নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ অক্টোবর, ২০২১
গত একমাস ধরে রাজনীতিতে কথার যুদ্ধ চলছে। কিন্তু কথার যুদ্ধে শেষ করে এখন রাজনীতি মাঠে গড়াচ্ছে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কথায় উত্তপ্ত রাজনীতি এখন রাজপথে নামার অপেক্ষায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাঁচটি ইস্যু নিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এ চলতি মাসেই। যে ইস্যুগুলো নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. কুমিল্লা ইস্যু: ইতিমধ্যে কুমিল্লার ইস্যু নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করছে এবং এই তদন্তে এর পেছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে সেটা বেরিয়ে আসছে। ফলে যারা এর সঙ্গে জড়িত বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের যে চক্র এই অপকর্ম করে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের আইনের আওতায় আনলে এর প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াত রাজপথে আন্দোলন বা অশান্তি সৃষ্টি করার একটা চেষ্টা করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
২. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: সাম্প্রতিক সময়ে জনজীবনের সবচেয়ে অস্বস্তি এবং বিরক্তির নাম হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে এক অসহনীয় অবস্থায় নিয়ে গেছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে যদি উত্তরণ না ঘটাতে পারে তাহলে দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নামবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে বাম রাজনৈতিক দলগুলো দ্রব্যমূল্য ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
৩. নির্বাচন কমিশন: সরকার নতুন সার্চ কমিটির ঘোষণা দিতে পারে চলতি সপ্তাহেই। এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন গঠন, এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা এ সার্চ কমিটি মানে না। সুশীল সমাজও এই সার্চ কমিটির বদলে আইন করে নির্বাচন কমিশন করার কথা বলছে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি রাজপথে কর্মসূচি দিতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
৪. ই-কমার্স: ই-কমার্স প্রতারিত মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ। তারা বিক্ষিপ্তভাবে এখন মিছিল মিটিং করছেন, কোথাও কোথাও মানববন্ধন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ই-কমার্সের দ্বারা প্রতারিতদেরকে এক করার চেষ্টা করছে এবং তাদেরকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকার মত প্রতিষ্ঠানগুলো যে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারিত করেছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করলে একটা রাজপথে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে। আর এ ক্ষেত্রেও বাম রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি: বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে একদিক দিয়ে যেমন বিএনপি সরকার সঙ্গে দেনদরবার এবং তদবির করছে, অন্যদিকে তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনাও নিয়েছে। আর এ জন্য বিএনপি কিছু কিছু আন্দোলন করবে।
তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মূল লক্ষ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে একটি বড় ধরনের আন্দোলন তৈরি করা। সেক্ষেত্রে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো চাইছে প্রথমে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত ইস্যুগুলোকে সামনে আনতে। আর এ কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ই-কমার্সের মত ইস্যুগুলো নিয়ে তারা প্রথমে কর্মসূচি শুরু করবে যে কর্মসূচিগুলোতে মানুষকে সম্পৃক্ত করার পর আস্তে আস্তে তারা অন্যান্য ইস্যুগুলো নিয়েও আন্দোলন করবে। তবে গত ১২ বছরের বিএনপি বহুবার আন্দোলনের চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। এবারও আন্দোলনের চেষ্টায় বিরোধী দল কতটুকু সফল হবে সেটি দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন