নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ০৪ এপ্রিল, ২০২০
কার্ল মাক্স বলেছিলেন, পৃথিবীতে সমস্ত সম্পর্কের ভিত্তি হলো অর্থনীতি, মোর্দা কথা অর্থ। কার্ল মাক্সের দর্শন আজ পতিত হয়ে গেছে, কমিউনিস্ট দেশ বলে আর কোন দেশ নেই। সব দেশই পুঁজিবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেদের সমর্পণ করছে। কিন্তু কার্ল মার্ক্সের দর্শন যে কালজয়ী তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর পুত্রের যে দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিন ধরে, সেই দ্বন্দ্ব মিটমাট হয়ে গেছে। বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সম্পদের ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে যেন তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য না হয় এবং এই অবৈধ আর গোপন অর্থের কথা যেন সকলে না জানে সেটা গোপন করতেই মা-ছেলে আপোস করেছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যান। এরপর দীর্ঘ ২৫ মাস তিনি কারাবরণ করেছেন। এই ২৫ মাসে বিএনপি তাঁর কারামুক্তির জন্য তেমন কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারেননি। পারেননি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রক্রিয়ার জন্য আইনি লড়াই চালু রাখতে, এমনকি ব্যর্থ হয়েছেন মুক্তি নিয়ে সরকারের সাথে দেনদরবার করতেও। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হয়েছেন তারেক জিয়া। নিন্দুকেরা বলেন যে, তারেক জিয়ার অনাগ্রহের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে তারেক জিয়ার একাধিক লাভ ছিল।
প্রথম লাভ ছিল, বিএনপির পুরো কর্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে তারেক জিয়া গ্রহণ করতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় লাভ ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে দলকে সংগঠিত করা এবং জনগণের আবেগ নিয়ে নিজেকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি মনোব্যাঞ্জনা ছিল তারেকের।
আর তৃতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন দেশে যে গোপন অর্থ এবং সম্পদ রয়েছে, সেটার মালিকানা গ্রহণ করা।
কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের উদ্যোগের কারণে, বিশেষ করে তাঁর ভাই শামীম এস্কান্দার এবং বোন সেলিনা ইসলামের উদ্যোগে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। মুক্ত হওয়ার পরপর বেগম খালেদা জিয়া তারেক জিয়ার সাথে কথা বলেননি। কিন্তু তিনদিন পর ছেলের প্রতি মায়ের মান ভেঙ্গেছে এবং মান ভাঙানোর কাজ করেছেন ড. জোবায়দা। ড. জোবায়দাকে বেগম খালেদা জিয়া খুবই পছন্দ করেনে এবং তিনি তারেকের সঙ্গে বেগম জিয়ার যে মনোমালিন্য, সেই মনোমালিন্য দূর করার কাজ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়াও চিন্তা করে দেখেছেন যে দেশে-বিদেশে তাঁর যে অবৈধ সম্পদ রয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে তাঁর যে সম্পত্তি রয়েছে, সেই সম্পত্তিগুলোর বিভিন্ন ব্যাংকে এমনভাবে গচ্ছিত রাখা হয়েছে যে তারেক জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া একে অপরের সাথে আলাদা হয়ে সেই সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে না। কারণ এই সম্পত্তিগুলো এমন জিম্মায় রয়েছে যারা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া- দুইজন অভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে এই অর্থগুলোর হেফাজতকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই বেনামি সম্পত্তিগুলো ফসকে যাবে যদি দুজন আলাদা হন। তাছাড়া দুজন যদি আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেন তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষতিই বেশি হবে। এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কুক্ষিগত করতে বেশি সময় লাগবে না তারেক জিয়ার। কারণ আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সাথে তারেকের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একারণে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর পুত্রের সাথে আপোস করতে চেয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবার পর গত ১০ দিনে বুঝেছেন যে, বিএনপিতে তাঁর জনপ্রিয়তা আগের মতোই অটুট রয়েছে। কাজেই তিনি যদি ধীরে ধীরে পুনরায় বিএনপিতে কর্তৃত্ব করতে পারেন এবং বিদেশে রক্ষিত সম্পদগুলো ভাগবাটোয়ারা করতে পারেন তারপরে তিনি পুত্রের সাথে বোঝাপড়া করতে পারবেন। কিন্তু এখন যদি তিনি পুত্রের সাথে বোঝপোড়া করতে যান, তাহলে শত্রুর লাভবান অর্থাৎ আওয়ামী লীগ লাভবান হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তিনি নিজেই। এজন্য নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তারেকের সাথে আবার মিলমিশ করে নিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মা-ছেলের এই মিলনের ফলে রাজনীতিতে নতুন কি অশনি সংকেত তৈরি হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।