ইনসাইড টক

‘৭৫ এর পরে ভীরুতা, কাপুরুষতা, দোদুল্যমানতায় প্রতিবাদ করতে পারেনি আ. লীগ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৫৮ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০


Thumbnail

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির ইতিহাসে কলঙ্কময় একদিন। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কার্যকর প্রতিবাদ করতে পারেনি, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বাংলা ইনসাইডার মুখোমুখি হয়েছিল সে সময়ের ছাত্রনেতা, এখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের। অকপটে তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিভ্রান্তির গল্প।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘৭৫ এর পরে ভীরুতা, কাপুরুষতা, দোদুল্যমানতায় প্রতিবাদ করতে পারেনি আ. লীগ’

ইতিহাসের পাতা খুলে বাংলা ইনসাইডারকে নানক বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট দিনটি ছিল আমাদের ছাত্র সমাজের কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ এই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পদার্পণ করার কথা ছিল। ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। সুন্দর একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো আনন্দে আত্মহারা। আমরা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি তখন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসেবে আমাকে তখন আগের দিন ঢাকা ডাকা হয়েছিল। কামাল ভাই ডেকেছিলেন। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হওয়ার সাথে সাথে ছাত্র সমাজেরও একটি ইউনাইটেড ছাত্র ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সেটি হলো জাতীয় ছাত্রলীগ। সেই জাতীয় ছাত্রলীগের জেলা সম্পাদক হিসেবে আমাকে ডেকেছিলেন কামাল ভাই। আমি ঢাকা এসেছিলাম। ঐদিন রাতে আমি এবং আমার বন্ধু ছাত্রনেতা কাশেম, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় উঠেছিলাম। হোস্টেল থেকে এসে সবসময় তার বাসায়ই আমরা উঠতাম। আমরা ঐদিন রাতে ১১ টার দিকে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পরেই সর্বপ্রথম দেখা হয় কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। কামাল ভাই তখন বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন কি খবর? তিনি আদর করে আমায় ‘নানকা’ বলে ডাকতেন। বললেন, ‘কিরে নানকা কি অবস্থা?’

সেদিন সমস্ত ডিপার্টমেন্টগুলো সাজানো হয়েছিল ভিন্ন ভিন্নভাবে। কামাল ভাই বললেন, ‘আমার সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টটা দেখিস কেমন হইসে’। তো আমরা দেখব, এ রকম সময়ে তিনি বললেন, ‘আমি যাই’। তখন রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ১ টা হবে। কামাল ভাই বললেন, ‘আমি গিয়ে তৈরি হয়ে চলে আসছি’। আমাকে বললেন, ‘নানক তুই চলে যা। জহুরুল হক হলে চলে যা, খুব সকালে তৈরি হয়ে চলে আসিস’। এই ছিল শেষ কথা, শেষ দেখা শ্রদ্ধেয় কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। রাতে আর ঘুমালাম না। আমরা যখন উঠে তৈরি হচ্ছিলাম, তখন কামানের শব্দ শুরু হয়ে গেল। আমরা আতংকিত হয়ে গেলাম। খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম কোথায় কি হচ্ছে? আর কয়েক ঘণ্টা পরেই বঙ্গবন্ধু আসবেন।

আমরা খবর নিতে নিতেই খবর প্রচার হয়ে গেলো। কেউ কেউ রেডিওতে শুনল। আমরা যখন খবরটি শুনলাম। আমরা তখন রওনা করে চলে গেলাম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় আমি এবং আমার বন্ধু কাশেম গিয়েই দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। হাসান ভাইয়ের একজন বডিগার্ড ছিলেন হাবিলদার শামসুর। তিনি আমাদের দেখেই বললেন, ‘ভাই তাড়াতাড়ি চলে যান এখান থেকে। সব শেষ হয়ে গেছে। সবাইকে মেরে ফেলেছে’। আমরা তখন ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম। আলু বাজারে খালার বাসায় তখন আমু ভাই থাকে। আমু ভাই তখন ঝালকাঠির গভর্নর হিসেবে ট্রেনিং নিতে এসেছিলেন। আমরা আমু ভাইয়ের বাসায় গেলাম।

