নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
‘শুধু ছাত্রলীগই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই আশাবাদী ডাকসু নির্বাচন এবার আলোর মুখ দেখবে। ছাত্রলীগ সব সময় এটা চায় নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করুক, তাদের অধিকারের কথা বলুক, তাদের নৈতিক দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলুক, পাশে দাঁড়াক।’
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের মার্চে ডাকসু নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান সময়ের দেশের অন্যতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্রলীগের কি ভাবনা ও উদ্যোগ সেই বিষয়ে জানতে কথা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত কথাগুলো তিনিই বলেন। নিম্নে বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
বাংলা ইনসাইডার : ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া কি?
গোলাম রাব্বানী : শুধু ছাত্রলীগই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই আশাবাদী ডাকসু নির্বাচন এবার আলোর মুখ দেখবে। ছাত্রলীগ সব সময় এটা চায় নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করুক, তাদের অধিকারের কথা বলুক, তাদের নৈতিক দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলুক, পাশে দাঁড়াক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভায় অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে তেরটি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি উপস্থিত ছিল এবং আমরা অনেক শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে কথা বলেছি, মতামত দিয়েছি। ঐ সভায় সকল আবাসিক হলের প্রভোস্টগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার, প্রোভিসি ম্যাম উপস্থিত ছিলেন। চার ঘণ্টা ব্যাপী এ মিটিং-এর জিস্ট ছিল সবাই ডাকসু নির্বাচন চায় এবং শিক্ষার্থীর দাবি পূরণে কাজ করতে চায়।
ছাত্রদল ঢাবি ক্যাম্পাসে বর্তমানে নিষ্ক্রিয়, তারা কেন ক্রিয়াশীল দলের অন্তর্গত?
ছাত্রদল নিস্ক্রিয় কিভাবে? তারা তো জ্বালাও-পোড়াও এ সক্রিয়। আর তাদের কেন ক্রিয়াশীল দলের মধ্যে রাখা হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। আমাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছে, তারাও চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রিত। ডাকসু যেহেতু একটি বড় প্লাটফর্ম সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো মনে করেছে, ছাত্রদলকে যদি বাদ দেয়া হয় তবে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটা অবশ্য আমার ধারণা। আমি এর নীতি নির্ধারক নই। আমি একজন ছাত্র প্রতিনিধি, এ বিষয়ে ভিসি স্যার এবং প্রোক্টর স্যার ভালো বলতে পারবেন।
ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ফিরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপুর্ণ পরিবেশ কি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?
এ বিষয়ে গত মিটিং-এ কথা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহত করা হয়েছে। ছাত্রদল যেন তাদের অতীত কুকর্ম মানে জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতি চর্চা কিংবা সরকার বিরোধী গুজব ও অপপ্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্রলীগ তৎপর রয়েছে। সর্বশেষ দু’টি আন্দোলনে তাদের কেন্দ্রীয় যেভাবে গুজব ও অপপ্রচার চালিয়েছে তাতে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও নেই। তাদের এ সাম্প্রতিক আচরণ থেকে এটা প্রতীয়মান যে তারা তাদের সহিংসটার রাজনীতি থেকে বের হতে পারবে না। তবে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশে আছে। কেননা, ছাত্রলীগ সর্বদা মানুষের অধিকারের কথা বলে, গণমানুষের নিরাপত্তার কথা বলে।
ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতাই তো বয়স্ক, তারা কি ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে?
ছাত্রদলের অধিকাংশই অনিয়মিত ও অছাত্র। নিয়মিত ছাত্র ছাড়া কেউই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে না। শিবির ও ছাত্রদল এখন একে অন্যের পরিপূরক। তাদের রাজনৈতিক আচার-আচরণও এখন এক। আমরা মিটিং-এ তাদের সামনেই তাদের জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতির কথা উল্লেখ করেছি। এমন রাজনৈতিক চর্চা ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানানো হয়েছে তাদের। ছাত্রদল যদি শিবিরকে পরিত্যাগ করে এবং তাদের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না নিশ্চয়তা দিয়ে প্রমাণ প্রমাণ করতে পারে তবে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কি?
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে ডাকসুর ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের একাধিক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর ভিপি-জিএস ছিলেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। আমরা আশাবাদী ছাত্রলীগ মাঠে কাজ করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভালবেসে তাদের মন জয় করে নির্বাচনে অংশ নিবে।
ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরে কেন?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই সবগুলো হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্বাচনের ব্যবস্থা এতো দ্রুত করা সম্ভব না। এছাড়াও ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রক্রিয়া শেষ হতেও সময় লাগবে। সেইসঙ্গে, কারা ক্যাম্পাসের নিয়মিত ছাত্র, কারা প্রার্থী হতে পারবেন, এগুলো যাচাই-বাছাইের কাজ কোন ভাবেই এতো দ্রুত সম্ভব হতো না। ইতিপূর্বে আমাদের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে নব্বই-এর নির্বাচনকে ঘিরে। ভোটার তালিকা করতেই দুই বছর সময় লেগেছে। আমরা এ তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা চাই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকার হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন হোক এবং মার্চের মাঝামাঝি ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্যই জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন। এটা আমাদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি পারে তবে আমরা তাতে ওয়েলকাম জানাবো।
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রলীগের প্রত্যাশা কি?
আমাদের শুধু একটাই প্রত্যাশা, শুধুমাত্র নিয়মিত ছাত্ররাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যারা ইভিনিং-এর ছাত্র, পাশাপাশি যারা এখানে বিভিন্ন কোর্স করছে তারা নয় বরং যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেছে শুধুমাত্র তারাই যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচনে আসুক ছাত্রলীগের চাওয়া এটাই। আমাদের নিয়মিত ছাত্রদেরই আমরা নেতৃত্বে দেখতে চাই। এর আগে মাহমুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ডাকসুর জিএস হয়েছিলেন। আমরা এর পুনরাবিত্তি চাইনা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কি?
২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে ছাত্রলীগের যে নতুন কমিটি এসেছে ইতিমধ্যেই তারা তাদের পজিটিভ কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক ধারার বার্তা সারাদেশে পৌছিয়ে দিয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ছায়াতলে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বর্তমানের ছাত্রলীগ ইতিবাচক ধারার। এখন আমাদের সকল পদক্ষেপই নির্বাচনমুখী। আমাদের প্রথম পদক্ষেপই ছিল ছাত্রলীগের ইতিবাচক ইমেজ সাধারণ মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা। আর এ বিষয়ে আমারা অনেকটাই সফল। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো এবং ছাত্রলীগ এখন ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করতে শুরু করেছে তা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও গণমানুষের পাশে আছি এ বার্তা অনেকের মাঝে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়নের ধারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এই বার্তা গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রচার-প্রচারণা অতীতেও ছিল, আগামীতেও থাকবে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল পদক্ষেপই হবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না। আচরণবিধি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারসহ কোনো ধরনের নির্বাচনি কাজে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে নির্বাচন কমিশনে। মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি মাঠ রয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারে অনেকেই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। প্রার্থীদের অভিযোগ-নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না। কমিশন তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি, খুনোখুনি, কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা। এ নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপের নির্বাচন ৮ মে। এ ধাপে ভোট হবে ১৪৮ উপজেলায়। আজ দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২১ মে এ ধাপে ১৫৯ উপজেলায় ভোট। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ১১২ উপজেলায় ভোট। সর্বশেষ চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন।
অনেকের অভিযোগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের চাপ আসছে। আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকিধমকি ও চাপ দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে এ শঙ্কার কথা জানান তাঁরা। নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইসিকে বলেছেন, দলীয় কোন্দল ও মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার ঠেকানোই এ নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে কোথাও কোথাও সংঘাতের আশঙ্কার কথাও বলছেন তাঁরা।
তবে এ বিষয়ে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভোটারদের বাধাগ্রস্ত করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল হবে। এবারের নির্বাচন প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনে বিরোধী দল নেই। বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। আসলে এটা নির্বাচন নির্বাচন খেলা। তবে নির্বাচনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জনগণের অনুপস্থিতি। নির্বাচন হচ্ছে প্রভাবমুক্ত হয়ে বেছে নেওয়া। কিন্তু এ নির্বাচনে প্রভাবমুক্ত হয়ে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। আসলে এটা নির্বাচন নয়, মূলত প্রতিযোগিতা।’ এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইমামুল হক সাগর বলেন, ‘জাতীয় কিংবা স্থানীয় সব নির্বাচনেই পুলিশের বিশেষ কিছু দিকনির্দেশনা থাকে। এবারও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর যারাই নির্বাচন ঘিরে অপরাধমূলক কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
শাজাহান খানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : মাদারীপুরে উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে ডিসির ব্রিজ এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক খান তাঁর নির্বাচনি অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। তিনি মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শফিক খান অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে আসিবুর রহমান খান। শাজাহান খান তাঁর ছেলেকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ওপর খবরদারি করছেন। কালো টাকা বিলির মাধ্যমে ভোট কেনার চেষ্টা, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ শফিক খানের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।
