নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়েছে ভারতে। এই নাগরিকত্ব বিলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে ভাবা হচ্ছে বাংলাদেশকে। এরফলে ভারত থেকে একটি বড় অংশ মুসলিম পুশ ইন করা হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল আশংকা করছে। ভারতে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেই ১১ লাখ রোহিঙ্গার চাপে জর্জরিত। এরপর ভারত যদি বাংলাদেশে পুশ ইন শুরু করে তাহলে বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্ক গত দশ বছরে যে উষ্ণতায় উঠেছিল সেখান থেকে নামতে সময় লাগবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা এগারো বছর শাসনামলে প্রথম ভারত নিয়ে একটা অস্বস্তি এবং উভয় সংকটে পড়েছে।
উভয় সংকট এ কারণে যে, যদি বাংলাদেশ ভারতের এই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ করে তাহলে সেটা হবে গত দশ বছরে বাংলাদেশ- ভারতের যে বৈদেশিক নীতি তার পরিপন্থি। এই দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে অটুট রয়েছে। নাগরিকত্ব বিল পাশের তৎপরতা যখনই শুরু হয়েছে তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা ছিল এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এমনকি আসামে যখন নাগরিকপঞ্জী ঘোষণা করা হয় তখনও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এরফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। কিন্তু যতই সময় গড়াচ্ছে ততই নাগরিকত্ব বিলের নেতিবাচক দিক বাংলাদেশের দিকে চলে আসছে।
কাজেই এর ফলে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বা আসামের নাগরিক পঞ্জি নিয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে বরং ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়ে সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কারণ এই নাগরিকত্ব বিল এবং আসামের নাগরিক পঞ্জি বাংলাদেশে একটি ভারত বিরোধী ভাবনা নাগরিকদের মধ্যে তৈরি করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে ভারত বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি আছে তারা এটিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। আর বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার এর প্রতিবাদ না করার ফলে সেই পুরনো খেলা শুরু হয়েছে। অতীতেও আওয়ামী লীগকে ভারতীয় অনুগ্রহপুষ্ট দল বলা হত এবং ভারতের আজ্ঞাবহ দল বলা হত।
গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যেভাবে সমুদ্রসীমা, ছিটমহলসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষীয় ইস্যু নিষ্পত্তি করেছে তাতে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা বাংলাদেশকে দিয়েছে। কিন্তু এখন নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নিরব থাকায় আওয়ামী লীগকে ভারতের ব্রাকেট বন্দী করার যে রাজনীতি অপকৌশল সেই অপকৌশল আবার চাঙ্গা হয়েছে।
এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষরা বিশেষ করে ভারত বিরোধী অপশক্তিরা এটা প্রচার করতে পারছে যে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে আওয়ামী লীগ উপযুক্ত না। ফলে দেশের মধ্যে আওয়ামী লীগের বাইরে যে আওয়ামী লীগের জন সমর্থন বা লোকজন আছে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, নাগরিকত্ব বিল পাশ হবার ফলে, ভারতের একটা বড় সংখ্যার মুসলমানরা ভারতের নাগরিকত্ব হারাবে এবং এই নাগরিকদেরকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হবে এমন ইঙ্গিত বিজিপির প্রভাবশালী নেতারা দিচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও টুকটাক যে পুশ ইন করা হচ্ছে না এমন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামীলীগ কি করবে? গত ১১ বছরে ভারতের সাথে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক অটুট রাখার স্বার্থে মুখ বুজে সহ্য করবে? নাকি দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ভারতের এই পুশ ইন এর ব্যাপারে প্রতিবাদ করবে? অবশ্য আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলেছেন যে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেনি এবং বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয় তাহলে বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনা এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু বিজিপি এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যেমন যুদ্ধাংদেহী মনোভাব তৈরি করেছে তাতে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি নতুন করে দানা বাধার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশের যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তা বিনষ্টের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার অন্যদিকে আওয়ামীলীগ দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য কতটা সক্ষম- সেই চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় যে উভয় সংকট মোকাবেলার জন্য আওয়ামীলীগ কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে।
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।