নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮
টানা দুই মেয়াদে সরকারে আওয়ামী লীগ। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আওয়ামী লীগ কি পারবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে? আওয়ামী লীগ যদি এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অধ্যায়। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের প্রচারণা এবং অন্যান্য কার্যক্রম যে ধারায় চলছে, তাতে তৃতীয়বার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষেই পাল্লা বেশী ভারী। আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচকরাও বলেছেন, জয়ের পাল্লা আওয়ামী লীগের দিকেই ঝুঁকে আছে। অবশ্য এমন মন্তব্যের সঙ্গে তাঁরা অনেক কিছু জুড়ে দিচ্ছেন। যেমন, আওয়ামী লীগ একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার কৌশল কাজ করছে।
অনেক সমালোচক বুদ্ধিজীবী মনে করছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে সবসময় শাসক দলের পক্ষেই যায়, তার বড় প্রমাণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীর প্রার্থিতা উচ্চ আদালত থেকে বাতিল হওয়া, গ্রেপ্তার এবং মামলার ভারে ন্যুজ হয়ে প্রচারণা ইত্যাদি নানা কারণে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে বিএনপির। বিএনপির নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি এমন যে, এই নির্বাচনে কেবল একটি ফলাফল হতে পারে। সেটা হলো আওয়ামী লীগের জয়।
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে, তা হলো আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার বলে কিছু নেই। কারণ জনগণ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতো তাহলে অন্যকিছু ঘটতো। কিন্তু তেমন সুযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিতে চায় না।’
বিএনপি এরকম মতামত দিলেও সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তেমনটি মনে করেন না। সাধারণ মানুষ ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগকে মন্দের ভালো বলেই মনে করছে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য যে ‘জনগণের জাগরণ’ দরকার ছিলো তা বিএনপি করতে পারেনি। বিএনপি এবারের নির্বাচনে দলের বৃত্তের বাইরে জনগণের জোয়ার সৃষ্টি করতে পারেননি। বরং বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে বিএনপি নিজেই নিজেদের জনবিচ্ছিন্নতাকে প্রকাশ্য করেছে। নেতৃত্বের সংকট, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং প্রচারণা বিমুখ লড়াইয়ে কখনো মনে হয়নি যে বিএনপি জেতার জন্য নির্বাচন করছে। বরং বারবার বিএনপি জনগণের মধ্যে এরকম ধারণা দিয়েছে যে, ভোটের মাঠ থেকে যেকোন সময় তারা সরে যেতে পারে। জনগণকে উৎসাহ দেয়ার বদলে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা আতংক ও ভয় ছড়িয়েছে। বিএনপি ভোট নয় অন্য কোন পন্থায় সরকারকে হটাতে চায়, এরকম একটি ধারণা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই জনগণ ভোটের আগেই ভোটে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে, সবকিছু এখনো শেষ হয়নি। ভোটের আগে ঘটতে পারে অনেক কিছুই। এইসব শঙ্কা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যদি একটি বিশ্বাসযোগ্য ভোটের দিন করতে পারে, তাহলে তৃতীয় মেয়াদে পা রাখবে আওয়ামী লীগই।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সৌদি আরব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
বহিষ্কারাদেশ বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
গতকাল ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৈঠক ঘিরে সারাদেশের আগ্রহ ছিল। উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, যারা দলের নির্দেশনা মানেনি- তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে ব্যাপারে সকলের আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার কথা বললে উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি উঠেনি। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কেবলমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচী এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছে, যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কথা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও বলছিলেন যে, যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হল না কেন? এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন নেতার কাছেই তেমন কোন উত্তর নেই। বরং আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত চাননি বিষয়টি এই কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচিত হোক।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, কৌশলগত কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি এই প্রসঙ্গটি কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করেননি এবং এই কৌশলগত অবস্থানের ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
প্রথমত, অনেকে মনে করছেন আওয়ামী লীগ আসলে দেখতে চাচ্ছে যে উপজেলা নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যারা আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তারা উপজেলা নির্বাচনে কী ধরনের ফলাফল করে। এই ব্যাপারে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ আছে। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা যদি এমনিতেই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে সেটিই হবে তাদের একধরনের শাস্তি। আর যদি তারা জয়ী হন তবে তাদেরকে অন্যভাবে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। এ কারণে এটি একটি কৌশলগত অবস্থান বলে অনেকে মনে করেন।
উপজেলা নির্বাচনের আগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নির্বাচনের উপর তার প্রভাব পড়বে। উপজেলা নির্বাচনে যে উৎসাহ উদ্দীপনা সেটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরকম একটি উপলব্ধি থেকেই হয়তো উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেই উপজেলা নির্বাচনের যে প্রচারণা, সে প্রচারণাই ভাটা পড়তে পারে।
দ্বিতীয়ত, সারাদেশ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ। উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। যদিও দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদেরকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধু দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের তথ্যের উপর আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্ভরশীল নন। তিনি নিজস্ব উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে এবং এই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরপরই হয়তো তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
তৃতীয়ত, দলের দুর্বলতা প্রকাশ না করা। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিরা যেভাবে সিদ্ধান্ত লঙ্ঘণ করেছে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এই মুহূর্তে যদি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের দুর্বলতাই প্রকাশ পাবে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা, দলের মন্ত্রী-এমপিরা যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে তৃণমূলে তার প্রভাব পড়বে এবং এক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দলের ভেতর একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী হয়তো উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। গতকাল ছিল দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। দ্বিতীয় দফায় ১৫৯ টি উপজেলায় ২১ মে নির্বাচন হওয়ার কথা। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেছে, যে ১৪ জন এমপি এবং মন্ত্রীর নিকট আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তারা দলের নির্দেশ মানেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে ১৪ জন এমপি এবং মন্ত্রীর নিকট আত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৈঠক ঘিরে সারাদেশের আগ্রহ ছিল। উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, যারা দলের নির্দেশনা মানেনি- তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে ব্যাপারে সকলের আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার কথা বললে উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি উঠেনি। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কেবলমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচী এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।