নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৬ এএম, ০৪ অগাস্ট, ২০১৮
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন সেলিমা ইসলাম এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুন আহমেদসহ পাঁচজন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি দাবি করে আসছিল খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং তাঁর সুচিকিৎসা প্রয়োজন তাই ধারণা করা হচ্ছিল পরিবারের সদস্যরা তাঁর অসুস্থতা নিয়েই আলোচনা করবেন। কিন্তু গতকালের সাক্ষাতে এমন কিছু ঘটেনি। বরং নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সেলিমা ইসলাম এবং ডা. মামুন আহমেদ উভয়ই খালেদা জিয়াকে চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনের ফিরিস্তি দিয়েছেন। কোন মন্ত্রীকে কীভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, কোথায় কী নাশকতা বা গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। এসব শোনার সময় খালেদ জিয়াকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল এবং তিনি বারবার ঘটনার বিশদ বিবরণ শুনতে চাচ্ছিলেন।
অথচ বেশ কয়েকদিন ধরেই বিএনপি দাবি করছিল খালেদা জিয়া অসুস্থ কিন্তু সরকার তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অনেক নেতা বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানোর দাবি করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি যে আলোচনাটি একজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় হওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল। এমনকি সাক্ষাৎ শেষে দেখা করতে আসা পাঁচজনকে খালেদা জিয়া বিদায় দিতে অনেক দূর এগিয়ে যান এবং আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করে পরবর্তীতে আবার সাক্ষাৎ করতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া তিনি অনুযোগ করে বলেন, জেলখানায় তাঁর কক্ষে একমাত্র বিটিভি চালু আছে আর বিটিভিতে এই আন্দোলনের কোনো খবরই দেখানো হয় না।
খালেদা জিয়ার হাবেভাবে স্পষ্ট, আসলে তিনি তেমনভাবে অসুস্থই নয়। কারণ অসুস্থ অবস্থায় একজন মানুষের পক্ষে উৎফুল্ল হওয়া বা নাশকতার সংবাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকাটা একটি বিস্ময়কর ঘটনা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন