নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ পিএম, ১৫ জুলাই, ২০২০
১৬ জুলাই ২০০৭ সাল, ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার বিরাজনীতিকরণকে পোক্ত করতে মাইনাস ফর্মূলার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন। মিথ্যা মামলায় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারটা ছিলো একটা অজুহাত মাত্র। এর মূল লক্ষ্য ছিলো বিরাজনীতিকরণ এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যেন দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাষন করতে পারে তারই একটা নীরব আয়োজন। কারণ শেখ হাসিনা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। ওয়ান ইলেভেন সরকার আসার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি দ্রুত নির্বাচন চান এবং জনগনের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের চান। আর এ কারণে দলের ভিতরে এবং বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ঘরের বাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার জন্য শেষ বিচারে একটা আশীর্বাদ হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের পর শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নানামুখীভাবে লাভবান হয়েছে।
প্রথমত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে তিনি গণতন্ত্রের জন্য নির্বিক সৈনিক। কারণ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পরে শেখ হাসিনা যখন দেশে আসেন তখন থেকেই তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রাম করছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ২০০৭ সালে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে উঠেন। দেশের মানুষ বুঝতে পারে, গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্যই তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই গ্রেপ্তারের পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ইমেজ অনেক বেড়ে যায়। তিনি আন্তর্জাতিক আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন। কারণ গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য একটি অনির্বাচিত সেনা সমর্থনের সরকার যখন তাকে গ্রেপ্তার করে তখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, শেখ হাসিনা জনগনের অধিকারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। গণতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কারাভোগ করতে হচ্ছে তাকে। এর আগেও সেনাসমর্থিত সরকার তাকে বিদেশে পাঠানো, দেশে প্রবেশ করতে না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছিল যে শেখ হাসিনা এবং গণতন্ত্র সমর্থক। অগণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বাধা হলো শেখ হাসিনা। যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি গণতন্ত্রের সৈনিক এবং জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
তৃতীয়ত, এরফলে দলে তার অবস্থান সংহত হয়। দলে তিনি একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ওয়ান ইলেভেনে মাইনাস ফর্মূলা যে শুধুমাত্র সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার করেছিল তা নয়। এর পেছনে ছিলো দেশের সুশীল সমাজ। আওয়ামী লীগের একটা অংশও যারা দলের হেভিওয়েট নেতা হিসেবে পরিচিত তারাও এই মাইনাস ফর্মূলাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই সময় আওয়ামী লীগের চার নেতা পৃথক পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাইনাস ফর্মূলার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র এবং সভাপতি পদে পরিবর্তনের পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলের আপামর কর্মীরা এই চার নেতার সংস্কার প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিলো আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের একক অবিসংবেদিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার যে কোন বিকল্প নেই এবং শেখ হাসিনা ছাড়া যে আওয়ামী লীগ কি সেটা এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল। তৃণমূলের আবেগ ভালোবাসা এবং সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এর মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের নবযাত্রা হয়েছিল।
এখন শেখ হাসিনা যে সারাদেশে একক জনপ্রিয় নেতা এবং তার যেমন কোন বিকল্প নেই। তাকে চ্যালেঞ্জ বা তার কর্তৃত্বকে বাধাগ্রস্থ করার মতো আওয়ামী লীগে কেউ নেই। এটা সম্ভব হয়েছে ওয়ান ইলেভেনে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পূর্ণতা দিয়েছে। তাকে করেছে অবিসংবেদিত নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।