নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৫ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৮
আজব এক নাটক শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। পূর্বের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে প্রতিবাদের ভাষা ছড়াতে চেষ্টা করে বিএনপি তার গোড়ায় সরকার পানি ঢেলে দেয় উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড দিয়ে। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও উন্নয়নের ইচ্ছা শক্তির নিকট পরাস্ত হয় বিএনপির প্রতিবাদ। উপরন্তু সামনে চলে আসে তাদের নেতৃত্বের নানাবিধ অপকর্ম। আইনের বিচারে দণ্ডিত হয়ে বিএনপি হয়ে পড়ে নেতৃত্ব শূন্য।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন বুঝতে পারে তাদের নেতাদ্বয় কেউ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না তখন রাজনীতিতে টিকে থাকতে চলে এক অভূতপূর্ব সমীকরণ। বিএনপি চেষ্টা করেছে নানা ভাবে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে অন্তত একটি আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে। একদিকে যেমন চলেছে এই প্রয়াস, অন্যদিকে ছদ্মবেশে সরকারের দরজায় করেছে দাপ্তরিক আঘাত। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু করতে না পেরে যখন তারা হতাশ, ঠিক সেই সময়ে লন্ডনস্থ হুকুমে গঠিত হয় ঐক্যফ্রন্ট।
ঐক্যফ্রন্টের গঠন এবং তাদের পরবর্তী জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণের সঙ্গে বর্তমান ঐক্যফ্রন্টের মাঝে বিশাল এক ব্যবধান চোখে পড়ছে বলেই অনেকের ধারণা।
দিন যত এগিয়ে চলেছে, ভিন্ন ভিন্ন নিতির মানুষদের মতপার্থক্য ততই সামনে চলে আসছে।
ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে একটি বক্তব্যই ছিল, নির্বাচন শেষ না হওয়া অবধি তারেক রহমানকে সম্মুখে আনা যাবে না। তারেক রহমানের অপরিচ্ছন্ন ইমেজ শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও নানা ভাবে প্রকাশিত। সেই বিষয়কে মাথায় রেখে ড. কামালকে সেই স্থানে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। কারণ ড. কামালের দেশে বিদেশে একটি ইমেজ রয়েছে। যদিও তিনি উল্লেখ করার মতো কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়।
তাদের যাত্রা শুরুই হয়, অনেকটা ধোঁয়াশা রেখে। জনগণকে বলা হচ্ছে একটি, কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে রয়েছে আর একটি।
ড. কামাল তিনি চেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের সকল আলোচনা, সকল কিছুই নির্ধারণ হবে নিজেদের বৈঠকে। কিন্তু বিএনপির তৃণমূল সেটা মেনে নেয়নি, তৃণমূলের সঙ্গে বেশ বেশি সম্পৃক্ত অনেক উচ্চ পর্যায়ের নেতাও সেটা মেনে নেয়নি। তবে তারা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতাও করেন নি। কিন্তু যেই মুহূর্তে ড. কামাল কাদের সিদ্দিকী কে সম্পৃক্ত করলেন, সেই মুহূর্তে বিএনপির মধ্যে বডি ল্যাংগুয়েজ বেশ পরিবর্তন এসে গেলো।
বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়, এমন ঘটনার পর পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। তারা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। কাদের সিদ্দিকীর অংশগ্রহণ পাকিস্তান ভালোভাবে নেয়নি। কাদের সিদ্দিকী মুখে যাই বলুক সেটা তারা বিশ্বাস করেনি। কারণ বাংলাদেশের মাটিতে জামাতকে ধরে রাখতে, সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখতে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। বিএনপির সঙ্গে জামাত ভিত্তিক রাজনীতিতে পাকিস্তান আইএসাই বেশ মোটা অংকের একটি হিসাব সব সময় রেডি রাখে।
প্রশ্নটা শুরু হয় এখান থেকেই, কারণ ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃত্বে যদি ঐক্যফ্রন্টের সকল দলের নমিনেশন যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাহলে জামাতের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার মুখোমুখি হবে এটা বলা বাহুল্য। কারণ ঐক্যফ্রন্টের অনেকের জামাত ব্যাপারে ফোভিয়া আছে।
কিন্তু পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই সেটা চায়না। বাতাসে এমন সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে জামাত দলের পর্যাপ্ত সদস্যদের নমিনেশন দেবার জন্য পাকিস্তানের কোন সদস্যদের সাথে বাংলাদেশে লবিস্টে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।
মূলত নাটক এই অবস্থা থেকেই ঘুরে যায়।
পূর্বের দিন ঐক্যফ্রন্টের মিটিং এ নেয়া সিদ্ধান্ত পালটে যায়। বিএনপির নির্বাচনে নমিনেশন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিতে দৈব ভাবে আবির্ভূত হয় ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান। প্রতিবাদ জানায় একমাত্র গণফোরাম। শুধু তাই নয়, ঐক্যফ্রন্টের নমিনেশন তালিকা তারেকের নিকট পাঠাতে আদেশ জারি হয়েছে।
তারেক রহমানকে আড়াল করতে ড.কামালের আগমন, এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে ভিন্ন কারণে ব্যারিস্টার মইনুল এখন কারাগারে। অথচ দৈব ভাবে তারেক রহমানের আগমন জানিয়ে দিয়েছে তিনি আর আড়ালে নেই। বরং শতভাগ কর্তৃত্ব নিয়ে তিনি আবির্ভূত ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
তাহলে ঐক্যফ্রন্টের গঠন এবং তারেক রহমানের স্কাইপিতে প্রার্থী সাক্ষাতকার এই দুইয়ের বিয়োগফল যা কিছু সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে অতিগোপনীয় অথচ জনগণের চোখে ধুলা দেবার মতো ঘটনা সমূহ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের মানুষের মুখে একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরছিল, " যদি জয়লাভ করে, কে হবে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী " নানা ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তারা অবতারণা করেছিলো নানা উদাহরণ।
শেষ অবধি গণ স্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফর উল্লাহ সাহেব গতকাল এক টকশোতে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারেন নি। সে উত্তর দিয়েছে, অবশ্যই গণফোরাম নেতা ড. কামাল।
তিনি এটাও বলেছেন, ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন ড. কামাল। অনেকটা অতিমানব হিসাবেই তুলে ধরেছেন ড. কামাল কে।
একদিকে তারেক রহমান বাংলাদেশ আইনে দণ্ডিত হয়েও ভিডিও কনফারেন্সে প্রার্থী নির্বাচন করে ইতিহাস তৈরি করছেন, অন্যদিকে জাফর উল্লাহ্ সাহেব ড. কামালকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাইছেন।
অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার চাহিদা নিয়ে বিপাকে বিএনপি। এই ত্রিভুজ রাজনৈতিক টানা পোড়নে ঐক্যফ্রন্ট দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না এমন অভিমত অনেকের।
বিশেষ করে তারেক রহমানের কর্তৃত্ব দৈব ভাবে সামনে চলে আসাকে মোটেও মেনে নিতে পারেনি ড. কামাল। তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ড.কামালকে মেনে নেবে না তারেক রহমান। পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই জামাতের প্রার্থী দের প্রাধান্য থাকবে না সেটা মেনে নিতে পারবে না, মান্নার অতিরিক্ত আসনের দাবি বিএনপি মেনে নিতে পারবে না। ড.কামাল যদি কোন ভাবে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে উপলব্ধি করতে পারে যে, বিএনপি তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। আর তখন জনগণকে দেয়া ওয়াদা প্রতিফলিত হবে না। পক্ষান্তরে অপমানিত হয়ে বেরিয়ে যেতে পারে, তাহলে আ. স. ম. আবদুর রব, মান্না, জাফর উল্লাহ্ গং দের অবস্থান কি হবে সেটা অনুমেয়।
আর তাই অনেকেই বলছে ঐক্যজোট ভাংছে, সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অন্যদিকে বিএনপি এবার নির্বাচনে যাবেই নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে। যদি এমন হয় যে, বিএনপি তাদের প্রধান টার্গেট খালেদা জিয়া, বা তারেক রহমানকে মুক্ত করতে পারছে না তাহলে দেশের মানচিত্রে নামিয়ে দেবে ভয়াবহ অবস্থা।
তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই যে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য সেটার প্রমাণ তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্স।
নির্বাচন এবং দেশের স্থিতিশীলতা রয়েছে ২য় অধ্যায়ে বলেই চারদিকে শোনা যায়।
বহুমুখী টানাপোড়ন এবং স্বার্থের দণ্ডে রাজনৈতিক অঙ্গনে কি পারবে তাদের বলা কথাগুলির বাস্তব রুপ দিতে?
নাকি বিএনপির একচ্ছত্র অধিপতি তারেক রহমানের দৈব ভাবে আগমনে ঐক্যজোটের ঐক্যপক্রিয়া অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে?
সময় তার উত্তর দিয়ে দেবে। অন্যদিকে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফসল নিয়ে আওয়ামীলীগ কতটা জনমনে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বা পেরেছে তার ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত।
লেখক: কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন।
মন্তব্য করুন
পঞ্চগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে পৌনে চার লাখ টাকার সম্পদের মালিক ছিলেন। সদর উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে তিনি সাত কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। শুধু আমিরুল ইসলাম নন, দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ থেকে নির্বাচিত অনেক চেয়ারম্যানই গত পাঁচ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁদের সম্পদ বেড়েছে শতগুণেরও বেশি।
চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রদর্শিত সম্পদের চেয়ে প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ আরো অনেক বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। এই চেয়ারম্যানরা আবারও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই নির্বাচন প্রভাবিত করতে অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনেকে বলছেন, তাঁরা বৈধভাবে ব্যবসা করে এ সম্পদের মালিক হয়েছেন। চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁরা কোনো অন্যায় কাজে যুক্ত হননি।
জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, নির্বাচিত হলেই ধনী হওয়ার একটা সোপানে পা দেওয়া যায়। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো এর প্রমাণ।
আতার অর্থ বেড়েছে ১৭৬ গুণ, রয়েছে দুদকের মামলা
কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এবারও তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। গত পাঁচ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিপুল হারে বেড়েছে।
হলফনামার তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে আতার নগদ টাকা ছিল পাঁচ লাখ এবং ব্যবসার জামানত ছিল ৭২ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
বর্তমানে তাঁর ব্যাংকে জমা ও নগদ অর্থের পরিমাণ সাত কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া এফডিআর রয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে আতার অর্থ বেড়েছে ১৭৬ গুণ। এ ছাড়া পাঁচ বছর আগে তিনি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কারের মালিক ছিলেন। বর্তমানে তাঁর রয়েছে ৯০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাডো গাড়ি।
আতার অস্থাবর সম্পদের পাশাপাশি স্থাবর সম্পদও বেড়েছে। ২০১৯ সালে তাঁর স্থাবর সম্পদ ছিল ৬৯ লাখ ৮২ হাজার টাকার। বর্তমানে তিনি সাত কোটি ১৪ লাখ ৬১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক। গত ১১ মার্চ আতাউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সাম্মিয়া পারভীনের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা করেছে দুদক। ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা ওই মামলায় তাঁরা এখন জামিনে আছেন।
এ বিষয়ে আতাউর রহমানের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চেয়ারম্যান হয়ে কোটিপতি আমিরুল
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো পঞ্চগড় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন আমিরুল ইসলাম। ওই সময় দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে তাঁর স্থাবর সম্পদ ছিল তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার। এর মধ্যে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২.৫ একর কৃষিজমি এবং একটি হাসকিং মিল ও সংলগ্ন বাড়ির মূল্য তিন লাখ টাকা। তিনি আবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুসারে বর্তমানে তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমান সাত কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ১৯১.২০ গুণ।
হলফনামা অনুসারে বর্তমানে আমিরুল ইসলামের পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পঞ্চগড় পৌরসভার তেলিপাড়া ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির কারখানা, ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ৫৭ শতক বসতভিটা, এক কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি ডুপ্লেক্স ভবন, চার লাখ টাকা মূল্যের একটি টিনশেড ভবন এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১.৩১ একর জমি রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে আমিরুল ইসলামের। ২০১৯ সালের হলফনামা অনুসারে তিনি ২০ লাখ ২০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন। বর্তমানে তিনি এক কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক।
হলফনামা অনুসারে, ২০১৯ সালে আমিরুল ইসলামের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে আমার একটি বড় ঋণ নেওয়া আছে। এ ছাড়া গরুর খামার, অটো ব্রিকস ফ্যাক্টরি, রাইস মিল ইত্যাদির মাধ্যমে আমি এসব সম্পদ গড়েছি। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই।’
