নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ৩০ মে, ২০২০
বাংলাদেশে যখন করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তখন আমাদের বিত্তবানরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। এতদিন করোনার কারণে বিদেশে যাওয়া বন্ধ ছিল, কিন্তু টাকা থাকলে সবই সম্ভব। বড়লোকরা চার্টার্ড করা বিমানে করে এখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে চারজন বড়লোকের দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে। আরো কয়েকজন পাইপলাইনে আছেন। খুব শীঘ্রই তারাও চলে যাবেন।
বাংলাদেশে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয় তখন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এবং এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর। এজন্য তাদের দেশের নাগরিকদের তারা নিয়ে যেতে চাইছে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কয়েকটি উন্নত দেশ। তারা তখনই আশঙ্কা করেছিল যে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এত দ্রুত সারবার নয় এবং পরিস্থিতির আস্তে আস্তে অবনতি হবে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, সে সময় অন্যান্য দেশগুলোতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল এজন্য বাংলাদেশের বড়লোকরা পালাতে পারেনি। এই সমস্ত বড়লোকরা কখনোই দেশে চিকিৎসা করান না, তাদের সর্দি-হাঁচি-কাশি-জ্বর হলেও তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করান। করোনা তাদেরকে এক মহা সঙ্কটে ফেলেছিল এবং তাদেরকে দেশেই থাকতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে করোনায় ধনীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং বেশ কয়েকজন ধনাঢ্য বড়লোক শুধু আক্রান্তই হননি, মৃত্যুবরণও করেছেন। এই বাস্তবতায় বড়লোকরা পথ খুঁজছিল এবং ইতিমধ্যে তারা পথ খুঁজে পেয়েছেন।
মোর্শেদ খান সস্ত্রীক চার্টার্ড করা বিমানে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। অথচ মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা ছিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশন তার দেশ ত্যাগের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি কিভাবে দেশের বাইরে গেলেন সে এক বড় প্রশ্ন। টাকা থাকলে কি না হয়!
মোর্শেদ খান ছাড়াও বিদেশে গিয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান। সোহেল এফ রহমানও চার্টার্ড করা বিমানে সস্ত্রীক যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। তার দেশত্যাগের সাথে মোর্শেদ খানের দেশত্যাগের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তাও দেখার বিষয়। কারণ তারা দুইজনেই আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ।
অবশ্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, তারা দুই জন আলাদা আলাদা বিমানে করে চলে গেছেন। মোর্শেদ খান এবং সোহেল এফ রহমান যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে অন্যান্য বড়লোকরাও এখন দেশত্যাগের উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছেন। তারা কোন দেশে কিভাবে নিরাপদে যেতে পারেন এবং কোন দেশের অবস্থা কতটুকু ভালো তা দেখছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অনেকগুলো দেশই এখন করোনা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরেছে। যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো এবং তারা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসছে। নিউজিল্যান্ড করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। বাংলাদেশের বড়লোকদের টার্গেট হলো এই সমস্ত দেশগুলো।
এছাড়াও কয়েকজন ধনী ব্যক্তি আশেপাশের দেশগুলোতেও যাচ্ছেন, যেখানে করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আছে। সিকদার গ্রুপের দুই ভাই রন হক সিকদার এবং দিপু হক সিকদার ব্যক্তিগত জেট বিমানে ঢাকা ছেড়ে ব্যাংকক গিয়েছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। একটি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী ছিলেন তারা।
বাংলাদেশের বড়লোকরা করোনা নিয়ে যে উদ্বেগে ছিল যে, করোনা হলে কোথায় চিকিৎসা পাবেন, তাদের কী হবে- সেই উদ্বেগ এখন কাটতে শুরু করেছে। এখন বড়লোকরা যেকোনভাবে, যত টাকাই লাগে বিদেশে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এখন পর্যন্ত খবর পাওয়া গেছে যে, অন্তত ৮ থেকে ১০টি বড় বড় শিল্প গ্রুপের মালিকরা বিদেশে যাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন এবং চার্টার্ড বিমানসহ নানারকম পদ্ধতিতে কত দ্রুত দেশত্যাগ করা যায় সেই উপায় খুঁজছেন। এভাবে বাংলাদেশে যখন বড়লোকরা দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন, তখন করোনার কারণে যে স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব ছিল, সেই গুরুত্বটুকু কমে যাবে। কারণ বড়লোকরাই যদি দেশে না থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষ মরলেই কি বা বাঁচলেই কি?
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তত পাঁচবার সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। একই সাথে বলা হয়েছিল যে, সারাদেশে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হচ্ছে না।