নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আওয়ামী লীগ এবং তার ভ্রাতৃপ্রতীম অঙ্গ সংগঠনসমূহের ৫ শতাধিক ব্যক্তির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা এবং আইনপ্রযোগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগের প্রমাণাদি- দলিলপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য যে, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শুন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী বা চাদাবাজদের জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না। তার এই ঘোষণার পরও গত জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজেও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্ত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালিত হয়নি। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী এখন নিজেই অ্যাকশনে নেমেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছেন, যে ৫ শতাধিক ব্যক্তির নামে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৫০ এর বেশি নয়। যুবলীগের ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মীর নাম এই তালিকায় রয়েছে। অন্যান্য সংগঠনেরও ৫০ জন ব্যক্তির নাম রয়েছে এই তালিকায়। বাকি সাড়ে তিনশো নেতাকর্মী হলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা, স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবৈধ তৎপরতার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান, মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে থানায় বিভিন্ন ধরনের মামলাও রয়েছে। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে তারা এসব মামলা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছে। টেন্ডারবাজি, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠিত দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, নিপীড়নের ব্যাপারেও অভিযোগ রয়েছে অনেক নেতাকর্মীদের ব্যাপারে।
যেসব অভিযোগ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন, সেসব অভিযোগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের শতকরা ৮০ ভাগই ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। এদের অধিকাংশই বিএনপি জামাত থেকে যোগদান করেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, শুধু বিএনপি জামাত নয় ফ্রিডম পার্টি থেকেও অনেকে যোগ দিয়েছেন বলে তথ্য প্রমাণ দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি নিজেই। তবে এই সিদ্ধান্ত যে কঠোর হবে তা তিনি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত করেছেন। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ভেতরে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যারা সন্ত্রাস করছে, চাঁদাবাজি করছে তাঁদেরকে দলে দরকার নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি গতকাল এবং আজ দলের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়ে দিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউন্সিলের আগেই আওয়ামী লীগের একটি ক্লিন ইমেজ তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তত পাঁচবার সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। একই সাথে বলা হয়েছিল যে, সারাদেশে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হচ্ছে না।