নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ৩০ জুলাই, ২০১৮
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটির নির্বাচন। বর্তমান সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন নির্বাচনে অক্ষম, এমনটা প্রমাণ করতেই তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি এমন আলোচনা অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছিল। বিএনপি যা প্রমাণ করতে চেয়েছে তা অনেকটাই আজকের সিটি নির্বাচনে প্রমাণ করতে পেরেছে তাঁরা। কিন্তু বিএনপির মনের ইচ্ছা পূরণ হলো খুবই নোংরাভাবে।
আজ সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিন সিটি থেকেই ভোট কারচুপি, জাল ভোট, কেন্দ্র দখলের মতো অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগগুলো যে কোনো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করতে যে বিএনপি নিজেই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে তা সামনে চলে আসায় বিষয়টি কদর্য রূপ ধারণ করেছে।
ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার মাত্র ঘন্টা চারেক পরই এক সংবাদ সম্মেলন করে বরিশাল সিটি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের প্রতি ভোট কারচুপি, জালভোট ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। অথচ সকালে বাড়ির পাশে নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করা সৈয়দা মজিদুন্নেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে জানান নিজের ভোটার নাম্বার জানেন না তিনি। এরপর সেই কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তিনি ভোট না দিয়েই বেরিয়ে যান। তারপর এক সময় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন সরোয়ার। সরোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে আরও তিনটি দলও বরিশাল সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। তিন দলসহ নির্বাচন বর্জনই বরিশাল সিটি নির্বাচন থেকে বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে নগরীর একটি ভোটকেন্দ্রে নারী নিরাপত্তা কর্মীকে লাঞ্ছিত করেছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আজ সোমবার সকালে বিএনপির পক্ষে এক নারীকে জাল ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মোসাদ্দেক হোসেন বুলুবুল ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক নারী আনসার কর্মীর সঙ্গে চেঁচামেচি করছেন ও দুর্ব্যবহার করছেন। ‘বি কেয়ারফুল’ বলেও ওই নারীকে হুমকি দেন তিনি। এক নারীকে বারবার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দিলে এমন রুদ্রমূর্তিতে অবতীর্ণ হন বুলবুল। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ভোটও দেননি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সরকারের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য তিনি ইসলামীয়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। ওই কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়ে গেছে এমন অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন তিনি। ব্যালটের হিসাব না পেলে সেখান থেকে যাবেন না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমকর্মীদের। যদিও পরর্তীতে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন তিনি। এমন সব নাটকীয় কর্মকাণ্ডই দিনব্যাপী করেছেন রাজশাহী সিটিতে বিএনপির এই প্রার্থী।
আবার সিলেটে দেখা গেছে, নৌকা, নৌকা স্লোগান দিয়ে কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষে সিল মেরেছে একদল যুবক। নগরীর কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের এই ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।
আর এই তিন সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থীই নিজেদের সংবাদ সম্মেলনে বারবার বলেছে, সরকারের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এতে এক ধরনের আত্মশ্লাঘাই বোধহয় বোধ করেছেন তাঁরা।
এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলা যায়, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ এমনটা আংশিক ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হলেও এই ব্যর্থতা সৃষ্টিতে নিজেদের নেতাকর্মীদের ‘অবদানের’ কথা প্রকাশ্যে চলে আসায় সরকারকে বিব্রত করার স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হয়নি বিএনপির। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাঁদের এই কর্মকাণ্ড বিএনপির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।