নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ০২ জুন, ২০১৮
যিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন থেকে তিনি নিয়মিত হবেন। দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ডেকে দলের কার্যক্রমে সক্রিয় হতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপর প্রায় এক মাস হয়ে গেল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নীরবতা ভাঙেননি। আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আবার লোকচোক্ষুর আন্তরালে চলে গেছেন। শুধু দলীয় কর্মকাণ্ডেই নয়, মন্ত্রণালয়ের কাজেও তিনি অনুপস্থিত। কেউ জানে না সৈয়দ আশরাফ কি করছেন?
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যেমন চার জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। তেমনি তানজিম আহমেদ সোহেল তাজও শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের সন্তান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু তারপর কি হলো, তিনি পদত্যাগ করলেন প্রথমে মন্ত্রিত্ব থেকে, তারপর সংসদ সদস্য পদ থেকে। এরপর তিনি চলে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা কিছু বলে ঝড় তোলেন তারপর আবার উধাও হন। মাঝে মাঝে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দেশে এসেও একটা কিছু বলে হুলস্থুল করে চলে যান।
এই দুইজনই আওয়ামী লীগের দু:সময়ের কাণ্ডারী। চার নেতার সন্তান হবার কারণে এদের দুজনের প্রতিই প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্য স্নেহ। দুজনই আওয়ামী লীগের বাইরে সাধারণ জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এরা দুজনই তাদের সবটুকু উজাড় করে দলকে দেন না। কেন? সে প্রশ্ন আওয়ামী লীগের অনেকের। এখন নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, এই দুইজন কি আওয়ামী লীগের উপকার করছেন, নাকি ক্ষতি করছেন?
ক্ষতি কথা আসছে এজন্য যে, এরা দুজনই আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত। তাঁদের পিতারা আওয়ামী লীগকে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এই দুই নেতা আর যাই করেন, বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না কখনো, এটা সবাই জানে। অথচ, তারাই যখন গুটিয়ে থাকেন বা আড়ালে চলে যান, তখন দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে, তাহলে কি দল ঠিকমতো চলছে না, তারা কি হতাশা থেকে বা রাগ করে সব কিছু থেকে দূরে আছেন। বিশ্বস্তদের কি তাহলে আওয়ামী লীগে মূল্যায়ন নেই? তৃণমূলের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে যান। কিন্তু তাঁদের নীরবতায় সব চেয়ে সমস্যা হয় সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।
সাধারণ নাগরিকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সঠিক পথে নাই জন্যই সৈয়দ আশরাফ, সোহেল তাজরা দূরে। তাঁরা সৎ, তাই তাঁরা সব কিছু মেনে নিতে পারছেন না ইত্যাদি নানা ধারণা এবং গুজব আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ মনে করে, আওয়ামী লীগ বদলে গেছে।
অথচ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দুজনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। তাদের পিতাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করাই তাঁদের কাজ। তাই ধূমকেতু না হয়ে তাঁদের উচিত দলের জন্য সত্যি সত্যি কাজ করা। নিজের ইমেজকে দলের জন্য ব্যবহার করা। দলের জন্য সত্যিকার অর্থে অবদান রাখা। কেবল দুএকটা কথা বলে নেতা-কর্মীদের হতাশ করা কি তাঁদের উচিত?
Read in English- https://bit.ly/2HbCQAd
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন