নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন যতটা না জরুরি ছিলো, তাঁর চেয়ে বেশি জরুরি ছিলো খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা। মূলত এই সংকট কাটাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি, সেটি ক্রমশ. স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রাজনীতি পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, ঐক্যফ্রন্টের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত জিয়া পরিবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেল। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির যে সমঝোতা হয়েছে, সেই সমঝোতার মূল উপজীব্য বিষয়ই হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই জিয়া পরিবারের রাজনীতিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ স্পষ্ট হয়ে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রোডম্যাপ দৃশ্যমান হলো এ রকম।
১. রোডম্যাপ অনুযায়ী জিয়া পরিবারের বেগম খালেদা জিয়া মূল সদস্য। তিনি কারাগারে। তারেক পলাতক আসামী হয়ে লন্ডনে রয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। কাজেই, এই নির্বাচনে বিএনপি-জামাত নিয়ন্ত্রিত ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি-জামাতের নেতা হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন তিনি।
২. নির্বাচনে যদি বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হয়, তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম কাজ হবে জিয়া পরিবারকে পুনর্বাসিত করা। ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, সেটির মূল উপজীব্যই হলো জিয়া পরিবারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া।
৩. নির্বাচনে জয়ী হলে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াও তারেক জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করা হবে অন্যতম পদক্ষেপ। এর পরই দু’টি আসনে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরকে সংসদে নিয়ে আসা এবং তাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে এ পরিকল্পনার অংশ।
৪. খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে আইনগতভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার ক্ষেত্রে যে বাঁধা রয়েছে, সেটি দূর করা কঠিন আইনী চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রোডম্যাপ অনুযায়ী ঐক্যফ্রন্ট যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মামলা দু’টি নিয়ে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণিত করে সাজা মওকুফ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করার চেষ্টা করা হবে।
৫. শুধু সাজা মওকুফ করলেই হবে না, পুনর্বাসনের আরও কিছু কার্যক্রম রয়েই যাবে। বিশেষ করে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কি হবে সেটিও এই রোডম্যাপের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে । বিএনপির হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দুই বছর সময় লাগবে।
বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দু’জনকেই আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত করাই ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এজন্যই বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে।
বেগম খালেদা জিয়া দু’টি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন। একটি মামলায় হাইকোর্ট বেগম জিয়ার দন্ড বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাঁর শেষ ভরসার স্থান হলো আপিল বিভাগ। শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায়ের পর যদি এই দু’টি মামলায় দন্ড বহাল থাকে, সেক্ষেত্রে দন্ড শেষ হওয়ার আরও ৫ বছর পরে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে পুনর্বহাল হতে পারবেন। তবে, তাঁর বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে পুনর্বহাল হওয়ার আর কোনো সুযোগই থাকছে না। কাজেই, এই আইনী লড়াইয়ে ড. কামাল কিভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে সহায়তা দেবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।
তবে খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি আইনী জটিলতা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক জিয়াকে দন্ড দেওয়া হয়েছে ও গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। মানি লন্ডারিং মামলায় আপিল আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন তারেক। কাজেই তাঁর জন্য এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো আপিলের সুযোগ কিভাবে ফিরিয়ে আনবেন? আপিলের মাধ্যমে তিনি আদৌ মুক্ত হতে পারবেন কিনা সেটি এখন বড় প্রশ্ন। এখানেও ড. কামাল হোসেনের আইনী পরামর্শের প্রয়োজন পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এক্ষেত্রে তারা মালয়েশিয়ার রোল মডেল অনুসরণ করা হবে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিম যেমন দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত হয়েছিল, পরে তাকে কারামুক্ত করা হয়। দুই বছর পর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তেমনি বাংলাদেশেও দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত জিয়া পরিবারের সাজা মওকুফ করিয়ে তাদের সংসদে বসানোই হবে কামাল হোসেনের প্রধান দায়িত্ব। এটিই হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মূল রাজনীতিক এজেন্ডা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।