নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৪ এএম, ২১ অক্টোবর, ২০১৮
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করায় ওই সংসদের সরকারি দল হিসেবে আবির্ভূত হয় আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আবির্ভূত হয়।
দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন বসতে যাচ্ছে আজ রোববার থেকে। পাঁচ বছরের পথ পরিক্রমায় কাঁদা ছোড়াছুড়ি মুক্ত পরিচ্ছন্ন ও কার্যকরী সংসদ হিসেবে সুনাম কুঁড়িয়েছে দশম জাতীয় সংসদ।
আদতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল একটি বিতর্কিত নির্বাচন যেখানে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। সে সময় যদি বাংলাদেশের জনগণকে প্রশ্ন করা হতো যে এই সংসদ পাঁচ বছর টিকবে কিনা তাহলে খুব কম লোকের কাছ থেকেই হ্যা সূচক উত্তর পাওয়া যেত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই সংসদ শুধু পাঁচ বছর টিকেই থাকেনি বরং বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকর এবং দৃষ্টান্তমূলক সংসদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
বাংলাদেশে সরকারি দল, বিরোধী দলের অংশগ্রহণে মৌলিক সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হয় মূলত ’৯১ সাল থেকে। এর আগের সংসদগুলো রাজনীতিবিজ্ঞানের আলোকে পূর্ণাঙ্গ সংসদ ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গঠিত ’৭৩ এর সংসদ ছিল একটি একতরফা সংসদ। যদিও আমাদের সংসদীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তিমুল প্রোথিত ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই তবে প্রেক্ষাপটের কারণে মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সংসদে আওয়ামী লীগই একক দল হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেছিল। এরপর ক্যুদেতার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে কারচুপির নির্বাচন করে ’৭৯ তে যে সংসদ গঠন করলো সেটিও ছিল একতরফা। স্বৈরশাসক এরশাদের আমলেও একতরফা সংসদের দেখা মেলে যার কোনো কার্যকারিতাই ছিল না। পরবর্তীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হয়। গণতন্ত্রের জন্য ওই সংগ্রামের পর ’৯১ সালে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ পায় বাংলাদেশের জনগণ। তখন আশা করা হয়েছিল এবার একটি কার্যকর, পরিচ্ছন্ন সংসদের দেখা পাওয়া যাবে।
দূর্ভাগ্যবশত জনগণের সেই আশা পূরণ হয়নি। বরং সংসদীয় গণতন্ত্রের এমন বিকট রূপ আমরা দেখলাম যেখানে সমস্ত সংসদীয় রীতিনীতি ভঙ্গ করে খিস্তি খেউর, অশ্লীল গালাগালি, নোংরা ভাষা প্রয়োগ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সাংসদরা সংসদে এমন ব্যবহার করতেন, আলোচনা-বিতর্ককে এমনভাবে পাড়ার ঝগড়ার পর্যায়ে নিয়ে যেতেন যে সংসদীয় কার্যক্রম পরিবার নিয়ে বসে দেখা যেত না। এছাড়া সংসদীয় গণতন্ত্রে গালাগালির সংস্কৃতির পাশাপাশি আমরা পেলাম বর্জনের সংস্কৃতি। বিরোধীদলের সাংসদরা কথায় কথায় সংসদ বর্জন করতেন, কোনো সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করেই শুধুমাত্র সই করেই বেতন তুলতেন।
দশম জাতীয় সংসদ আমাদের এই দুটি গ্লানি থেকে মুক্তি দিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সাংসদরা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা, খারাপ কাজের নিন্দা করেছে। কোনো গালাগালি বা ব্যক্তি আক্রমণ হয়নি। দশম সংসদে ওয়াক আউটের মতো ঘটনাও ঘটেছে কিন্তু সংসদ কখনোই স্থবির হয়ে যায়নি। অর্থ্যাৎ দশম সংসদের মাধ্যমে সব মিলিয়ে কার্যকর ও ফলপ্রসূ সংসদের দেখাই আমরা পেয়েছি
একথা সত্যি যে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনেক ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু কার্যকারিতা ও পরিচ্ছন্নতার ভিত্তিতে দশম সংসদ সম্ভবত একটি উদাহরন হয়ে থাকবে। আগামীদিনের সংসদগুলো যদি দশম জাতীয় সংসদের অনুসরণ করে তাহলে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র নতুন মাত্রা পাবে বলে মনে করেন দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।