নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৯ মে, ২০১৮
গল্পটা প্রথম বলেছিলেন প্রয়াত জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী। নানা ভাবে কাঁটছাঁট করে এই গল্পটা এখনো বিএনপির নেতা বুদ্ধিজীবীরা বলেন। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের। জিয়া তখন সামরিক একনায়ক। রাষ্ট্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তার বড় ছেলে তারেক রহমান ৭ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণীতে উঠতে এক বিষয়ে ফেল করেছে। প্রোগ্রেস রিপোর্টে বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ফলাফল পত্র দেখলেন সামরিক একনায়ক। তারপর নিজেই গেলেন স্কুলে, সঙ্গে স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, অন্য শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কি করতেন? প্রধান শিক্ষক উত্তর দিলেন সে ফেল করতো এবং তাঁকে আমরা স্কুলে রাখতাম না। জিয়া তখন বললেন, অন্যদের ক্ষেত্রেও যা করেন, আমার ছেলের ক্ষেত্রেও তাই করবেন।
গল্পের এটুকু সবাই জানে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি যেমন সত্যকে বিকৃত করা বা অর্ধসত্য বলা, তেমনি এই গল্পটিকেও বিকৃত করা হয়েছে। যে গল্পটি জেনারেল মীর শওকত আলী লিখেছিলেন ৮০’র দশকে আনোয়ার শাহাদাত সম্পাদিত ‘আসে দিন যায়’ শিরোনামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়।
জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনা এরকম, ‘ছেলের ফেলের খবর শোনার পর ক্ষুব্ধ জিয়া বলেছিলেন, আপনারা কি পড়ান যে ছেলে ফেল করে?’ জবাবে প্রধান শিক্ষক তারেক রহমানের ফাইল বের করে জিয়াকে দেখান। এর আগে ত্রৈমাসিক পরীক্ষাতেও সে ফেল করেছে। ক্লাস টেস্টেও ফেল করেছে। প্রধান শিক্ষক বললেন, আমরা গার্জিয়ানকে চিঠিও লিখেছি। আপনি সেটা দেখে স্বাক্ষরও করেছেন। আমরা আর কি করবো? প্রধান শিক্ষকের কথা শুনে জিয়া আরও রেগে গেলেন। আপনারা চিঠি দিয়েছেন আর আমি দেখে স্বাক্ষর করেছি। কোথায় দেখান? প্রধান শিক্ষক নাছোড়বান্দা, ফাইল থেকে চিঠি বের করে দেখালেন। জিয়াউর রহমান দুই অক্ষরে স্বাক্ষর করতেন। তিনি দেখলেন, চিঠিতে সিন লেখা এবং অবিকল তাঁরই স্বাক্ষর। জিয়া তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকালেন, ম্যাডামের মাথা নিচু হলো। স্কুল থেকে বেরিয়ে তিনি বাসায় গেলেন। তারেককে ডাকলেন। ঘটনাচক্রে সেদিন আমি একটা জরুরি ফাইল নিয়ে তাঁর বাসায় যাই। জিয়া আমাকেও বসতে বললেন। ম্যাডাম এবং তারেক দাঁড়িয়ে। জিয়াউর রহমান সাহেব উত্তেজিত। আমাকে দেখে ম্যাডাম যেন সাহস পেলেন। বললেন, ‘বাচ্চা মানুষ ভুল করেছে। মাফ করে দাও, আর করবে না।’ এবার জিয়া গর্জে উঠলেন, বললেন, ‘সাট আপ। চোরের মায়ের বড় গলা।’ এরপর বিচার চলল। তারেক স্বীকার করলো যে, বাবার ভয়ে সে নিজেই জিয়ার স্বাক্ষর জাল করে স্কুলে জমা দিয়েছে। জিয়া ম্যাডামকে বললেন, ‘ছেলেকে সামলাও, ঠিক করো। না হলে এই ছেলে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে।’
কাল জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী। জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন এই লেখায় জিয়ার ভবিষ্যতবাণী মিলে যাওয়া দেখেই লেখার অবতারণা। জেলে থাকায় স্বামীর কবরে যেতে পারছেন না বেগম জিয়া। সপ্তম শ্রেণীতে জালিয়াতি করে পিতার হাতে ধরা পড়া তারেক এখন দুর্নীতির বরপুত্র। দুটি মামলায় ১৭ বছরের জেল হয়েছে। লন্ডনে পালিয়ে আছেন। তাঁর মা জেল খাটছেন পুত্রের অপকর্মেই। নিজের ছেলে সম্পর্কে জিয়া ১৯৮০ সালেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, ৩৮ বছর পর তা কি অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।