নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮
গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন পরিত্যক্ত নেতা গণফোরামে যোগদান করেছেন। সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এ কে খন্দকার, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিনসহ আরও কিছু আওয়ামী লীগের অপাংক্তেয় নেতা গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এই পরিত্যক্ত নেতাদের গণফোরামে যোগ দেওয়াতেই দলটির নেতারা মনে করছে, তারা অচিরেই দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। গণফোরামের একাধিক নেতা বলছে, ‘চমক এখনো বাকি আছে, আওয়ামী লীগ থেকে আরও অনেকে গণফোরামে যোগ দিবেন। অপেক্ষা করুন।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই সহজে মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে গণফোরামের ঠিকানা খুঁজছেন। কারণ তাঁরা মনে করছেন, গণফোরামে যোগ দিলে, হয়তো তাঁরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তীব্র প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা হচ্ছে আদর্শহীন রাজনীতির উদাহরণ। কিন্তু ড. কামাল হোসেন সবসময় বলেন যে, তিনি আদর্শের রাজনীতি করেন, সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করেন। অন্যদলের পরিত্যক্ত নেতাদের দলে নেওয়া কতটা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার সম্মত ড. কামাল হোসেনের কাছে প্রশ্ন আসতেই পারে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘গণফোরাম কতগুলো সুনির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে তাঁদের দলে লোক নিচ্ছেন। যারা গণফোরামের নীতি আদর্শে বিশ্বাস করে তাঁদের জন্যে গণফোরামের দরজা সবসময় খোলা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণফোরাম বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে চায়, ৭২ এর সংবিধানে দেশকে ফিরিয়ে নিতে চায়। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। যারা মনে করেন আওয়ামী লীগ এখন বঙ্গবন্ধুর চেতনা এবং আদর্শ থেকে দূরে সরে এসেছে, তাঁরা যদি গণফোরামে যোগদান করেন, তাহলে গণফোরামের আদর্শচ্যুতি ঘটবে না।’
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানাচ্ছে, যে সমস্ত এলাকায় অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী, যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নাই। তাঁদের দিকেই এখন গণফোরাম টার্গেট করেছে। যেমন পাবনা ১ আসনে শামসুল হক টুকুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেখানে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ একজন জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে গণফোরাম মনে করছেন। এখন গণফোরাম তাঁর দিকে হাত বাড়িয়েছে। কুষ্টিয়া অঞ্চলে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে মনে করছে গণফোরাম। গণফোরামের নেতারা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদকে ধানমন্ডির একটি আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ড. কামাল হোসেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে গণফোরামের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যারা সম্ভাবনাময় প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি, এমন অনেক আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে গণফোরাম গতকাল এবং আজ যোগাযোগ করেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, গণফোরামের মূল কাজ হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে মাঠে মনস্তাত্ত্বিক এবং সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করে দেওয়া। এমন লোকজনকে যদি আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে নেওয়া হয়, তাহলে একদিকে আওয়ামী লীগ যেমন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে, তেমনি মনস্তাত্তিকভাবেও দুর্বল হয়ে পরবে। আওয়ামী লীগের এইসব প্রার্থীরা মনোনয়নের প্রত্যাশায় গত ৫ বছর ধরে এলাকায় কাজ করেছেন। ফলে তাঁদের জন্য ভোট চাওয়াটা সহজ হবে। গণফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণফোরাম মনে করছে যে, বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি করার জন্য দল ভারী করা জরুরি। বিএনপি সবসময় মনে করছে, গণফোরাম রাজনৈতিক দল হিসেবে তেমন শক্তিশালী না। তাঁদের সাংগঠনিক কাঠামো অনেক দুর্বল। গণফোরামে এই সমস্ত নেতারা যোগ দিবে, তখন গণফোরামের সাংগঠনিক ভিত্তি আরও প্রতিষ্ঠিত এবং মজবুত হবে। এর ফলে গণফোরাম বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে দরকষাকষির সুযোগ পাবে। সুতরাং এই দরকষাকষি এবং আগামী নির্বাচনে নিজেদের ভালো একটা অবস্থান জানান দিতে গণফোরাম আওয়ামী লীগকেই টার্গেট করেছে।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।