নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১২ জানুয়ারী, ২০১৯
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর স্বস্তিতে নেই বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো ছিল তা চলমান রয়েছে। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছে, নির্বাচনের পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন করে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। সরকারের সমস্ত পদক্ষেপ হচ্ছে বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য’। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বিএনপিকে ধ্বংস করা সরকারের লক্ষ্য নয় বরং বিএনপি যেন একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচালিত হয়, সেটাই সরকারের মূল আকাঙ্খার জায়গা। অর্থাৎ সরকার নতুন বিএনপি চাইছে। যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করবে। ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করবে এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছে,‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ঐক্যমত থাকা দরকার। যেখানে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন মীমাংসিত হওয়া উচিত।’ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এই ঐক্যমতের ধারাটা সূচনা করতে চায়। বাংলাদেশে যে রাজনীতি করুক না কেন, তাকে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে হবে, ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করবে এবং আমাদের যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সে মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ পরিচালনা করবে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বের বিএনপি এটা স্বীকার করে না। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের অপশক্তির হাতে হাত মিলিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। যিনি সবকিছু জেনেও এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ইন্ধন দিয়েছিলেন। ১৫ আগষ্টের বর্বর সেই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ালি জিয়াউর রহমান। কারণ খন্দকার মোস্তাকের পর তিনি প্রথমে সেনাপ্রধান। তারপরে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের খুনীদের পূনর্বাসন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনসহ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াও একই ধারা অনুসরন করেছেন। তিনি কর্ণেল ফারুক, রশীদসহ ৭৫ এর হত্যাকারীদের মদদ ও পৃষ্টপোষকতা করেছেন। তাদের কূটনৈতিক চাকরির পদোন্নতি দেওয়ার মত কাজ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াও ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেননি। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করেছেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়াও এই স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী এবং ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট এর অপশক্তির সঙ্গে হাতে হাত রেখেই রাজনীতি করেছেন বলে আওয়ামী লীগ মনে করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা সম্বন্ধে কটুক্তি করেই তারেক জিয়াই বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি তৈরী করেছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেনে। সেজন্য আওয়ামী লীগ মনে করে যে, বিএনপির যে এখন দু:অবস্থা। এই দু:অবস্থা হয়েছে ভুল পথের রাজনীতির ফল। যেহেতু তারা ১৫ আগষ্টের অপশক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করেছে। সেই রাজনীতির পরিমানামই হলো বিএনপির আজকের হাল। বিএনপির এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ মনে করে, জিয়া পরিবার মুক্ত একটি বিএনপি তৈরী করতে হবে। যেই বিএনপি ১৫ আগষ্ট উল্লাস করবে না। জন্মদিনের কেক কাটার বিভৎস নাটক করবে না। যারা স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্ত করবে না। সেইরকম বিএনপি তৈরী করার ক্ষেত্রে এই ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে বলে অনেক নেতা মনে করেন। আওয়ামী লীগের অনেকেই ধারণা করছেন যে, খালেদা জিয়া এখন রাজনীতিতে পরিত্যক্ত হয়েছেন। তারেক জিয়াকেও দেশে ফিরিয়ে এনে তার দণ্ড কার্যকর করা হবে। এর মাধ্যমে একটি নতুন ধারার বিএনপি সূচিত হবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এ ব্যাপারে আশাবাদী। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে। সে ঐক্যফ্রন্টে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলা হয়েছে। সেসব কথা বিএনপি নেতারা প্রতিবাদহীন ভাবে শুনছেন। কাজেই বিএনিপির সংশোধনের এখনো সুযোগ রয়েছে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে। বিভিন্ন মত, বিভিন্ন চিন্তা চেতনা থাকবে। বিভিন্ন আদর্শের কথা বলা হবে। কিন্তু মৌলিক যে জায়গা, সেখানে একমত থাকুক এমন একটা রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠিত হোক সেটা আওয়ামী লীগ চায়। সেজন্যই আওয়ামী লীগ চায় নতুন বিএনপি।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তত পাঁচবার সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। একই সাথে বলা হয়েছিল যে, সারাদেশে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হচ্ছে না।