির একজন অন্যতম নীতি নির্ধারক হিসেবে
পরিচিত। বিএনপিতে তার সরব উপস্থিতি দেখা যেত। বিএনপির অন্যতম থিংক ট্যাংক হিসেবে তাকে
বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে আব্দুল আওয়াল মিন্টু আগের মতো
সরব নন। বিএনপির কর্মকান্ডেও তাকে খুব একটা দেখা যায় না। আব্দুল আওয়াল মিন্টুর সাথে
বিএনপির নেতৃত্বের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিশেষ করে, আর্থিক বিষয়
নিয়ে আব্দুল আওয়াল মিন্টুর সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের টানা পোড়নের গুঞ্জন শুনা যায়।
একারণেই বিএনপি থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।
(অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী
এয়ার ভাইস-মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ
নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএনপির আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন
করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কর্মকান্ডে তাকে খুব একটা দেখা যায় না। নিজেকে
তিনি একটু গুটিয়ে রেখেছেন। যদিও বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং আলংকরিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা
যায়। আলতাফ হোসেনের সমস্যা হলো বিএনপির লোকজনই তাকে খুব একটা পাত্তা দেন না। বিএনপি
নেতাদের তার প্রতি খুব একটা আগ্রহ নেই। একারণেই নিজেকে তিনি এখন গুটিয়ে রেখেছেন।
আব্দুল্লা আল নোমান
বিএনপির একসময়ের তুখোড় নেতা আব্দুল্লা আল নোমান-কে আগে বিভিন্ন
কর্মসূচীতে সরব দেখা যেত। এখন তিনি রুটিন কাজের বাইরে খুব একটা সরব থাকেন না। এর একটি
বড় কারণ হতে পারে অভিমান। তার চেয়ে অনেক জুনিয়র নেতাও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন।
এই কারণেই হয়তো নিজেকে তিনি আগের চেয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন।
ইশরাক হোসেন
ইশরাক হোসেন বিএনপির তরুণ তুর্কী হিসেবে পরিচিত ছিলো। বিভিন্ন সময়ে
তিনি সরব উপস্থিতির মাধ্যমে দলকে উজ্জ্বীবিত করেছিলেন। কিন্তু ইদানিং ইশরাককে খুব একটা
দেখা যায় না। সাদেক হোসেনের পুত্র ইশরাক হোসেন কেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন এটি বিএনপির
মধ্যে নানা রকম আলাপ আলোচনা চর্চা হচ্ছে।
তবে, বিএনপির নেতারা বলছেন, শুধু এই কয়েকজন নয় বিএনপির সর্বস্তরেই
এখন হতাশা বিরাজ করছে। কেউই আন্তরিকতার সাথে এবং উদ্যম নিয়ে দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ
করতে আগ্রহী নন। বরং সকলেই দায় সারা ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনী বিপর্যয়, ভুল
রাজনীতির কারণে, দলের মধ্যে হতাশার কারণেই এই নির্লিপ্ততা।
বিএনপি নজরুল ইসলাম খান আব্দুল আওয়াল মিন্টু (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী আব্দুল্লা আল নোমান ইশরাক হোসেন
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।