নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৯
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবার আওয়ামী লীগেরকাউন্সিলে নানা দিকে চমক আসছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, এবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বেশ কিছু চমক আসবে।
তবে একটি সূত্র বলছে, এবার কাউন্সিলে সবচেয়ে পরিবর্তন হবে দলের প্রেসিডিয়ামে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে দলের সভাপতির পরই প্রেসিডিয়ামের স্থান। প্রেসিডিয়াম হলো দলের মূল চালিকা শক্তিও নীতিনির্ধারক সংস্থা। ১৫ সদস্যের প্রেসিডিয়ামে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর পর বর্তমানে ১৪ সদস্যের প্রেসিডিয়াম রয়েছে। এই প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১০জনই বাদ যেতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। তবে বার্ধক্যজনিত কারণেই তারা বাদ পড়ছেন বলে জানাচ্ছে সূত্রটি। এ সূত্রগুলো বলছে দলকে আরো গতিশীল এবং তারুণ নেতৃত্বকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য প্রেসিডিয়াম থেকে প্রবীনদেরকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রেসিডিয়ামের যে সব সদস্য বাদ পড়তে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বেগম সাজেদা চৌধুরী। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত। এছাড়াও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্চিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান এবং আবদুল মতিন খসরুরা রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলের প্রোসিডিয়ামই হওয়া উচিত দলীয় কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ সদস্যদেরই দলীয় কর্মকাণ্ডে কার্যক্রম নেই। শুধু দলের কার্যনির্বাহী সভায় প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা উপস্থিত হন। দলীয় কর্মকাণ্ডে বা সাংগঠনিক বিষয়ে তাদের ভূমিকা লক্ষনীয় নয়। শুধু আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়ামই ছিল মূল শক্তি। যেসময় তোফায়েল আহম্মেদ,আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাকের মতো ব্যক্তিরা প্রেসিডিয়ামে ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম অনেক শক্তিশালী এবং সক্রিয় ছিল।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামকে আবারো শক্তিশালী করতে চায় কারণ সমস্ত চাপ দলের সাধারণ সম্পাদকের উপর না দিয়ে প্রেসিডিয়ামের সদস্যদের মাধ্যমে দল পরিচালনা করার যে নীতি সেই নীতিতে ফিরে যেতে চায় আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে তরুণ এবং দলের কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রেসিডিয়ামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। প্রেসিডিয়ামের অন্তর্ভুক্তির জন্য যাদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে মাহবুব আলম হানিফ। যিনি ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তার দিপুমনিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত বদরউদ্দিন আহমেদ কামরানসহ মাঠ পর্যায়ে প্রবীণ এবং ভালো সংগঠকদেরকে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, প্রেসিডিয়াম এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করেই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তিনি দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর চাপ কমাতে চান এবং প্রেসিডিয়ামকে কার্যকর করতে চান।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন একটা পরিবর্তনের মাঝপথে রয়েছে। কারণ আগামী দিনের নেতৃত্বে তরুণদেরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য, নেতৃত্বের যে পুনর্বিন্যাস এবং নেতৃত্বের যে পরিবর্তন সেই পরিবর্তনে ধারার সূচনা করতে হবে এই কাউন্সিলের মধ্যমে। সেক্ষেত্রে দলে যারা তরুণ এবং সম্ভাবনাময় আর যারা দলের জন্য শ্রম দিতে পারবে তাদেরকেই প্রেসিডিয়ামে নিয়ে আসা হবে।
আওয়ামী লীগের ঐ নেতা বলেছেন, শুধু প্রেসিডিয়াম নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। নবীন এবং প্রবীণদের মিশ্রণে একটি নতুন কমিটি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রেসিডিয়ামের ক্ষেত্রে দেখা হবে দলের জন্য কাজ করা, দলের জন্য নেতৃত্ব দেওয়া এবং সারাদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা সম্পর্কে যারা অবহিত তেমনি কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষেত্রে দেওয়া হবে অপেক্ষাকৃত তরুণ পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি এবং কোনো অভিযোগ নেই তাদেরকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন এখনো সম্মলনের জন্য একমাস সময় বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলবেন এবং শেষ পর্যন্ত দলের জন্য যেটা মঙ্গলময় এবং ভালো হয় সে ব্যাপারে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।