নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২০ অগাস্ট, ২০১৮
মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে গতকাল রোববার রাতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিনের বিভেদ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। আজ সোমবার বিকেলেও তাঁদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজকের বৈঠকে সেই ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন। ঈদের পরে এই বিষয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করারও কথা রয়েছে তাঁদের।
ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীর মধ্যকার এই ঐক্য প্রক্রিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে সতর্ক করেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বরে। আর জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের জন্য দুইটি দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী আছে অন্তত ৯০০ জন করে। এই প্রার্থীরা সবাই মোটামুটি ডাকসাইটে প্রার্থী। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মো. সোহরাব উদ্দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভালো ক্যান্ডিডেট, পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ ভালো ক্যান্ডিডেট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হকও ভালো ক্যান্ডিডেট। আবার কুমিল্লা-৭ আসনে অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত কিংবা শহীদুর রহমান সবাই ভালো ক্যান্ডিডেট। এরকম প্রত্যেকটি সংসদীয় আসনেই সম্ভাবনাময় ক্যান্ডিডেট আছেন যারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন। এরা প্রত্যেকেই নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, বিএনপিতেও একই অবস্থা। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে ৬০০ জন মনোনয়ন পাবেন না তাঁদেরকে দলে ভেড়ানোর কাজ করবে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর নতুন দল। এই দুই নেতার নতুন দলের মূল লক্ষ্য হবে এটাই।
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভালো যোগাযোগ আছে। মাহামুদুর রহমান মান্নারও যোগাযোগ আছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে। এরা আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী নিয়ে আসতে পারবে। আর বি. চৌধুরী ছিলেন বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট। এখনো বিএনপির সঙ্গে তাঁর খুব ভালোই যোগাযোগ আছে। বিএনপি ছেড়েই নতুন দল গঠন করেছেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাই বিএনপির মনোয়নবঞ্চিতদের দলে ভেড়ানো বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জন্য কঠিন হবে না। এছাড়া আবার বিএনপির প্রার্থীদের তারেক জিয়া মনোনয়ন দেবেন। ফলে যারা টাকাপয়সা দিতে পারবে না এমন অনেক সম্ভাবনাময় ক্যান্ডিডেট বাদ পড়ে যাবেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতৃত্বের একটা অংশ বিএনপির দুর্নীতি-অপরাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এই নেতারাও জাতীয় ঐক্যে যাবেন।
এসব কারণে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই এই ঐক্য নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এই নতুন ঐক্য কার ভোট ব্যাংকে হাত দেবে তাই নিয়ে ভাবছে দেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল।
ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর দল নির্বাচনে জিতবে না সেটি সবাই জানে কিন্তু এই ঐক্যের ফলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা দল ত্যাগের প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাবেন যা আওয়ামী লীগ, বিএনপির দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া এই ঐক্যের পেছনে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে যা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ভালো চোখে দেখছে না।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির মধ্যে যতই রেষারেষি থাক রাজনীতির ময়দানে তৃতীয় শক্তির উত্থানে দু দলেরই আপত্তি রয়েছে যেটি ওয়ান ইলেভেন এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে। তাই লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া টেলিফোন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সতর্ক করে দিয়েছেন পর্যবেক্ষণ না করে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীদের সঙ্গে মেলামেশা না করার জন্য। আওয়ামী লীগও সাম্প্রতিক সময়ে ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী বিরোধী একটি অবস্থান নিয়েছে।
ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর নতুন ঐক্য ক্ষমতায় আসতে পারবে না সেটি সর্বজনবিদিত। কিন্তু এই ঐক্য ক্ষমতায় রদবদলের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কার পক্ষে ভূমিকা রাখবে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর নতুন ঐক্য, এটিই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের বড় প্রশ্ন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।