আমু ভাই বাইরে এসে দোতলা থেকে বললেন, কি ব্যাপার? আমরা দোতলায় উঠলাম। নিচে পুলিশ গার্ড। উঠেই আমু ভাইকে আমরা বললাম ঘটনা। বলার পর উনি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন। একপর্যায়ে আমরা আমু ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমরা পলাশীর মোড়ে যখন এসেছি হাঁটতে হাঁটতে পথে দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হচ্ছে। একপর্যায়ে পলাশী মোড়েই আমু ভাই আমাকে বললেন, ‘নানক ইউনিভার্সিটিতে গেলে কি ছাত্রদের পাওয়া যাবে প্রতিবাদ করার জন্য?’ আমরা বললাম যে, ‘লিডার, আসলে সবাই হল ছেড়ে চলে গিয়েছে’। আমরা পরে আত্মগোপনে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমু ভাই গ্রেফতার হয়ে গেলেন।

আমু ভাই গ্রেফতার হওয়ার পর আমি ঢাকায়ই ছিলাম। তখন আমরা বিভিন্ন গোপন সভা করি। জগন্নাথ হলে যে পুরাতন এসেম্বলি, সেখানকার ছাদে আমাদের গোপন মিটিং হতো। আমরা লিফলেট ছাপিয়ে আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফ্লোরে ফ্লোরে দিয়ে আসতাম। এগুলো হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের ঘটনা। একটি পর্যায়ে আমার মনে আছে ২১ আগস্ট মধুর ক্যান্টিন থেকে আমরা একটি মিছিল বের করি। আমরা ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র মিলে একটা ঝটিকা মিছিল করলাম। মিছিল শেষে আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনে ফিরলাম, তখন হকিস্টিক ও চাপাতি নিয়ে ডালি গ্রুপ আমাদের আক্রমণ করল। তারা কাঁঠালবাগান ছাত্রলীগের লুকু নামের একটা ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়েছিল। তার রক্তে জায়গাটা সয়লাব হয়ে গেলো। আমরা যে যেদিকে পারি পালিয়ে গেলাম।

এরপরে অনেক ঘটনা আছে। সভা সমাবেশ করা, গোপন মিটিং করা, গোপনে গোপনে সংগঠিত করা ছিল আমাদের দৈনিন্দন কাজ। একটি পর্যায়ে খন্দকার মোশতাক যখন সমস্ত এমপিদেরকে ডাকলেন, তখন আমরা চিঠি দিয়ে সমস্ত এমপিদের সঙ্গে দেখা করলাম। আমাদের একেকজনের উপর কয়েকজন করে এমপির দায়িত্ব পড়ল। আমরা তাদের বারণ করলাম খুনি মোশতাকের মিটিং এ যোগ না করার জন্য। বলতে কোন দ্বিধা নেই কাউকে কাউকে আমরা মৃত্যুর হুমকিও দিয়েছি। বলেছিলাম যে, ‘যদি যান খুনির আমন্ত্রণে তাইলে কিন্তু বাঁচতে পারবেন না’। এছাড়াও অনেক ঘটনা প্রবাহ আছে। এইভাবেই আমরা সংগঠিত করতে থাকি। ৩ নভেম্বর আমরা একটি পূর্ব নির্ধারিত মিছিল বের করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার মিছিল আমরা অর্গানাইজ করি।

এই মিছিল নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করার পরেই নীলক্ষেতে আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে এই মিছিল নিয়ে আমরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর পর্যন্ত যাই। এই সর্বপ্রথম রাজপথে একটি মিছিল হয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। সেদিনকার ইত্তেফাক বা দৈনিক সংবাদ যদি দেখেন, সেখানে কভার পেইজে সেই মৌন মিছিলের একটি ছবি ছাপা হয়েছিলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে আমি ছিলাম। আমার বিষয়গুলো আমি ফোকাস করার জন্য না। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেলাম বঙ্গবন্ধুর ভবন পর্যন্ত গিয়ে মাঝখানে কলাবাগান থেকে রাশেদ মোশারফের মা যোগদান করলেন। এই ছিল ঘটনা প্রবাহ।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হতে হতে পুরান ঢাকা থেকে গোপনে আমরা পোস্টার বের করলাম। গোপনে মিটিং করলাম। তখন মানিকগঞ্জের মহিউদ্দিন ছিল, এখন তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় তার একটি প্রেস ছিল। সেই প্রেসে আমরা পোস্টার ছাপিয়েছি। পুরান ঢাকার আরও বিভিন্ন প্রেসে পোস্টার ছাপিয়ে সেই পোস্টারগুলো আমরা লাগানোর চেষ্টা করেছি।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী যখন আসল তখন আমি বরিশালে চলে যাই। প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে আমি বরিশালে হরতাল আহ্বান করি। হরতাল আহ্বানের প্রস্তুতি সভা যখন বরিশাল বিএম কলেজের খেলার মাঠে গোপনে করছিলাম, তখন সমস্ত কলেজ ঘেরাও করে আমাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করে পুলিশ। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু পুলিশ আমাকে অনুসরণ করে একটি বাড়ির ভেতর থেকে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। সেদিন ছিল শবে বরাতের রাত, ৮ আগস্ট। সেই শবে বরাতের রাতে সারারাত আমাকে থানায় ফ্যানের রিঙের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। আমার কাছে আমির হোসেন আমুর অস্ত্র চায়, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর অস্ত্র চায়, ক্যাপ্টেন রবের অস্ত্রের খোঁজ চায়।

তাদের সর্বপ্রথম কথা ছিল যে হরতাল ডেকেছিস, সেই হরতাল বন্ধ করতে হবে। হরতাল হতে পারবে না। আমি কোন কথার উত্তর দেই না। সারারাত নির্যাতন করার পরের দিন আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর পর আমাকে আমার আপন লোকরাও দেখে চিনতে পারে নাই। এমনভাবে আমার চেহারা পাল্টে দিয়েছিল। তবে যাই হোক, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ১৫ আগস্ট বরিশালে আংশিক হরতাল পালিত হয়েছিলো। আমি গ্রেফতার হওয়ার পরে এলাকার প্রথম কাতারের নেতারা, দ্বিতীয় কাতারের নেতারা, তৃতীয় কাতারের নেতারা সবাই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে পুলিশের দাপটে। একটি পর্যায়ে একদম নিচের লেভেলের কর্মীরা হরতাল পালন করে।

সে সময় আওয়ামী লীগের বিভ্রান্তির কিছু উদাহরণ দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমু ভাইকে নিয়ে আমি যখন আত্মগোপনে ছিলাম। তখন আমু ভাই আমাকে সংসদ হোস্টেলে পাঠিয়েছিলেন। সেই হোস্টেলে পাঠিয়েছিলেন কয়েকজন এমপির সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাদের নাম বললাম না। এক নেতার রুমে গিয়ে দেখলাম হাঁসের মাংস আর ভুনা খিচুরি খাচ্ছে। তিনি মঞ্জু গ্রুপ করতেন। বরিশালের নুরুল ইসলাম মঞ্জু। আমাকে দেখেই তারা হৈচৈ করে অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন। হাসি দেওয়ার পর আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম। তখন শাজাহান ওমর আমাকে ইশারা দিয়ে বাইরে নিয়ে গেলেন। নিয়ে বললেন, ‘এখানে মরতে আসছ। দেখ না হাঁসের মাংস আর খিচুড়ি খাচ্ছে। হাসাহাসি করছে। আনন্দ করছে। তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যা’। আমি সেখান থেকে চলে গেলাম। সেদিন আমার বুক ফেটে গিয়েছে যে, বরিশালে আনন্দ মিছিল বের করেছিলো। আনন্দ মিছিল যারা বের করেছিলো, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙ্গেছে যারা তারাও কিন্তু এখন বর্ণচোরা আওয়ামী লীগ হয়ে গিয়েছে।

আ স ম ফিরোজের মতো মানুষ সেদিন বরিশালে আনন্দ মিছিল বের করেছিলো বঙ্গবন্ধুর ছবিতে জুতার মালা লাগিয়ে। আমু ভাইয়ের সঙ্গে আমি যখন আত্মগোপনে ছিলাম, তিনি প্রাণান্তভাবে চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে একটা প্রতিবাদ দাঁড় করানোর জন্য। কিন্তু প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তার কারণ আমরা খবর পাচ্ছিলাম ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহেব গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন টিএন্ডটি কলোনি থেকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার এক লম্বা সারি দেখলাম। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভার অধিকাংশই দেখলাম সেদিন মোশতাকের ক্যাবিনেটে। এরই মধ্যে আমরা কতিপয় লোক চেষ্টা করেছি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য। এরা ধারণা করেছিলো আর কোনদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জায়গা ইতিহাসে হবে না। আর ফিরে আসবে না। এই যে দোদুল্যমানতা, এই যে ভীরুতা!

সেদিন জহুরুল হক হল থেকে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় যেতে আমি দেখেছি মানুষের যে কি অবস্থা। আবার ট্যাংকের উপর আনন্দও দেখেছি। কিন্তু সেদিন শুধু একটি ডাকের দরকার ছিল। একটি ডাকের প্রয়োজন ছিল। তৎকালীন যারা ছিলেন, তারা সেই ডাকটা দিতে পারেন নাই। তখন আমি এবং আমু ভাই দুজনেই রক্ষীবাহিনীর যশোরের লিডার ইসমাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আমরা শুনতে পাই রক্ষীবাহিনীও আত্ম-সমর্পণ করেছে। কেউ তখন এগিয়ে আসে নাই। হয় ভীরুতা, নয় কাপুরুষতা, আর না হয় দোদুল্যমানতা, আর না হলে গোপনে তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল। এ কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নাই।       



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘নতুন কারিকুলাম অনুসারে তীব্র তাপদাহেও স্কুল খোলা না রেখে উপায় নাই’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপদাহ যাচ্ছে। এটা একটু কষ্টদায়ক বটে। তবে মে মাসেও তো আবহাওয়া এমন থাকবে এবং সে সময় প্রচন্ড গরম থাকবে। কিন্তু তাই বলে তো আর স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত লম্বা সময় ধরে বন্ধ রাখা যায় না।

দেশে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। 

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের নতুন যে কারিকুলাম সেটা বাস্তবমুখী শিক্ষা। সে অনুযায়ী স্কুলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্কুলে না গিয়ে শেখার উপায় নেই। এছাড়াও করোনার সময় এমনতেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে ঈদের ছুটি, পয়লা বৈশাখের ছুটি সব মিলিয়ে একটা বড় সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই দেশের তাপমাত্রা কমে আসবে। এখন যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা মনিং স্কুল চালু করতে পারি। এখন হয়ত সকাল ৮টায় ক্লাস শুরু হয় সেখানে আমরা এখন থেকে সকাল ৭টায় ক্লাস শুরু করতে পারি এবং ১১ টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। যেমন, আজকে সকালে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তাছাড়া দেশের সব জাগয়ায় তাপমাত্রা একই রকম না। যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে তুলনামূলক তাপমাত্রা কম এবং এই অঞ্চলগুলো গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। এরকম অবস্থায় স্কুল বন্ধ রাখলেও তো আবার তাদের জন্য ক্ষতি।

তীব্র তাপপ্রবাহের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের পাঠ্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ্য করে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান  বলেন, যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। যেমন, এ সময় আমাদের স্কুলগুলোতে পযাপ্ত আলো-বাতাস বিশেষ করে এ সময় যেন লোডশেডিং না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামের স্কুলগুলোতে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে সে ব্যাপারে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, যারা দলের নির্দেশনা মানতে পারেননি, তারা তো না পারার দলে। দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা ছিল দলের বৃহত্তর স্বার্থে। সেজন্য সেটা পালন করা সবাই নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ সেই নির্দেশ মান্য করেননি সেটার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে আমার বড় প্রশ্ন রয়েছে।

কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না—এমন নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি কোন কোন এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। পাঠকদের জন্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ। 

তিনি বলেন, দল করলে আপনাকে দলের সিদ্ধান্ত, গঠনতন্ত্র, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানতেই হবে। সেটা না করলে আপনি রাজনীতিতে কখনও ভালো করতে পারবেন না। এটা শুধু রাজনীতিতে নয়, যে কোন সেক্টরে এটা প্রযোজ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন নির্দেশ দিলেন তখন সেটা অমান্য করার প্রশ্নই আসে না। এরপরও যারা দলের সিদ্ধান্তকে মানলেন না তাদের আদর্শ নিয়ে তো বড় প্রশ্ন আছে। কারণ নির্দেশ অমান্য করা দলের নীতি আদর্শের সাথে যায় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে কতটুকু আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন। তবে এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। যারা এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তাদের উচিত হবে অনতিবিলম্বে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া।

নির্দেশনা অমান্য করা ক্ষেত্রে দলের কৌশলের ভুল আছে কিনা বিশেষ করে এর আগে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার বহিষ্কার করে আবার দলে ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা থেকে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয় তাহলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ভালো হবে না এটা নিশ্চিত। আমি বলব তারা ভুল রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। এরা অচিরেই রাজনীতিতে হারিয়ে যাবে। দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে বা গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেউই এখন পর্যন্ত রাজনীতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারেনি। বরং যিনি দলের প্রতি অবিচল থেকেছেন, দলের সিদ্ধান্তকে মান্য করেছেন, দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি তারা ধাপের ধাপে রাজনীতিতে উন্নতি করেছেন দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরেছেন, জনগণের নেতাতে পরিণত হয়েছেন, রাজনীতিতে অমরত্ব লাভ করেছেন। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম করেছেন তারা সেই স্বাদ পাননি।

তিনি আরও বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ হয়তো সাময়িক ভাবে লাভবান হতে পারেন কিন্তু একটা সময়ের পর রাজনীতিতে থেকে জীবনের জন্য হারিয়েছে যাবেন। রাজনীতিতে তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়বেন। জনগণের কাছে তাদের মযার্দার আসন হারাবেন, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখান হবেন। কেউ যদি সে পথে পা বাড়ান সেটার দায়-দায়িত্ব তার নিজের।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ত্যাগী কর্মীদের অনুপ্রাণিত করেছে’

প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এর মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রাজনীতির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর উত্থান হয়েছে এবং তিনি যে দল ও ত্যাগী নেতাদের ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যে তার মমত্ববোধ সেটি প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে নতুন আলোর সঞ্চার দেখছেন এবং তারা নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকবে।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশের যৌক্তিকতা এবং দলের অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে আলাপচারিতায় জাহাঙ্গীর কবির নানক এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের অনেকে আছেন যারা উত্তরাধিকারে সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন এবং তারা স্ব স্ব অবস্থানে ভালো অবদান রাখছেন তাহলে এখন কেন আওয়ামী লীগ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো—এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, রাজনীতির বিষয়টি ধন-সম্পদের মত বিষয় নয়। কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান উপজেলা নির্বাচন করছে সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তিনি নির্বাচন করতেই পারেন। নির্বাচন করা তার অধিকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোন কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান কিংবা স্বজনেরা সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের সন্তান, শ্যালক, ভাগ্নে বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ তিনি হয়তো কোনদিনই একবারের জন্যেও জয় বাংলা স্লোগান দেননি কিংবা দলের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেননি। এরকম যাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ। উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করা বা আসা সেটা মূখ্য নিষয় নয়। কারও পরিবারতন্ত্রের কারণে যেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত না হন সেটার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা। 

কোন কোন উপজেলায় এমপিরা একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন সেটি দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এটি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। কারণ উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি অমান্য করার কোন প্রশ্নই আসে না। কারও অধিকারও নেই এই নির্দেশ অমান্য করার। এমনকি এ ধরনের মনোবৃত্তি দেখানোরও কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি যিনি নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করবে না তিনি এই দলের জন্য কোন ভাবেই মঙ্গলজনক হতে পারে না।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশের ওপর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম তাপদাহ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে কীভাবে নারী পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কিশোর সুস্থ্ থাকতে পারে সে ব্যাপারে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোদে যারা কাজ করেন, তাদের একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করা যাবে না। এতে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারেন। হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা অনেকক্ষণ রোদে কাজ করে তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সাথে সাথে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রোয়জনে একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। কাজের ফাঁকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসবেন। একটানা রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, স্যালাইন খেতে পারেন। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

আরেকটা জরুরী বিষয় হলো, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো। 

বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। 

শিশুদের বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, গরমে বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। এখন স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চাদের বাইরে বের না করাই ভালো। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি গরমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে, গরমের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট ওঠানামা করছে। তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

পানিশূন্যতা গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ্য করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, এই গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে। তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর, বাসি কোনো খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রশাসনের এখতিয়ারে নেই’

