নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় ঐক্য গঠন করেছেন যুক্তফ্রন্ট প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত দুই মিত্রের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু আগ্রহ জাগানিয়া মিল আছে। আবার দুজনার মধ্যে অমিলও অনেক।
প্রথমেই বি. চৌধুরী ও ড. কামালের মধ্যে মিলগুলো আলোচনা করা যাক। বি. চৌধুরী ও ড. কামাল দুজনই পেশাগত জীবনে খ্যাতির শিখরে উঠেছেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী। যুক্তফ্রন্ট সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীও পেশাগত জীবনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক। এই দুই রাজনৈতিক মিত্রের আরেকটি মিল হচ্ছে, তাঁরা দুজনই রাজনীতিতে এসেছেন নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতাদের হাত ধরে। ড. কামাল কখনোই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুই ড. কামালকে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী বানান। বি. চৌধুরীও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তিনি টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে জিয়াউর রহমান তাঁকে বিএনপির রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে আরেকটি মিল হলো, তাঁদের নেতাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় দুজনের ভূমিকাই ছিল রহস্যময়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ড. কামাল অজ্ঞাত কারণে বিদেশে চলে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী হিসেবে ড. কামাল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা কোনো প্রতিবাদও করেননি। আবার জিয়াউর রহমান যখন চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নিহত হন, বি. চৌধুরী তখন সেখানেই ছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় বি. চৌধুরীর ভূমিকা কী ছিল বিএনপির মধ্যেই অনেক প্রশ্ন অনেক, রহস্য রয়েছে।
এই দুজনের মধ্যে মিলের এখানেই শেষ নয়। তেমনি আরেকটি মিল হলো, দুজনই যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা নির্বাচনে ভালো করেছেন। কিন্তু যখনই তাঁরা এই দুটি দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন তখনই তাঁদের জামানত থাকেনি। ‘৯১ সালের পর কামাল হোসেন দুবার বাইরে থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জামানত হারিয়েছেন। আর ২০০৮ এর নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন বি. চৌধুরী। দুজনের মধ্যে আরেকটি মিল হলো, ড. কামাল ও বি. চৌধুরী দুজনকেই খুব দুঃখজনকভাবে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে নিজ নিজ দল থেকে বিতাড়িত করা হয়। পরবর্তীতে ড. কামাল গণফোরাম ও বি. চৌধুরী বিকল্পধারা নামে দুটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দুজনের কেউই এক্ষেত্রে সফল হতে পারেননি। এটিও দুজনের মধ্যে আরেকটি মিল।
এতগুলো মিল থাকলেও ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে বেশ কিছু অমিলও আছে। প্রথম অমিলটি হচ্ছে ড. কামাল কোনো বিপদের আভাস পেলে বাইরে চলে যান। আর বি. চৌধুরী বিপদ হলে ঘরের মধ্যে বসে থাকেন, কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলেন না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বি. চৌধুরী হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি মানুষকে আপ্যায়ন করেন এবং মিষ্টভাষী হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু ড. কামাল হোসেন পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে রূঢ়। মানুষের সঙ্গে প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের মধ্যে আরেকটি অমিল হচ্ছে বি. চৌধুরী নিজের রাজনৈতিক অবস্থানে স্বচ্ছ। তিনি যা বলেন স্পষ্ট করে বলেন। কিন্তু কামাল হোসেন রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে অস্বচ্ছ। তিনি কী চান বা বলেন তা কখনো স্পষ্ট করেন না।
ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে প্রচুর মিল-অমিল রয়েছে। তাঁদের জাতীয় ঐক্য গঠনের সূত্র ধরে এই মিল-অমিলগুলো নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ভালোই আলোচনা চলছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।