নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৯ মে, ২০২০
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় না থেকে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন উজ্জীবিত। ২০১৩ তে ৫ টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের পর বিএনপিতে যে ভাটার টান শুরু হয়েছিল এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি যে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছিল সেই অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে উত্তরণ হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে এখন আত্মবিশ্বাসী ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের সমালোচনায় আক্রমানত্নক ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সরকার যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ছুটি সংক্রান্ত, তার তীব্র সমালোচনা করতে বিএনপি ৩ ঘন্টা সময়ও নেয়নি। অন্য সময় দেখা যেত যে, বিএনপির এ ধরণের সমালোচনা করতে এক ধরণের আড়ষ্টতা ছিল।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বিএনপি মনে করছে করোনা নিয়ে সরকার যে কাজগুলো করছে তা ভুল এবং এর ফলে জনঅনাস্থা তৈরী হচ্ছে। এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দলটি মনে করছে অন্য কোন ইস্যু দরকার নেই। করোনা নিয়েই তারা সরকারকে কুপোকাত করতে চায়।
উল্লেখ্য যে, ২০০৬ এর পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক ইস্যুগুলো ছিল বিভ্রান্তিকর। কোন ইস্যুতেই তারা জনগনের পাশে দাড়াতে পারেনি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত তাদের অস্পষ্ট অবস্থান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করা ও দুর্নীতির শিরোমনি , বাংলাদেশে দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়ার পক্ষ সমর্থন এবং খালেদা- তারেক জিয়াকে নিয়েই তাদের রাজনীতি ছিল। অর্থাৎ পরিবারতন্ত্রের মধ্যেই তাদের রাজনীতি বদ্ধ হয়ে ছিল। এই অবস্থায় জনগনের সঙ্গে সম্পর্কহীন অবস্থায় ক্রমশ চলে যাচ্ছিল দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সময় শুধুমাত্র তত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু এবং খালেদা-তারেক জিয়ার দুর্নীতির মামলা ইত্যাদিতে বন্দি থাকার ফলে জনগন বিএনপির ওপর বিরক্ত হতে থাকে। এই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম একাত্ন হলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়।
সবশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা আরো প্রকটভাবে ধরা পরে। বিএনপি এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। শুধু আন্দোলন নয়, আইনগতভাবেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি দৃশ্যত কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। আর এরকম অবস্থায় যখন দলটি অস্তিত্ববিহীন এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তার যোগ্যতা হারাতে বসেছিল ঠিক সেই সময় করোনা যেন বিএনপির জন্য একটি নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে। করোনা সঙ্কটের শুরুতেই খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা নিয়ে সরকার যে পথে এগুচ্ছে সেই পথ ভুল পথ। এরফলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে এবং জনঅসন্তোষ তৈরী হচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে করোনার কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তা নিয়ে সরকার খুব বড় ধরণের সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যে পড়েছে বলেই মনে করে। তারা মনে করে, সরকার ইতিমধ্যে ৫ ধরণের সঙ্কটে পড়েছে।
প্রথমত, করোনা বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি হচ্ছে। এরফলে জনস্বাস্থ্যের হুমকি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ এবং অস্বস্তি বাড়ছে।
দ্বিতীয়ত, করোনার কারণে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরী হয়েছে সেই সঙ্কটের কারণে দারিদ্রতা, বেকারত্ব বাড়বে। এরফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরী হবে।
তৃতীয়ত, করোনার কারণে যে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তারফলে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ সরকারের ওপর আস্থা হারাবে।
চতুর্থত, তারা মনে করছে করোনা মোকাবিলায় তারা যে আমলাতান্ত্রিক পথে হাটছে তার ফলে রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দর মধ্যে হতাশা বাড়বে যা সরকারকে দুর্বল করে দেবে।
সর্বশেষ তারা মনে করছে করোনা সঙ্কট দীর্ঘ মেয়াদি হলে সরকার এটা সামাল দিতে পারবে না। এরফলে একটি গণঅসন্তোষ তৈরী হবে।
আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দলটি মনে করছে করোনা ইস্যুতে যদি জনগনের আকঙ্খার প্রতিধ্বনি তারা করতে পারে তাহলেই রাজনৈতিক মাঠে বাজিমাত করতে পারবে। আর এ কারণেই বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, তারেক জিয়ার দেশে ফেরা, নেতাদের জেল জুলুম, তত্বাবধায়ক সরকারের মতো বিএনপির প্রতিদিনকার ইস্যুকে বাক্সবন্দি করে রেখেছে। তারা গত দুই মাসে করোনার বাইরে কোন বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে না। এই পথেই তারা হাটতে চান এবং তারা মনে করছে যে, করোনা সঙ্কট ক্রমশ গভীর হবে এবং এই সঙ্কট মোকাবিলা করা শেষ পর্যন্ত সরকারের জন্য দুরহ হয়ে যাবে। এরকম পরিস্থিতিতেই তারা রাজনৈতিক মাঠে নামতে চায় এবং সরকারকে কোনঠাসা করে ফেলতে চায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, করোনা নিয়ে বিএনপি সমালোচনা করছে কিন্তু একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকল্প পথ বা পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র সমালোচনা করে সরকারকে কুপোকাত করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায় অবাস্তব।
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।