নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তা থেকে প্রমাণ হয় যে বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত একটা বড় ভুল ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছিল, তা এখন বিএনপির নেতারা কোনো লুকোছাপা ছাড়াই স্বীকার করছেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপির মধ্যে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আবেগ, উচ্ছ্বাস এবং উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তবে এই নির্বাচনী আবেগ এবং উচ্ছ্বাসের মধ্যেও বিএনপির কিছু নেতা তৈরি হয়েছেন যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। তবে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও কেউ কেউ বিএনপির নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
বিএনপির প্রধান দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাঁরা ইচ্ছা করে নয়, বরং তাঁরা নৈতিক স্খলনজনিত কারণে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
নজরুল ইসলাম খান: বিএনপির প্রধান দুই নেতা ছাড়াও আরও যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি নির্বাচন করবেন না বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। অবশ্য তিনি কোনোবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো আসনের কথাও জানা যায়নি। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন তাঁর আসন কোনো বিষয় না। নির্বাচনের চেয়ে তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এজন্য তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভীঃ রুহুল কবির রিজভী হলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনিও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। যদিও তিনি বলেছেন, যেহেতু খালেদা জিয়া কারাগারে তাই তিনি নীতিগত কারণে নির্বাচন করছেন না। তবে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রিজভীরও নির্বাচনে কোনো আসন নাই। তিনি নির্বাচনের চেয়ে দাপ্তরিক কাজেই বেশি পারদর্শী। তাই নির্বাচনের সময় তাকে দাপ্তরিক বিষয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রিয়াজ রহমানঃ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন রিয়াজ রহমান। তিনি ছিলেন বিএনপি আমলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সেই সময় তিনি বিএনপির অন্যতম কূটনৈতিক নীতি নির্ধারক ছিলেন। তিনিও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না বলে জানা গেছে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে বিএনপির অনেক আগেই একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ২০১৫ সালে যখন বিএনপি জ্বালাও পোড়াও করেছিল, তখন তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রিয়াজ রহমান। এরপর পর থেকেই রাজনীতিতে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন তিনি। জানা গেছে, এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না রিয়াজ রহমান।
মাহমুদুর রহমান: বিএনপি আমলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দলটি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি অন্যতম নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় ছিলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারকে পরিণত হন, এখনো তিনি বিএনপির একজন থিংক ট্যাংক হিসেবেই পরিচিত, তিনি মাহমুদুর রহমান। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না মাহমুদুর রহমান। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনো কোনে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
শফিক রেহমান: বিএনপির আরেক থিংক ট্যাংক, যিনি খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লিখে দিতেন, বেগম জিয়ার নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি শফিক রেহমান। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন কারাগারেও থাকতে হয়েছে তাঁকে। কারাগার থেকে ছাড়া পেলেও বর্তমানে বিএনপির কার্যক্রমগুলোতে তাঁকে তেমন একটা চোখে পড়েনা। নির্বাচনী এই ডামাডোলেও শফিক রেহমান অনুপস্থিত। এবার তিনিও নির্বাচন করছেন না বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগে যাঁরা নির্বাচন করছে না, তাঁরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে ও গুরুত্বপূর্ণ কাজেই সম্পৃক্ত। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির ক্ষেত্রে হলো, যাঁরা নির্বাচন করছে না, তাঁরা মান অভিমান, বিভিন্ন রকম অন্তঃকলহের কারণে নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।