নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪২ পিএম, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯
সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার জন্য দলীয় এমপিদের ফোন করে চাপ দিচ্ছেন লন্ডনে পলাতক থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান । বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ নেবার পর থেকে তারেক রহমান এক ধরনের কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছেন এমপিদের। অনেককে আবার অতীতের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি তারেক রহমান ফোন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাংসদ উকিল আবদুস সাত্তারকে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য তিনজন তারেক রহমানের কোনো ফোন পাননি বলে জানা গেছে। তারেকের এই ফোন করাকে হুমকি মনে করছেন অনেকেই । তারেক রহমান তাদের ভবিষ্যতে পরিনতির কথা স্বরন করিয়ে দিচ্ছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি ছয় সংসদ সদস্যদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল হাইকমান্ডের। কিন্তু দলীয় ওই সিদ্ধান্ত না মেনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান গত ২৫ এপ্রিল এমপি হিসেবে শপথ নেন।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) উকিল আবদুস সাত্তার প্রচ্ছন্ন হুমকি পেয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শপথ না নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের মধ্যেই থাকব।’
শপথ না নিতে লন্ডন থেকে তারেক রহমান তাকে ফোন করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ফোন দিয়েছিলেন। তিনি শপথ না নেওয়ার কথা বলেছেন।’
অন্যদিকে, বগুড়া-৪ আসনে বিজয়ী বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন জানান, তারেক রহমান তাকে ফোন করেননি। একই সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি শপথ নেবেন না বলেও জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম তারেক রহমানের ফোন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তে আছি। শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। দেখা যাক এখনো কিছু সময় আছে, আল্লাহ ভরসা।’
এদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে শপথ নেবে না এটা দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে সব এমপিই শপথ নেয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে। তারেকের হুমকির পর পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন