নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৫ মার্চ, ২০১৯
শান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটু ক্ষুব্ধই হলেন। বললেন ‘মাননীয় সেতুমন্ত্রীতো আদালতে দণ্ডিত নন। রাষ্ট্রের একজন সম্মানিত ব্যাক্তি’। তাই তার চিকিৎসা তার পরিবার এবং দলের ইচ্ছায় হচ্ছে। বেগম জিয়ার ব্যাপারটি তো তা নয়, তিনি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দণ্ডিত। তাই তাঁর চিকিৎসা হতে হবে আইনের আওতায়।’ আজ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।
দুপুর আড়াইটায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। বিএনপি নেতাদের মূল বক্তব্য ছিলো বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুদিন আগে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘তিনি (বেগম জিয়া) খুবই অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।‘ তিনি পূর্বের দাবী পুনঃ উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা দরকার। সেখানেই তার সুচিকিৎসা সম্ভব।’ এসময় আসাদুজ্জামান খান কামাল হাইকোর্টের নির্দেশনা সংক্রান্ত আদেশ স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বেগম জিয়ার চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা তা প্রতিপালন করবো।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেন যে, আমি আমি এখনই আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন যে, একদিন পরপর একজন নারী চিকিৎসক বেগম জিয়াকে দেখতে যান।’
এ পর্যায়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের একজন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুতে চিকিৎসার অনেক সরঞ্জামই নেই।’ ঐ নেতা বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে বঙ্গবন্ধুতে নেওয়ার পর একটি যন্ত্রের অভাবে তার চিকিৎসা আধা ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছিল।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চান কী যন্ত্র? উত্তরে ঐ নেতা বলেন,‘ ইন্ট্রো অ্যারোটিক বেলুন পাম্প (আই.এ.বিপি), পরে তা ল্যাবএইড থেকে এনে চিকিৎসা করানো হয়।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোন তথ্য তার জানা নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেবী শেঠি এবং সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘তারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেন যে, ‘দেবী শেঠি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুতে বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে এবং মাননীয় সেতুমন্ত্রীকে সেটা দেওয়া হয়েছে।’ এ সময় বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘তাহলে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলো কেন? আপনারা বঙ্গবন্ধুতে আস্থা রাখতে পারেন না, অথচ বেগম জিয়াকে সেখানে কেন চিকিৎসা করাতে চান?’ এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঐ মন্তব্য করেন।
অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সামলে দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘না আমরা তা বলছি না। আমরা ওবায়দুল কাদেরের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তিনি যেন দ্রুত সেরে ওঠেন তার জন্য দোয়া করি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বেগম জিয়ার চিকিৎসার কোন কোন ত্রুটি করছে না। জেল কোডের নিয়মনীতি অনুযায়ী এবং অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়ে তার চিকিৎসা চলছে। এই মুহূর্তে বেগম জিয়াকে ইউনাইটেডে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন