প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৮ শে সেপ্টেম্বর
বাঙালি জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কেননা এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন সর্বযুগের
সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা। এই কারণের জন্যই ২৮ সেপ্টেম্বরকে আমরা অন্য দৃষ্টিতে দেখি। আমি জানি এদিন
বিভিন্ন লোক তাকে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু আমার বক্তব্য শুধুমাত্র একদম
ব্যক্তিগত পর্যায়ে। আমি সর্বপ্রথম তাকে দেখেছি হাজার ১৯৬২ সালে। হিসাব করলে প্রায়
৬৩ বছরে হয়। তখন তিনি আজিমপুর গার্লস স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৬২ সালে শিক্ষা
আন্দোলন হয়। সেই শিক্ষা আন্দোলনের প্রধান মিটিংগুলো হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায়।
তখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা খুব কম এই সভায় যোগদান করতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ছিলেন
অনন্য। তিনি ওই সভায় যোগদান করতেন। তখন আমি তাকে দূর থেকে দেখেছি এবং শুনেছি যে তিনি
তখনকার মুজিব ভাইয়ের কন্যা। প্রথম দর্শনেই তাকে মনে হয়েছে একজন অসাধারণ কিশোরী হিসাবে।
সাধারণ কিশোরীদের চপলতা থাকে। শেখ হাসিনার মধ্যেও সেটি নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সেটা আমার চোখে পড়েনি। আমার চোখে পড়েছে একজন জেদি কিশোরী
হিসেবে। শিক্ষা আন্দোলনের সময় তিনি তার লেখাপড়ার ঝুঁকি নিয়ে সেদিন সেই বটতলা সভায়
যোগদান করেন। শেখ হাসিনার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিচয়
ছিল। সে সময় মাঝে মাঝে কিশোরী শেখ হাসিনাকে দেখেছি এবং সবসময় তাকে অন্য কিশোরীদের
থেকে একটু আলাদাই দেখেছি। একই সাথে তিনি কিশোরী এবং একজন ম্যাচিউর পারসন। এই ধরনের
কম্বিনেশন সচরাচর চোখে পড়ে না। কিন্তু এতদিন পরেও আমার চোখে তিনি সেভাবেই বিরাজমান।
সে সময়ে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝে জেলে থাকতেন এবং কিশোরী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গমাতা
অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর আদান প্রদান করতেন।
একজন কিশোরী
যদি অনন্য সাধারণ না হয়। একজন কিশোরী যদি তখন থেকেই ভবিষ্যতে একজন দার্শনিক হবেন এইটা
না থাকে তাহলে তার ব্যবহার এরকম হতে পারে না। তার এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার
প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। যার ফলে আমাদের পরবর্তীতে
শিক্ষা আন্দোলনের পরে অনেক আন্দোলন হয়েছে। এরপরে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধ। তার আগের ছয় দফা আন্দোলন তা এদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে
সময়ও এই কিশোরী তখনও তিনি মাত্র তরুণী হতে চলেছেন। সেই সময় তিনি একজন অনন্য সাধারণ।
এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, তখন ভাবিনি যে ভবিষ্যতে সেখানকার একজন মাত্র তরুণী
ওটা শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা হবেন। এটা চিন্তা আসেনি।
কিন্তু যদি ঘটনা পরস্পরায় মেলানো যায় বর্তমান শেখ হাসিনা আর সেই ১৯৬২ সাল থেকে দীর্ঘ
পরিক্রমার শেখ হাসিনা তাহলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, তখন থেকেই তিনি যে ভবিষ্যতে দার্শনিক
হবেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বে একটি স্থান করে নেবেন। তবে এটা বুঝতে পারিনি
যে, বর্তমান বিশ্বে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি নিদর্শন দিয়ে দেশের প্রতিটি পরিকল্পনা
গ্রহণ করেন। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় গিয়েও তিনি তার দর্শনের কথা বলেছেন।
আমি দেখেছি
যখন তিনি ইডেন কলেজের ভিপি নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার
জন্য সিদ্ধান্ত নেন। আমরা তখন যারা ছাত্রলীগের মোটামুটি নেতৃত্ব এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের সভাপতি। আমরা সকলে তাকে খুব ভালোভাবে বুঝালাম যে, নির্বাচনের জয় লাভের কোন
সম্ভাবনা নাই। বরং বিপুল ভোটে হারতে হবে। তখন দুটো অসুবিধা ছিল। একটি হচ্ছে তখন মেয়েরা
মোটামুটি সকলেই ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক। ছাত্রলীগ কেউ করত না। সাধারণভাবে আমার বলতে
কোনো দ্বিধা নেই যে, ছাত্রলীগে আমাদের সময় বেশি কাটত লেখাপড়ার পাশাপাশি এনএসএফের
সাথে যুদ্ধ করে মারামারি করে টিকে থাকা। তা না হলে ছাত্র আন্দোলন ওই খানে মুখ থুবরে
পড়ে যেত ছাত্র। ইউনিয়নের কাজ ছিল গলায় একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দুই একটা কবিতার বই লেখা,
কবিতা পড়া, আর প্রেম করা। সুতরাং মেয়েরা অধিকাংশই ছাত্র ইউনিয়নদের সমর্থন করতেন।
তারা ভাবত এরা লেখাপড়া জানেন। আর ছাত্রলীগ মানে গুন্ডা। গুন্ডাদের সাথে কেউ প্রেম
করতে চায় না। সুতরাং আমরা এই ক্ষেত্রে জিরোতে ছিলাম। আর আমাদের যারা অল্প কয়েকজন
ছিল তার ভিতরে আমাদের বর্তমান দার্শনিক শেখ হাসিনা পড়েন। তার ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে,
তার দিকে তাকালে, তার সাথে কথাবার্তা বললে বোঝা যেত যে, তাঁর সাথে অন্যান্য কিশোরী
বা তরুণীদের থেকে একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল। এই মৌলিক পার্থক্য ছিল আল্লাহ প্রদত্ত।
তার দিকে তাকালে আমার মনে হয় না কোন ছেলে বা কোন লোক তাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা
ছাড়া অন্য কোন হাসি-ঠাট্টা করা বা অন্য কিছু করার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করত না। এটা
হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্ব তিনি অর্জন করেছেন। তিনি সকলের মধ্যে এটা বিতরণ
করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই কারণের জন্য তখন থেকেই তিনি অনন্য। সে সময় তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট
পদে দাঁড়ালেন। উনি একজন জেদি তরুণী হিসাবে এবং আমাদেরকে শুধু বললেন যে, আপনারা আমাকে
যেটুক সাহায্য করার করেন। নির্বাচনে আমি বিজয় লাভ করব। এই কথা শোনার পরে তখনকার তখন
গভর্নর মোনায়েম খান বলে দিলেন যে, শেখ মুজিবের মেয়ে যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হয় তাহলে এটা ছয় দফার জন্য ম্যান্ডেট হবে। সুতরাং আমরা এতদিন যেটুকু আশা ভরসা করেছিলাম,
শেখ হাসিনা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কিছুটা হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কিন্তু
জয়ী হতে পারবেন না। মোনায়েম খানের একটা গুণ ছিল। উনি যেটা বলছেন সেটা কাজে পরিণত করতেন।
তার গুণ্ডা বাহিনীর থেকে শুরু করে কলেজের অথরিটিকে সবাইকে চাপ দিতে শুরু করলেন। আমরা
ভাবলাম আশা ভরসা নাই। আমরা সামান্য পোস্টার লেখা, সিগারা খাওয়ানো এইসব কাজে তাকে সাহায্য
করতাম। এই দার্শনিক শেখ হাসিনার মহত্বের কারণে উনি খুব বড় করে দেখেন এবং উনার বিভিন্ন
বক্তব্যে আমাদেরকে যেভাবে বড় করেন তার নির্বাচনের সাহায্য করার জন্য যদি সত্যিকারে
বলতে হয় তাহলে আমরা তাঁর দশভাগের একভাগ কাজও করিনি। উনি আমাদেরকে যে মূল্য দেন সেটা
ওনার বদান্যতা। এই বদান্যতা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। তাঁর কন্যার মধ্যে আছে। নির্বাচনে
শেখ হাসিনা প্রায় ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এখনকার দার্শনিক শেখ হাসিনা তখনকার তরুণী তিনি
নির্বাচনে জয়ী হলেন অর্থাৎ ছয় দফার জন্য পাবলিকলি প্রথম ব্যক্তি যিনি নাকি ম্যান্ডেট
গ্রহণ করলেন। এই ম্যান্ডেট গ্রহণকারী শেখ হাসিনা পরবর্তীতে একজন মধ্যবিত্ত মা-বাবা
যা করে বঙ্গবন্ধু ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে দিলেন। অনেকে অনেক কিছু বলার পরও তিনি তাকে
আবার স্বামীর সাথে সংসার করতে পাঠিয়ে দিলেন।
আরেকটি ঘটনা
উল্লেখ না করলেই নয়, আগরতলা মামলার সময় তিনি বঙ্গমাতা নির্দেশে যে সকল খবর আনতেন এবং
আমাদের আন্দোলনের সুবিধা হতো। তাঁর একটি বিষয় যদি আগে বাইরে চলে যেত তাহলে তখনকার
তরুণী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গমাতা সহ অনেককেই হত্যা করা হতো এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
কিছুই হতো না। আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কবর রচনা হতো। এইরকম গুরুদায়িত্ব
একজন তরুণী নিতে পারে। ওই তরুণী যদি সত্যিকারে তখন থেকেই একজন দার্শনিক তাঁর ভিতর বসবাস
না করত তা হলে কোন কিছুতেই সম্ভব হতো না। তখন তিনি এইভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আমরাও বাইরে আন্দোলন ঠিকমতো করতে পেরেছি
সকলে মিলে বঙ্গমাতার নেতৃত্বে। পরবর্তীতে একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজনে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে
ঠিক রাখার জন্য, বাংলাদেশ যেন পাকিস্তান না হয়ে যায় সেইটা করার জন্যই তখনকার আওয়ামী
লীগ নেতারা এই শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ প্রধান করে দেশে আনেন। তিনি নিজের বাড়িতে
ঢুকতে পারেননি কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে আমরা যে কারফিউয়ের মধ্যে ছিলাম তা তুলে
নিতে তিনি বাধ্য করেন।
পরবর্তীতে ২১
বছর পরে শেখ হাসিনা আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি দেশ চালানো
দার্শনিক হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কাজে তিনি তাঁর দর্শন প্রয়োগ করতেন। যেমন, আমি যেটা
নিয়ে নিয়মিত কাজ করি সেটাই উদাহরণ দেই, এই কমিউনিটি ক্লিনিক তিনি দর্শন নিয়ে কাজ
করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংবিধান অনুযায়ী কেউ স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকবে না। সেজন্য
তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক করলেন। তিনি জনগণকে ক্ষমতায়ন করলেন। আমাদের দেশে তো নারীদের
ক্ষমতায়ন ছিল না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে, কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি দিয়ে নারীদের
ক্ষমতায়ন করলেন। একই সাথে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করলেন। লেখাপড়া
করলে চাকরি পাওয়া যাবে। সুতরাং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাবে। স্কুলে মেয়েদের শিক্ষা
গ্রহণ করার হার বেড়ে গেল। সার্বিকভাবে শিক্ষার হার বেড়ে গেল। একটা দর্শনে তিনি কত
কিছু করেছেন। একই সাথে একটি বাড়ি একটি খামার করেছেন। তিনি বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা
রাখা যাবে না। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সমস্যা হচ্ছে সেটার জন্য তিনি আগে থেকেই
আমাদেরকে প্রস্তুত করছেন।
তাঁর আরেকটি
দর্শন হলো কেউ ঠিকানা বিহীন থাকবে না। প্রত্যেককে একটি ঘর পাবে এবং তিনি সেটা করেছেন
এবং এখনো করছেন। তিনি বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাও ব্যবস্থা করেছেন। দেশের ২১ টি জেলা মূল
অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। দার্শনিক সে জেলাগুলো মূল অর্থনীতির সঙ্গে এক করলেন পদ্মা
সেতুর মধ্য দিয়ে। দার্শনিকের চিন্তা সফল দেশে আজ মেট্রোরেল হচ্ছে, কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে।
এগুলোর প্রতিটির পিছনে একটি করে দর্শন আছে। দার্শনিক শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে
আজ আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন এই দার্শনিক শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী করেন এবং রাষ্ট্রীয়
দায়িত্বপ্রাপ্ত রাখেন। যাতে তিনি তার দর্শনকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন দেশে এবং আন্তর্জাতিক
ক্ষেত্রে। তাহলে বাংলাদেশের চেহারাও পরিবর্তিত হবে। সাথে সাথে বিশ্বের চেহারাও পরিবর্তিত
হবে। কেননা আগামী ১০০ বছর এরকম কোন দার্শনিককে বিশ্ব পাবে না।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।