নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলটি ভেঙ্গেই যাচ্ছে। এই ভাঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার এবং বিএনপির নেতৃত্ব মুখোমুখি অবস্থানে দাড়িয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার চাইছে, যেকোন মূলে যেকোন শর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। শামীম ইস্কান্দার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলেছেন যে, খালেদা জিয়া বেঁচে থাকলে এবং খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বিএনপিতে ১০০ টা ফখরুল তৈরী করা সম্ভব। কিন্তু আরেকজন খালেদা জিয়া তৈরী করা সম্ভব নয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর জবাবে বলেছেন যে, রাজনীতি বিসর্জন দিয়ে মুচলেকা নিয়ে খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হন, তাহলে তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। তার আরেকটি মৃত্যু হবে। পাল্টাপাল্টি মুখোমুখি অবস্থানের কারণে, বেগম খালেদা জিয়ার পরিনতি শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটা অনিশ্চিত। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে, বিএনপি একটা নিশ্চিত ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার নির্দেশে খালেদা জিয়ার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দর সঙ্গে কথা বলেছেন। শামীম ইস্কান্দার চাইছেন, মুচলেকা কিংবা প্যারোল কিংবো যেভাবেই হোক খালেদা জিয়ার মুক্তি। একটা সমঝোতা করে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানো। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি শর্ত সাপেক্ষে প্যারোলে মুক্তি পান তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন সরকার সহজেই বলতে পারবে খালেদা জিয়া নিজেই অপরাধ স্বীকার করেছেন। কারণ বিএনপি নেতারা মনে করছেন, প্যারোল নিয়ে যদি মুক্তি নিতে হয়, তাহলে তাকে দোষ স্বীকার করতে হবে। রাষ্ট্রের কনুকম্পা চাইতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এটা বেগম খালেদা জিয়ার এত বছর রাজনীতির যে আদর্শ। সে আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
একাধিক সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়াও তার প্যারোল এবং জামিন নিয়ে দ্বৈত আচরণ করছেন। তিনি তার পরিবারের কাছে বলছেন, যেকোনভাবে তাকে মুক্ত করার জন্য। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পহেলা বৈশাখে যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তখন তিনি তাঁর কাছে বলেছেন, সরকারের চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না এবং কোনোরকম মুচলেকা দিয়ে তিনি মুক্তি চাবেন না। এখন মুচলেকা ইস্যুতেই বিএনপির বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শামীম ইস্কান্দার গতকাল এবং আজ বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন খালেদার মুক্তি এখন প্রধান বিষয়। খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হন তাহলে বিএনপিকে সংগঠিত করা যাবে। তিনি সুস্থ হলে বিএনপিকে আবার পুনর্গঠিত করতে পারবেন। খালেদা জিয়া যে পরিস্থিতিতে আছেন এই পরিস্থিতিতে থাকলে তাঁর জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনী লড়াই বা আন্দোলন করে কোনোকিছু করা সম্ভব না। শামীম ইস্কান্দার বিএনপির একাধিক নেতাকে এটাও বলেছেন যে, কৌশলগত কারণে মাঝে মাঝে পিছু হটতে হয় এবং হটানোই রাজনীতি।
এখন বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির নেতৃত্ব কার কাছে। দুই পক্ষই বলছেন যে, খালেদা জিয়ার নির্দেশমত তারা চলছেন। শামীম ইস্কান্দার বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া নিয়মিত তাঁকে বার্তা পাঠাচ্ছেন। প্যারোলের জন্য সরকারের সঙ্গে আপোষ করার কর্তৃত্ব তাকেই দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন যে, তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। দেখা করে তিনি খালেদা জিয়ার মনোভাব জেনেছেন। কাজেই শামীম ইস্কান্দারের কথায় বিএনপি চলতে পারে না। শামীম ইস্কান্দার বিএনপির কোনো নেতাও নন। এরকম পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবারের প্রভাব খর্ব করা হচ্ছে বলে শামীম ইস্কান্দার অভিযোগ করেছেন। মূলত শামীম ইস্কান্দার এবং মির্জা ফখরুল ইসলামের দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি যে ভাঙনের পথে যাচ্ছে তা বিএনপির ঘনিষ্ঠরা নিজেরাও স্বীকার করেছেন।
তবে বিএনপির একটি পক্ষ বলছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনও সংসদে যেতে চান। সংসদে যাওয়ার জন্য তিনি ফন্দী ফিকির খুঁজছেন। এজন্যই তিনি শামীম ইস্কান্দারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সংসদে যাওয়ার উপায় খুজছেন। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখা যাবে কারণ ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্যকে শপথ নিতে হবে। তা না হলে তাঁদের আসনগুলো শূন্য ঘোষিত হবে এবং সেগুলোতে উপ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।