শফিক খান বলেন, নির্বাচন কমিশনে ১৫টি অভিযোগ দিলেও সে বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন। তিনি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা এবং ইলেকটোরাল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আবেদন জানান নির্বাচন কমিশনের কাছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আসিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শাজাহান খান এলাকায় থাকলেও তিনি নির্বাচনি কাজে অংশগ্রহন করছেন না।’ শাজাহান খান নিজেও তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই নির্বাচনি কাজে অংশগ্রহণ করিনি। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছে : লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে মেয়র আবদুল মালেক একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।
সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী ও দলীয় প্রার্থী পরিচয় দেওয়ায় তাঁকে কারণ দর্শনোর নোটিস দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। ২৪ ঘণ্টার মধ্য তাঁকে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়ার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নওয়াবুল ইসলাম বলেন, ‘সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরী দলীয় প্রার্থী পরিচয় দিয়ে প্রচার করতে পারেন না। তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এ নির্বাচনি আচরণবিধি অঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানো চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।’ এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সিরাজগঞ্জে সহিংসতা : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি ও কাজিপুর উপজেলায় ৮ মে ভোট। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে বাগ্যুদ্ধ, হামলা এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নিজ দলের কর্মীদের রক্ত ঝরানো শুরু হয়েছে। রবিবার রাতে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান বদি ফকিরের কর্মীরা অন্য প্রার্থী বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের দৌলতপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেকান্দার মার্কেটে নির্বাচনি প্রচার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকিধমকি দেওয়া হচ্ছে।
ভোটারদের বাধাগ্রস্ত করলে সাত বছরের জেল : নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভোটারদের বাধাগ্রস্ত করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল হবে। এবারের নির্বাচন প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন নির্বিঘ্নে। ভোটে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনি আচরণবিধি ও মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাচনে এবারই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্য থাকবে। কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্যসহ ছয়জন অস্ত্রধারী সদস্য থাকবেন। এর আগে কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত বেশি সদস্য ভোট কেন্দ্রে ছিলেন না। একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমাদের ভোট কেন্দ্রের জন্য আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে পরিমাণ সদস্য ছিল, সেটা যথেষ্ট পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রতিটি স্বাভাবিক কেন্দ্রে অস্ত্রসহ তিন পুলিশ, অস্ত্রসহ আনসারের পিসি ও এপিসি থাকবেন তিনজন। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রধারী ছয়জন সদস্য থাকবেন। প্রতিটি বুথ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বনিম্ন ১০ জন আনসার সদস্য থাকবেন ও ছয়টির বেশি বুথ আছে এমন জায়গায় একজন করে অতিরিক্ত আনসার সদস্য থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় অস্ত্রসহ চার পুলিশ সদস্য ও আনসার থাকবেন তিনজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকবেন। উপজেলা নির্বাচনে এর আগে কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত বেশি সদস্য ভোট কেন্দ্রে ছিলেন না।
সিনিয়র সচিব বলেন, যেহেতু ভোটের দিন ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে। এটা পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত থাকবে মোবাইল ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স। ব্যালট পেপার সেন্টারে পৌঁছানোর পর তাদের এলাকাভিত্তিক যে দায়িত্ব বণ্টন করা হবে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আলাপ করে তারা যেটা বলবেন, সেভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। প্রতিটি উপজেলায়ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটের আগের দিন ও পরের দিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে এবারই এত বেশি অস্ত্রসহ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য থাকছেন। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। কাজেই ভোটও বেশি পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় স্থানীয় নির্বাচন সব সময় প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়।
স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, গড়ে পাঁচটি সেন্টারের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল ফোর্স থাকবে। আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এ মোবাইল ফোর্স গঠন করা হবে। আর উপকূলীয় এলাকাগুলোয় বিজিবির বদলে কোস্টগার্ড বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। পার্বত্য এলাকার কিছু দুর্গম সেন্টারে হেলিকপ্টারে পোলিং কর্মকর্তা ও ভোটের উপকরণ পৌঁছানো হবে। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর নেই বলে জানিয়ে সচিব বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই। তার পরও প্রতিটি বাহিনী সতর্ক থাকবে। সব বাহিনীর প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটা সমন্বয় সেল হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত অভিযোগ ৯৯৯-এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না। আচরণবিধি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারসহ কোনো ধরনের নির্বাচনি কাজে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে নির্বাচন কমিশনে। মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি মাঠ রয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারে অনেকেই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। প্রার্থীদের অভিযোগ-নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না। কমিশন তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।