নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১২ মে, ২০১৮
খুলনা নির্বাচনে উত্তেজনার পারদ এখন চরম সীমায়। শেষ মুহূর্তে মরিয়া প্রচারণায় ব্যস্ত প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। প্রচারণার চেয়ে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগই বেশি। আওয়ামী লীগ যেমন এই নির্বাচনে জিততে মরিয়া তেমনি বিএনপি জয়ের চেয়ে বেশি আগ্রহী নির্বাচনের ত্রুটি খুঁজতে। নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে তাই প্রশ্নে উঠেছে, খুলনা কি মাগুরা হবে?
১৯৯৪ সালে মাগুরা উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা হয়। সংসদে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও বিএনপি ঐ নির্বাচনে জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। করেছিল নজিরবিহীন কারচুপি আর ভোট জালিয়াতি। মাগুরা উপ-নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক কলঙ্কের মাইলফলক। ঐ নির্বাচন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জনপ্রিয়তা পায়।
আওয়ামী লীগ দুই মেয়াদে মোট ১৫ বছরে অনেকগুলো নির্বাচন করেছে। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারি ২০১৪’র নির্বাচনসহ বেশ কিছু নির্বাচন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু ঐ ত্রুটির কারণ শুধু আওয়ামী লীগ একা ছিল না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নির্বাচনকে একতরফা প্রহসনে পরিণত করে। এছাড়া অধিকাংশ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের প্রধান কারণ ছিল বিএনপির অংশগ্রহণ না করা। তবে, ক্ষমতায় থেকেও যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তার বড় উদাহরণ ২০১৩’র ৬ টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গত বছর কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন আর এবছর রংপুর সিটি নির্বাচন। এই তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছে শুধু নারায়ণগঞ্জে। আর ১৩ র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছয়টি নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল। এসব নির্বাচনে হেরে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে দলীয় সরকার কোনো বাঁধা নয়। তাই বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জনপ্রিয়তা পায়নি। কিন্তু খুলনার নির্বাচনে অন্য রকম আওয়ামী লীগকে দেখা যাচ্ছে। জয়ের জন্য মরিয়া আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খুলনার প্রশাসন স্পষ্ট দ্বিধা বিভক্ত। রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে সিভিল প্রশাসন বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল এমন অভিযোগ করেছে খোদ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বলেছে, খুলনার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। অন্যদিকে, বিএনপি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছে। সর্বশেষ তারা সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের মতো অবাস্তব দাবি তুলেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, খুলনাকে বিএনপি আন্দোলনের প্লাটফরম বানাতে চায়। জয়ের চেয়ে এই নির্বাচনের ত্রুটি খুঁজতেই ব্যস্ত বিএনপি। বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গেই কথা বলে মনে হয়েছে, বিএনপি খুলনায় জয়ের চেয়ে হারতে আগ্রহী। কারণ, এই নির্বাচনে হারলে, আন্দোলনের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে বলে বিএনপির ধারণা। সেই আন্দোলনে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিকেও যুক্ত করতে পারবে বলে মনে করছে। বিএনপি যেমন হারতে চায়, তেমনি খুলনায় যেকোনো মূল্যে জিততে চায় আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় মনোবল চাঙ্গা করতে এই নির্বাচনে জয়ের বিকল্প নেই বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু জিততে গিয়ে আওয়ামী লীগ কি শুধু জনগণের ভোটের উপর নির্ভর করবে না, অন্য কিছুর আশ্রয় নেবে? সে এক বড় প্রশ্ন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এক শাঁখের করাতের মধ্যে পরেছে। নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হয় তাহলে বিএনপি বলবে কারচুপি হয়েছে। আর হারলে বলবে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন- এই নির্বাচন কি মাগুরা হবে? এটা বোঝা যাবে ১৫ মের পর।
Read in English- https://bit.ly/2KTJnme
বাংলা ইনসাইডার/ জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।