নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ জুন, ২০১৯
১১ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারান্তরীণ দিবস। ২০০৮ সালের এইদিনে ১০ মাস ২৫ দিন কারাভোগের পর তিনি মুক্ত হয়েছিলেন। সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ওয়ান ইলেভেন সরকার মাইনাস ফর্মূলা বাস্তবায়ন করার জন্য ১৬ জুলাই ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে তার সূধাসদনের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করেন। তার বিরুদ্ধে কিছু সাজানোর মামলা দায়ের করে তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের আগে তাকে দেশত্যাগের জন্যও প্ররোচিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে কারাগারেই যেতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগে সবসময়, বিশেষ করে দুর্যোগের সময় দেখা যায় যে শীর্ষ নেতারা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে না। তৃনমূল যৌক্তিক ভূমিকা পালন করে। ওয়ান ইলেভেনও তার ব্যতিক্রম নয়। ওয়ান ইলেভেনে দলের শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার কটুচালে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তি জোড়ালো ভূমিকা পালন করেছেন তার মুক্তির উদ্দেশ্যে। যাদের জোরালো ভূমিকার জণ্য শেখ হাসিনার বেশিদিন কারান্তরীন থাকা সম্ভব হয়নি এবং তাদের ভূমিকার জন্যই দেশে বিদেশে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য গণজাগরণ তৈরী হয়েছিল। আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনা নি:সন্দেহে তাদের কাছে ঋণী। আসুন দেখে নেয়া যাক শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য কারা সেদিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন।
আইনগত
১৬ জুলাই বৃষ্টিমুখর ভোররাতে শেখ হাসিনার সুধাসদন বাসভবন থেকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন শেখ হাসিনা প্রথম যে কয়েকজনকে কল দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। আওয়ামী লীগ সভাপতির টেলিফোন পেয়ে তিনি সরাসরি চলে এসেছিলেন সুধাসদন। শেখ হাসিনার গাড়ির পেছনে তিনি আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এই কেসের আইনী লড়াইয়ে তিনিই ছিলেন প্রথম আইনজীবি। সাহারা খাতুন পরে একটি আইনজীবি প্যানেল তৈরী করেছিলেন। যাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ। এছাড়াও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ্যডভোকেট ফজলে নূর তাপস শেখ হাসিনার আইনী দিকগুলো তদারকি করেছিলেন। এদের সঙ্গে পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিলেন আরো অনেক আইনজীবি। এই আইনজীবি প্যানেল শেখ হাসিনার পক্ষে জনমতকে প্রবল করেছিল। তারা আদালতকে এটা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে এই মামলাগুলো ছিল উদ্দেশ্যমূলক, শেখ হাসিনাকে হয়রানি করার জন্য এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত।
রাজনৈতিক
এসময় আওয়ামী লীগ বিভক্ত হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অটুট রাখা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের কারণে আওয়ামী লীগ সেই সময়ে ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছিল এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল বিভক্ত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যারা শেখ হাসিনার পক্ষে সোচ্চার থেকে তৃণমূলের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল তাদের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কথা। শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত তার অভিভাবকত্বেই আওয়ামী লীগ একটা নিশ্চিত ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও সেসময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে মতিয়া চৌধুরীও আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
চিকিৎসা
শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তির বিষয়টি সর্বপ্রথম আলোচিত হয়েছিল চিকিৎসকদের মধ্য দিয়ে। চিকিৎসকরাই প্রথম বলেছিলেন শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি। এই উচ্চারণটি করে যিনি অনন্য এবং শেখ হাসিনার মুক্তির পথের সূচনা করেছিলেন যিনি, তিনি হলেন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনিই প্রথম কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, তিনি একাই তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার সামনে প্রতিকী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসকদেরকেও সাহস যোগান এবং তাদেরকে শেখ হাসিনার চিকিৎসার করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে যেসব চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ডা. শাহ আলম, ডা. শাহলা খাতুন এবং ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর কারণেই তারা শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে স্বারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
সমঝোতা
শেখ হাসিনার মুক্তিটি কোনো আন্দোলনের ফসল নয় বরং সমঝোতার ফসল। এই সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেনাসমর্থিত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলের সঙ্গে দেন-দরবার করে তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মূল নেতারা অসমর্থ হলেও শেখ হাসিনার কিছু প্রিয়ভাজন ব্যক্তি সফল হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং তার পুত্র তানভীর ইমাম। তারা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন আপসরফার বৈঠক করেছিলেন। এছাড়া সকলের অজান্তে সেনাসমর্থিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় ভূমিকা রেখেছিলেন ড. গওহর রিজভী। সেসময় গওহর রিজভীর সুবিধা ছিল যে তিনি তেমন আলোচিত ছিলেন না বলে তাকে কেউ চিনতো না, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবার অগোচরে।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ
শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য কেবল জাতীয়ভাবে প্রক্রিয়া যথেষ্ট ছিল না, আন্তর্জাতিক সম্মতিরও প্রয়োজন ছিল। এবং এই আন্তর্জাতিক সম্মতির ক্ষেত্রে প্রায় একক ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রণব মূখার্জি। মূলত প্রণব মূখার্জির উদ্যোগের কারণেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারের ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি হয়েছিল শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য। এক্ষেত্রে প্রণব মূখার্জিকে সহায়তা করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন।
এই বিভিন্নমূখী প্রক্রিয়ার কারণেই ১১ জুন শেখ হাসিনা মুক্তিলাভ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বাইরে শেখ হাসিনার একটা একান্ত বিশ্বস্ত অসংখ্য সহযাত্রী রয়েছে যাদের জন্য শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং ২০০৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার নবযাত্রা শুরু করতে পেরেছিলেন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।