নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৫ মার্চ, ২০১৯
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগের খবর পেয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির নীতি নির্ধারক মহলের বৈঠকে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই তথ্য উপস্থাপন করেন। ঐ বৈঠকেই আবার মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সরকারের গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপিতে এখন সরকারের দালাল কে তা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির নীতি নির্ধারক বৈঠকে জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচেনা হয়। এই আলোচনার এক পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন যে, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। সরকারের অন্তত ৪ টি সংস্থার আইন উপদেষ্টা হিসেবে ড. কামাল হোসেন কাজ করছেন। ড. কামাল হোসেন যদি সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেন, তাহলে তিনি এটা করবেন কেন! দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে মির্জা আব্বাস উপস্থাপন করেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের শপথ গ্রহনের পর ড. কামাল হোসেন বলেছেন অন্য এমপিরা শপথ গ্রহণ করবেন কি করবেন না সে বিষয়ে আলোচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন। তারা মনে করছেন, ড. কামাল হোসেন সরকারের পরামর্শেই এমন কথা বলেছেন। ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মির্জা আব্বাসের তৃতীয় অভিযোগ, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যে লিখিতপত্র দিয়েছেন, তাতে তিনি বলেছেন নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বর্তমানে নতুন আরেকটি নির্বাচন করার বাস্তব অবস্থা নেই। সেজন্য সরকার যেন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর শ্রদ্ধাশীল থাকে সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন অনুরোধ করেছেন। এই চিঠির মাধ্যমে ড. কামাল হোসেন কার্যত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেনের এই চিঠির প্রতিফলন দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরোষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে তারা বলেছেন এই নির্বাচনটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন বাতিল করে ভোটগ্রহণের কোন সুপারিশ বা পরামর্শ প্রদান করেনি। মির্জা আব্বাস মনে করছেন যে, ড. কামাল হোসেনকে ব্যবহার করে সরকার বিএনপিকে দুর্বল করছে। তার সঙ্গে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি এবং নীতি নির্ধারকের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। তাদের পরামর্শেই ড. কামাল হোসেন কাজ করছেন। মির্জা আব্বাস বৈঠকে অবিলম্বে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য প্রস্তাব দেন। তিনি মনে করেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেছে। মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরী হয় এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির অনেক নেতাই নিজেদের বাঁচানোর জন্য, মামলা প্রত্যাহার ও জেল থেকে বাঁচার জন্য এবং মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি মির্জা আব্বাসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মির্জা আব্বাস তাঁর ব্যংক রক্ষা এবং বিভিন্ন মামলা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তবে মির্জা আব্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যত মামলা আছে, তার অর্ধেকও আপনার বিরুদ্ধে নেই।’ এরকম উত্তেজনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যেটা করছি সবই সরকারের পক্ষে যাচ্ছে। যত আমরা বিভক্ত হবো এবং যত আমাদের মধ্যে অনৈক্য হবে ততই সরকার লাভবান হবে। এটা নিয়ে দ্রুত কি করণীয় সেটা তিনি নির্ধারণ করার জন্য সিনিয়র নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান এটাও বলেন যে, আমাদের অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের সংঘবদ্ধ হতে হবে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলের তৃনমূলদের বহিস্কারের যে আদেশ। তা তিনি পুন:বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। একই বৈঠকে আমির খসরু মাহমুদ বলেন, যে স্থায়ী কমিটি আছে তা দিয়ে বিএনপি বড় কোন আন্দোলন করতে পারবে না। এই বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের একাধিক নেতারা তারেকের বৈঠক নিয়েও পর্যালোচনা করেন। তারা মনে করেন, তারেকের এক একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারছে না। আন্দোলনও করতে পারছে না। ঐ বৈঠকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের দৈন্যদশা নিয়েও আলোচনা করা হয় এবং ছাত্রদলের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়।
একাধিক সূত্র বলছে, এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক হলেও কোন বিষয়েই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিএনপিতে বিভক্তি আরও দানা বাধবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তত পাঁচবার সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। একই সাথে বলা হয়েছিল যে, সারাদেশে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হচ্ছে না।