নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১১ জানুয়ারী, ২০১৯
নির্বাচনে মহাবিজয়ের পর আওয়ামী লীগ প্রথম বৈঠক করছে আগামীকাল শনিবার। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের এই ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে দল এবং সরকারকে আলাদা করে পরিচালনার ব্যাপারে একটি নীতিনির্ধারণী কৌশল দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের রাখতে চাইলেও তাতে আগ্রহী নন সিনিয়র নেতারা।
আওয়ামী গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির মূল ক্ষমতা হলো কার্যনির্বাহী সংসদের, যেখানে প্রেসিডিয়াম সদস্য সবচেয়ে ক্ষমতাবান। তারপরেই আছেন সম্পাদক মণ্ডলী এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগে উপদেষ্টামণ্ডলী হলো একটি অলঙ্কারিক পদ। এবারের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের প্রায় সব শীর্ষ নেতা মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েছেন। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম ও মহিউদ্দিন খান আলমগীর। এরা সবাই পূর্বে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিম দশম সংসদেও মন্ত্রী ছিলেন। শেখ সেলিম ৯৬’র সরকারে মন্ত্রিত্ব পেলেও পরে আর মন্ত্রী হতে পারেননি। এবার মন্ত্রী হতে পারেননি দলের আরও দুই শীর্ষ নেতা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতাদের কাজে লাগানো দলের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা দলের নীতি নির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারলেও উপদেষ্টামণ্ডলীর সেরকম কোনো কাজের সুযোগ নেই। তাই যে সকল উপদেষ্টা মন্ত্রী হতে পারেননি তাদেরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে দলের প্রধান ও সভাপতি শেখ হাসিনা চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে, তাদেরকে দলের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান করে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিনিয়র নেতারা যে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে সেসব কমিটিতে নেওয়া হবে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অনেক সিনিয়র নেতাই সংসদীয় কমিটিতে যেতে আগ্রহী নন। দুইবার সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা শেখ ফজলুল করিম সেলিম এই দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় দলের হয়ে কাজ করতে পারবেন। দলের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমুও সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, সাময়িকভাবে তাদের এমন আবেগ, মান-অভিমান থাকতেই পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী যখন তাদেরকে যে নির্দেশনা দিবেন, তা তারা নিশ্চয়ই পালন করবেন। সেখানে তাদেরকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্য একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিকে আরও শক্তিশালী এবং অনেক কর্মসূচি নির্ভর করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। দলের অনেক কাজ। বিশেষ করে আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে দলের বিপুল কর্মসূচি রয়েছে। সে কর্মসূচিগুলোতে পূর্ণকালীন নেতা দরকার। যারা এখন মন্ত্রিত্ব পাননি কিন্তু দলের উচ্চ পদে রয়েছেন তারা এই কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সংসদ, সরকার এবং দল; এই তিনটিকে আলাদা করতে চায়। যারা মন্ত্রিসভায় আছেন তাদেরকে দল এবং সংসদে জবাবদিহিতায় আনতে চায়। এজন্যই সিনিয়র নেতাদের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। যখন দলের সিনিয়র নেতারা মন্ত্রিত্বে থাকেন তখন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সংসদীয় কমিটি আপনাআপনি অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন তাদেরকে চ্যালেঞ্জ কিংবা জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এটা দলের একটি বড় দুর্বলতা বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। সে কারণেই তারা সংসদ, সরকার এবং দলকে আলাদা করতে চাইছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ যেকোনো সময় মন্ত্রীদের জবাদিহিতার আওতায় আনতে পারবেন এবং মন্ত্রীদের কার্যক্রম নিয়ে দলীয় ফোরামে সমালোচনা করতে পারবেন। সংসদীয় কমিটিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তাদেরকে কৈফিয়ৎ তলব করতে পারবেন। দলের মধ্যে এমন একটি জবাবদিহিতা আনার জন্যই এটা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, আমরা এবার একটি বিপুল বিজয় পেয়েছি। আমাদের কোনো বিরোধী দল না থাকায় আমাদের একটি চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আনতে হবে। কাজেই আমরা যারা মন্ত্রী হয়েছি, তারা যেন জবাবদিহিতার আওতায় থাকি সেজন্য সিনিয়র নেতা এবং দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।