নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৭ জুলাই, ২০১৮
জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা যত বাড়ছে, নির্বাচন নিয়ে ততই মত-ভিন্নতা বাড়ছে বিএনপিতে। ইতিমধ্যেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে তিনটি মত দেখা গেছে।
নির্বাচন নিয়ে প্রথম পক্ষটি বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যালঘু হলেও তৃণমূলে তাঁরা তুমুল জনপ্রিয়। এই পক্ষটির মতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয়। তাঁদের মতে, এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বেগম জিয়াকে মুক্তি ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে বর্তমান সরকারকে শুধুই বৈধতা দেওয়া। এই নির্বাচনে বিএনপি যদি যাবেই তাহলে ২০১৪ তে কেন নির্বাচনে গেল না। ওই সময় পরিস্থিতি তো আরও ভালো ছিল। এই মতের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে গেলেই এই সরকার বৈধতা পাবে আর বিপন্ন হয়ে পড়বে বিএনপির অস্তিত্ব। জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান এই মতাদর্শী।
বিএনপির মধ্যে দ্বিতীয় মতটি হলো, খালেদা জিয়ার মুক্তি, জামিন অথবা কারাগারে থেকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেই বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। দ্বিতীয় মতাদর্শীদের আশা নির্বাচনের আগে আপোষের অংশ হিসেবেই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে বা তাঁকে প্যারোল দেওয়া হতে পারে অথবা কারাগারে থেকেই তিনি নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। বেগম জিয়াকে নির্বাচনের সুযোগ দিলেই কেবল নির্বাচনে যাওয়া উচিত বিএনপির। দ্বিতীয় পক্ষের মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তি, প্যারোল বা জেলে থেকে নির্বাচন করলেও অন্যরকম একটি আমেজ তৈরি হবে। জনপ্রিয়তার বাড়বে বিএনপির। আর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই বিএনপি নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারবে। এর ফলে খালেদা জিয়ার মামলা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিএনপির অনুকূলে নেওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয় পক্ষের মতে, খালেদা জিয়া যদি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারেন তাহলে বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে যাওয়া। এই মতাদর্শীদের মধ্যে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আর তৃতীয় মতাদর্শীরা যেকোনো পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের পক্ষে। তৃতীয় মতে থাকা বিএনপি নেতাদের মতে, বেগম জিয়ার আপাতত মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এবারের নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়ার দীর্ঘ কারাবাস নিশ্চিত হবে। তাঁদের মতে, এই মামলাই তো শেষ নয়, আরও অনেক মামলা আছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে না যেতে পারলে বাকি মামলাগুলোতেও দণ্ডিত হতে পারেন বেগম জিয়া। আর তেমনি ঘটলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিএনপি। আর এবার নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধনই বাতিল হবে বিএনপির। সবদিক থেকেই চাপের মুখে পড়বে দল। তৃতীয় পক্ষের মতে, এবার আর যাই হোক ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হবে না। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও অনেক দলই অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হবে বিএনপির। তাই তৃতীয় পক্ষের মত হলো, সিটি করপোরেশনে বিএনপি যেমন অংশ নিচ্ছে, তেমনি দেশে যে পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতেই হবে। জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই মতের সবচেয়ে বড় সমর্থক।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নির্বাচন প্রশ্নে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বিএনপি যদি ঐক্যমতে না আসতে পারে তাহলে দলটিতে ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে পড়বে। শুধু নির্বাচন প্রশ্নের যে বিএনপিতে ভাঙ্গন হতে পারে সে বিষয়ে সব বিশেষজ্ঞই একমত। তবে বিএনপিতে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তারেক জিয়ার উপর। কারণ বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব ও তৃণমূল তারেকের নিয়ন্ত্রণে বলেই ধারণা করা হয়। তাই তারেক জিয়া শেষ পর্যন্ত যে মত দিবে তাই গ্রহণ করবে তৃণমূল ও তরুণ নেতৃত্ব।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লন্ডনে পলাতক বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার ইদানীংকালের সিদ্ধান্তগুলো তৃতীয় শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই তৃতীয় শক্তির মধ্যে আছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আরও আছে পলাতক যুদ্ধাপরাধীরা। তাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা এই সিদ্ধান্ত বিএনপি নেবে না, নেবে তারেক জিয়া। অপর কথায়, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসবে আইএসআই এবং যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।