মুকুল ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে মুকুলের নিজের ও স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। ২০১৯ সালে মুকুলের নগদ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা থাকা টাকার পরিমাণ ছিল এক লাখের কিছু বেশি। বর্তমানে তা কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
হলফনামার তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে জিয়াউল হাসান মুকুলের নগদ অর্থ ছিল ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ছয় হাজার ৬৮৫ টাকা। ২০১৯ সালে তাঁর স্ত্রী রেখা আক্তার বানুর হাতে নগদ কোনো টাকা না থাকলেও বর্তমানে তাঁর হাতে রয়েছে চার লাখ ২৬ হাজার ৩৪৪ টাকা। ২০১৯ সালে মুকুলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৮৫ হাজার ৭৫৩ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১০৫ গুণ।
জানতে চাইলে জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, ‘আইনজীবীর ভুলে ২০১৯ সালের সঙ্গে ২০২৪ সালের হলফনামার তথ্যে গরমিল দেখা দিয়েছে। আসলে আমার এত সম্পদ নেই।
সম্পদ বেড়েছে আরো যেসব উপজেলা চেয়ারম্যানের
হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অর্থ-সম্পদের পরিমাণ বিপুল বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামশুদ্দোহা চৌধুরী, সিরাজগঞ্জের একাধিক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল, বগুড়া সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান, বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর এবং সিরাজগঞ্জের একাধিক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গত পাঁচ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
হলফনামা তথ্যা চেয়ারম্যান সম্পদ
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা আজ সোমবার বিকেল
৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক
কার্যালয়ে এ সভা ডাকা হয়েছে।
রবিবার (৫ মে) আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান স্বাক্ষরিত
এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সৃভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের।
সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য দলের পক্ষ থেকে
অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনের পতাকা ছাত্রলীগ
মন্তব্য করুন
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে চেয়ারম্যান
পদে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল
কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
রোববার (৫ মে) দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর তথ্য গোপন করায় মনোনয়নপত্র
বাতিল করেন।
জানা যায়, আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সদর
ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে সেতুমন্ত্রীর
ভাইসহ চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন-
১। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন
২। উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ
গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল
৩। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান
সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল
৪। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওমর আলী
ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন ছাড়া বাকি তিনজনের মনোনয়ন
বৈধ হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর
তথ্য গোপন করায় চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সংশোধন
পূর্বক জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর আপিলের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমার নামে যে মামলা
ছিল তা আমার জানা ছিল না। এ ছাড়া আয় বিবরণীর হিসাব দেওয়া হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা
তা খেয়াল করেননি। আপিল করার সুযোগ আছে। আমি আপিল করবো। আশা করি আমার মনোনয়ন বৈধ হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই মন্ত্রী। স্বজন বলতে সন্তান-স্ত্রীকে
বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেটা ক্লিয়ার করেছেন। আমার ভাই ওবায়দুল কাদের সাহেবও সেটা
ক্লিয়ার করেছেন। আশা করি স্বজনের ভুল ব্যাখ্যা থেকে সবাই সরে আসবে’।
প্রসঙ্গত, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের তফসিল
অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১২ মে, প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে। ভোটগ্রহণ হবে
আগামী ২৯ মে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান
পদে মোট ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন। একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহদাত হোসেন ছাড়া বাকি সবার মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের শাহদাত হোসেন
মন্তব্য করুন
পঞ্চগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে পৌনে চার লাখ টাকার সম্পদের মালিক ছিলেন। সদর উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে তিনি সাত কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। শুধু আমিরুল ইসলাম নন, দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ থেকে নির্বাচিত অনেক চেয়ারম্যানই গত পাঁচ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁদের সম্পদ বেড়েছে শতগুণেরও বেশি।