নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
কাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র দ্বিতীয় দফা সিরিজ বৈঠক। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর বৈঠকের পর এবার ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে বিএনপি। বৈঠকে প্রত্যেক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক তারেক রহমান। সিরিজ বৈঠকের পর দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে দলের নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু প্রশ্ন হলো জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কি করবে বিএনপি?
বিএনপি জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলছে কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের তৃণমূল নেতৃত্ব একযুগ ধরে স্থবির। বর্তমানে ৮০ ভাগ জেলায় কমিটি ছাড়াই চলছে দলটি। ২০০৯ সালের পর অধিকাংশ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি তারা। এরপর ২০১৯-২০২০ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি পুনর্গঠনে নিজের পছন্দমতো কিছু নেতাকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দুই চারটি জেলা ছাড়া সবগুলোতেই ব্যর্থ হন। এর পর ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কার্যত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। বর্তমানে নামকাওয়াস্তে দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে চলছে। কার্যত এক যুগ ধরেই কমিটিজটের ধাধাঁয় আটকে আছে বিএনপি। ফলে এ প্রশ্ন মোটেই অমূলক নয় যে, বৈঠকে কোন নেতারা অংশগ্রহণ করবেন এবং তারা আসলেই তৃণমূল নেতা তো?
বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কিছু নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনাই নেই। যেখানে অধিকাংশ জেলায় কমিটিই হচ্ছে না, আর হলেও পকেট কমিটি, সেখানে এ সব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কি পাবে বিএনপি? ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবেন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতারা। এ ধরণের গুচ্ছ গুচ্ছ কর্মকাণ্ড একটা সময় বৃহৎকারে রুপ নেবে। এসব কর্মকান্ড ঘিরে চাঙ্গা থাকেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই কর্মকাণ্ডেই ধীরে ধীরে জনমত গড়ে উঠবে। জনমতের ভিত্তিতে সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে দল। দলের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ জনগনের সমর্থনে সফল হবে সেই আন্দোলন। কিন্তু আমরা বৈঠক করছি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
এ দিকে বিএনপিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথার্থ মূল্যায়ন না হওয়ায় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটি, নির্বাহী কমিটির বেশকিছু পদ খালি। সবশেষ স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে আরো একটি পদ শূন্য হলো। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থ। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের উপস্থিতি খুবই কম। এমতাবস্থায় দলের ত্যাগী, অভিজ্ঞ নেতাদের দিয়ে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণের কথা বারবার বলা হলেও তা কোনো এক অদৃশ্য কারণে হচ্ছে না।
অবশ্য দলটির অনেকেই মনে করেন, দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখেন না। আর সে কারণেই তিনি এই শূন্য পদগুলো পূরণ করতে মনোযোগী নন। বর্তমানে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির পাঁচটি পদ শূন্য। স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদগুলো চাইলেই পূরণ করতে পারেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এছাড়া দলে আরও বেশ কিছু শূন্য পদও রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতে পারেন। কিন্তু কেন করছেন না, তা কারো কাছেই পরিষ্কার নয়।
প্রবীণ নেতারা প্রকাশ্যে এ নিয়োগের বিরোধিতা না করলেও তারা আর আগের মতো দলের কার্যক্রমে থাকেন না। এদের মধ্যে একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। আবার সুযোগ পেলে দলের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করতেও কেউ কেউ ছাড়েন না। আবার দু-তিনজন বাদ দিলে দলের স্থায়ী কমিটিতে এখন যারা আছেন তাদের যোগ্যতা ও অবস্থান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
কমিটি জটের ঘূর্ণিপাকে নিষ্ক্রিয় বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোও। দলটির ৯টি অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠন দুটিরও একই অবস্থা। ফলে এখন পদহীন পরিচয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন ছাত্রদলের সাবেক ৫ শতাধিক নেতা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদেরও পদ নেই। এ ছাড়া এ দল দুটির বেশ কিছু সাবেক নেতাও এখন পদহীন। অঙ্গসংগঠনের কমিটি-জট না কাটায় বিএনপির হাইকমান্ডও তাদের বিষয়ে কোনো ফয়সালা দিতে পারছেন না। আর পদবঞ্চিত সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, নিজেদের নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতেই অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা কমিটি নিয়ে ভাবছেন না। এদিকে, কাউন্সিল করে ছয় মাসেও কমিটি দিতে পারেনি কৃষক দল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে এ ধরণের বৈঠক দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করতে পারবে না বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা আলোচনার টেবিলে অনেক বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম-কর্মসূচিতে তারা থাকেন না। এখন বিএনপির আন্দোলন বা কর্মসূচি প্রেসক্লাব নির্ভর হয়ে গেছে। কমিটিহীন, কর্মসূচীহীন একটা দল কি চলতে পারে? খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির যে বৈঠকগুলো হত সেগুলো এখনকার তুলনায় কিছুটা হলেও কার্যকরী ছিল। কিন্তু এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয় না। আবার সিদ্ধান্ত হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। অনেক সময় উল্টো সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কাদাছোড়াছুরি চলে। এনিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে এবং সমগ্র রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা আছে। ফলে সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়া দলটির হাতে বিশেষ কিছু নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।