নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে প্রথম দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘেষণা করেছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত এই দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শুরু না হলেও এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমুল পর্যায়ে বিভেদ প্রকাশ্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের কোন ধরনের হস্তক্ষেপ রোধে কঠোর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক
দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এতে উপজেলায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করার সব প্রস্তুতি শুরু
করেছেন কিছু এমপি-মন্ত্রী। কেন্দ্রের নির্দেশনা না মেনেই তারা তাদের আত্মীয়স্বজনসহ
নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে উপজেলা পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন। এনিয়ে মাঠ পর্যায়ে
চরম অসন্তোষ দেখা গেছে।
উপজেলায় এমপিরা যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারেন সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাব ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু জায়গায় এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়নি। যতই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে, এমপি-মন্ত্রীদের ‘অযাচিত’
হস্তক্ষেপের স্বরূপ ততই বেরিয়ে আসছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনা চান, উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। সে জন্য এবার দলীয় প্রতীক
বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। সেই সুযোগে কিছু এমপি-মন্ত্রী তাদের পছন্দের লোকদের প্রার্থী
ঘোষণা দিয়ে রাখছেন। তারা চাচ্ছেন না এমন কেউ জনপ্রতিনিধি হোক যার সাথে তাদের
(এমপিদের) বিরোধ রয়েছে। যা ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে ঢালওভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। লিখিত অভিযোগে তারা জানান, তাঁর নির্বাচনি এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে আপন খালাতো ভাই ও নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ‘চেয়ারম্যান’ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। শুধু ড. আবদুর রাজ্জাকই নন, এমন ডজনখানেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা যায়। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ-প্রার্থী হতে না দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ।
এমপি-মন্ত্রীদের
হস্তক্ষেপ বন্ধে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল
কাদের সর্বশেষ গত ২ মার্চ এক বিবৃতিতে যারা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন
তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়াও ৩০ মার্চ রংপুর
বিভাগ, ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগ ও ৪ এপ্রিল খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও এ
বিষয়ে তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য
ডা. মোস্তফা জালাল
মহিউদ্দিন বলেন,
‘উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া
হবে না-দলীয়
সভানেত্রী সবাইকে
আগেই বলে দিয়েছেন। নেত্রী চান
বেশি প্রার্থী ভোটে
অংশ নিক। এতে
ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
কিন্তু আমরা ইদানীং
লক্ষ্য করছি কিছু
এমপি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করছেন। তারা
এটা করতে পারেন
না। দলের নির্দেশনা অমান্য করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ
নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে
আলোচনা করা হবে।’
আওয়ামী লীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন,
‘দলের সিদ্ধান্ত কাউকে মনোনয়ন বা
প্রতীক না দেওয়া।
সেক্ষেত্রে অবাধ
ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বার্থে এমপিরা
যেন কাউকে মনোনয়ন
না দেন আমরা
সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব। কারণ দলের
চেইন অব কমান্ড
আগে ঠিক রাখতে
হবে।’
আওয়ামী লীগের
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল
হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় সভানেত্রী চান
প্রভাবমুক্ত ও
উৎসবমুখর নির্বাচন। কিন্তু এ নির্বাচন প্রভাবিত করতে
কারোর হস্তক্ষেপই মেনে
নেওয়া হবে না।
মাইম্যান জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার করবেন- এটা মেনে
নেওয়া হবে না।’
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ ৮ মে এবং দ্বিতীয় ধাপ ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নির্বাচন কমিশন তফসিল এমপি-মন্ত্রীদের বিভেদ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।