নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭ পিএম, ২৮ অক্টোবর, ২০২০
হাজী সেলিম নিজেই লালবাগ এলাকায় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিতে তার উত্থানই সন্ত্রাসের মাধ্যমে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বুড়িগঙ্গা দখল ইত্যাদি তার নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। মানুষের সাথে জবরদস্তি করা থেকে শুরু করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলও দখলের অভিযোগও রয়েছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। এলাকার মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো বা জিম্মি করে রাখাই ছিল তার রাজনৈতিক কৌশল। আর এই কৌশলের কারণেই প্রথমে ওয়ার্ড কমিশনার এবং পরে ‘৯৬ সালে এমপি হয় হাজী সেলিম।
হাজী সেলিমের দুই পুত্র। দু’জনের মধ্যে বড় ছেলেকে নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু ছোট ছেলেটি শুরু থেকে ছিল দুর্বিনীত, সন্ত্রাসী এবং অবাধ্য হয়ে উঠে। লালবাগের একাধিক ব্যক্তি জানায়, ইরফান ছোটবেলা থেকেই বখে যায় এবং নানা রকম অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে। ইরফানের সঙ্গে এক সময় চলাফেরা ছিল এই একজন বলেন,‘বখে যাওয়ার কারণে ইরফান শিক্ষা জীবনও শেষ করতে পারেনি। বিবিএ ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি’। মহল্লার স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইরফানের এমন দুর্বিনীত হয়ে উঠার কারণেই হাজী সেলিম তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসাথে রাজনীতিতেও তাকে আনতে চেয়েছিলেন।
হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠরা বলেন,‘শেষ দিকে এসে হাজী সেলিমের সাথেও ইরফানের দূরত্ব তৈরি হয়। এটাকে ঠিক দূরত্ব বললেও ভুল বলা হবে। এক রকমের দ্বন্দ্বই বলা চলে’। তারা জানায়, বিভিন্ন বিষয়ে হাজী সেলিমের সঙ্গে প্রতিনিয়নই তার ঝগড়া বিবাদ হতো। ২০১১ সালের একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, তখন হাজী সেলিমকে পিস্তল নিয়ে তাড়া করেন ইরফান সেলিম। আর এরপর থেকে হাজী সেলিম ছেলে ইরফানকে ‘সমঝে’ চলতে শুরু করেন। লালবাগের বেশ কয়েকজন জানায়, ইরফান বড় হওয়ার সাথে সাথে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। সেইসাথে চাঁদাবাজি আর দখল জবরদস্তিতে হাজী সেলিমকেও কোণঠাসা করে ফেলে।
জানা গেছে, ইরফান আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার লড়াইয়ে নামতেন। এই বিষয়ে হাজী সেলিমকেও তিনি আগে থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, ইরফান ছোটবেলা থেকেই টাকার জন্য তার মা কে আটকে রাখত, অনেক সময় মারধর করত। সে যে বদমেজাজি এবং বদরাগী তা মাধ্যমিকের পর থেকেই সকলে জানতে শুরু করে। তাই ভয়ে সমঝে চলত সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজ জীবন শেষ হতেই একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে ইরফান। আর এই বাহিনীর মাধ্যমের এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জোর জবরদস্তি করে যে কোন কাজ করে বেরাত। গাড়ি নিয়ে ইরফান সেলিমের বাড়াবাড়ি বা উদ্ধত আচরণ অনেক আগে থেকেই বলে জানায় এলাকাবাসী। এর এই রকম ঘটনায় পুরান ঢাকায় অনেকেই লাঞ্চিত ও নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন বলে জানা যায়। লাঞ্চনার হাত থেকে নারীরাও বাদ যায়নি বলে জানায় মহল্লার অনেকে। গত বছরেই লালবাগ এলাকায় একটি বড় ঘটনা ঘটে। সে সময় ইরফানের গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। তখন ইরফান সেলিমের লোকজন ছাত্রীটিকে উঠিয়ে নিয়ে মদিনা আশিক টাওয়ারে আটকে রাখে। অবশ্য পরে অনেক অনুনয় করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার অভিভাবকরা।
এ ঘটনার পরও ইরফান সেলিম কীভাবে কাউন্সিলর হল- সেটা একটি বড় প্রশ্ন। এলাকা বাসী জানায়, তাদের কোন উপায় ছিল না। ইরফান সেলিম এলাকায় এক আতঙ্কের নাম। তাদের মতে, হাজী সেলিমের তাও কিছু গুণ ছিল- সে এলাকার গরীব মানুষদের কিছু সাহায্য সহযোগিতা করত। মানুষের অভাব, অভিযোগ কিছুটা হলেও শুনত। কিন্তু ইরফান সেলিম এসবের ধারে কাছেও নেই। এলাকার মানুষকে মারপিট করা আর সন্ত্রাস করাই ছিল তার কাজ।
জানা গেছে, গত ১ বছরে ইরফান বাহিনী এলাকায় পুরো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। আর এই বাহিনীতে ৭০ জনের মতো ক্যাডার ছিল। র্যাবের মতে, এদের সবার হাতেই অস্ত্র ছিল, যার সব কটিই আবার অবৈধ। আর এসবের কারণে এলাকায় ইরফান সেলিমের কথাই ছিল শেষ কথা। আর এই কারণে হাজী সেলিমও ছেলের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পরেছিলেন। শেষের দিকে একেবারে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
একাধিক ব্যক্তি জানায় যে, হাজী সেলিম বাকশক্তি হারানোর আগেও তার ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। আর এখন হাজী সেলিমের এই উদ্বেগই যেন সত্যি হল!
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।