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বলেছেন, বুয়েটে শুধু ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতি চায় না। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও তো ছাত্ররাজনীতি চায়। তাহলে কেন শুধু এখন সামনে ছাত্রলীগের নাম সামনে আসছে। বুয়েটে যারা ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে তাদের প্রথম পরিচয় তারা বুয়েটের ছাত্র। আর বুয়েট কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে যে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছে, এটা বুয়েট প্রশাসন করতে পারে না। তাদের এখতিয়ার নেই। দেশের প্রচলিত মৌলিক আইন যেখানে আমাকে অধিকার দিয়েছে বুয়েট সেটা নিষিদ্ধ করতে পারে না। আইনে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন এবং নিয়মের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হবে। সেখানে বুয়েট তো বাংলাদেশের বাইরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের নিয়মেই তো বুয়েট চলার কথা। কিন্তু সেখানে বুয়েট প্রশাসন কীভাবে আমার মৌলিক অধিকার রহিত করে? আমার ক্যাম্পাসে আমি মুক্ত চিন্তায় ঘুরবো, আমি কথা বলবো, আমি স্লোগান দিবো, আমি বক্তৃতা দিবো, আমি পড়াশুনা করবো। এটা থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে পারে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছাত্ররাজনীতি আবার ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ইসহাক আলী খান পান্না এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ইসহাক আলী খান পান্না এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, যারা প্রগতির কথা বলেন না, মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের কথা চিন্তা করে তারাই তো আজ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে চায়। আপনি দেখেন, একটি জলালয়ে যদি পানির কোন ঢেউ না হয়, সেটা যদি কোন কারণে ব্যবহার না হয় তাহলে সেখানে মশা মাছি আর্বজনা জন্মায়। সেখানে থেকে এক সময় দুর্গন্ধ ছাড়ায়। ঠিক তেমনি ভাবে বুয়েটে যদি আপনি মুক্ত চিন্তার চর্চা না করতে দেন তাহলে এর অন্তরালে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে, ধর্মান্ধের উত্থান ঘটবে। যারা স্বাধীনতাকে এখনও মেনে নেননি আপনি তাদেরকে শক্তিশালী করবেন। অথচ প্রগতির কথা যারা বলে সেটা  ছাত্রলীগ হোক কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন হোক এমনকি ছাত্রদলও যদি হয় তাহলে তারা সেখানে কথা বলতে পারবে না কেন।

তিনি বলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশুনা করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্ররাজনীতি করেছি, এই ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলেছি, স্বাধীনতার কথা বলেছি, গণতন্ত্রের কথা বলেছি, স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেখানে শিবির কোন দিন স্লোগান মিছিল কিছু পরিচালনা করতে পারেনি, করেনি। তারা বুয়েট এবং ঢাকা মেডিকেলে তাদের কার্যক্রম করেছে। একই ভাবে সেই বুয়েটে এখনও তাদের কর্মকাণ্ড চলে। আর ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড চলবে না সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার শুধু ছাত্রলীগ টার্গেট কেন? ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারাও তো বুয়েটের ছাত্রছাত্রী। তাহলে বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরও তো কথা বলার অধিকার রয়েছে, তারও হলে থাকার অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন আপনি তাকে এসব থেকে বঞ্চিত করছেন। বাংলাদেশের সকল অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সব সময় কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশে বাংলাদেশে স্বৈর শাসনের পতন, মৌলবাদের পতন এবং সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেই ছাত্রলীগ বুয়েটে মৌলবাদের যে চর্চা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। সুতরাং এবং অবশ্যই সেটা সঠিক করেছে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের সকল ছাত্রছাত্রীদের সবার মুক্ত বিচরণের সুযোগ করে দেয়া দরকার। তারা যেন প্রগতির কথা বলতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারে, গণতন্ত্রের কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। এখন বুয়েটকে নিয়ে যে খেলা চলছে প্রকারন্তে বাংলাদেশে এরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পালন করছে। এটা হতে পারে না। আপনি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বুদ্ধিজীবী দিবস তারা এগুলো পালন করে কিনা। এগুলো অবশ্যই তাদের করতে হবে। বুয়েট স্বাধীনতা বাংলা ভূখন্ডে বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান না। অতএব ছাত্রলীগ যে দাবি তুলেছে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে এটা যুক্তি যুক্ত।

সাবেক ছাত্রলীগ এই নেতা বলেন, বুয়েটে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে, একাডেমিক কাউন্সিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে অন্ধকারে রেখে মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্টপোষকতা করার কোন সুযোগ নাই বুয়েট কর্তৃপক্ষের। অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বুয়েটকে সকলের জন্য উন্মূক্ত এবং সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা অপকর্ম করেছে তাদের দায় সংগঠন নিবে না উল্লেখ্য করে ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, কোন ব্যক্তি, কোন ছাত্র যদি কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে থাকে এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। কারণ ছাত্রলীগ কোন ধরনের অপরাধকেই সমর্থন করে না। যারা ইতোমধ্যে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েয়ে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। সুতরাং এগুলোকে অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। 



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন