নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
শাজাহান খানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এই কাউন্সিল অধিবেশনে নেতৃত্বের লড়াই জমে উঠেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত সবগুলো পদই চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তারপরেও দলে প্রভাব বিস্তারের জন্য বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যেই লড়াই এবং প্রতিযোগিতা চলছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা চলছে মাদারীপুরের দুই প্রভাবশালী নেতা শাজাহান খান এবং বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে।
শাজাহান খান সরকারের গত মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। অন্যদিকে বাহাউদ্দিন নাছিম দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও এবার দলের মনোনয়ন পাননি। কিন্তু মনোনয়ন না পেলেও দলের মধ্যে তার প্রভাব অনেক বেশি। এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি শাজাহান খানকে সমূলে উৎপাটন করতে চাইছেন। শাজাহান খানের সাথে তার বিরোধ অবশ্য গোপন নয়। দলের সভায় তিনি প্রকাশ্যেই শাজাহান খানকে দানব হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের যে চাপসৃষ্টির ধর্মঘট সেখানে শাজাহান খানের ভূমিকা ছিল। এটাকে পুঁজি করেই বাহাউদ্দিন নাছিম চাইছেন যে আগামী কাউন্সিলে শাজাহান খান যেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বা জেলা কমিটি কোথাও না থাকেন। তাকে সমূলে উৎপাটন করাই বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রধান লক্ষ্য।
অন্যদিকে শাজাহান খানও বসে নেই। পরিবহন ও গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে পুঁজি করে ক্ষমতাসীন বলয়ে তিনি একটি শক্তির ভারসাম্য তৈরি করেছেন। ক্ষমতাসীনদের অনেকেই তাকে সমীহ করেন। অনেকেই মনে করেন যে, বাহাউদ্দিন নাছিমের মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে শাজাহান খানের একটা ভূমিকা ছিল। এখন বাহাউদ্দিন নাছিমকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোণঠাসা করার জন্য শাজাহান খান কাজ করছেন। এই দুই নেতার লড়াইয়ে কে জয়ী হবেন তা বুঝতে গেলে আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন