১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যার ঘটনাটি অনেকের কাছে মনে হতে পারে শ্রেফ একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা নিছক ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ঘটিয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হত্যার ঘটনা রাজনীতিতে অনেক আছে, যেমন চিলির সালভাদর আলেন্দে হত্যা, ইরাকের বাদশাহ ফারুককে হত্যা, বার্মার অং সান সু চির পিতা অং সানকে হত্যা, মিসরের আনোয়ার সাদাতকে হত্যা। এসব হত্যা প্রচেষ্টায় অনেক সময় ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে আবার অনেক সময় হয়ওনি। বাংলাদেশে ১৫ই আগস্টের হত্যার একটা উদ্দেশ্য ক্ষমতার পালাবদল ছিল বটে, তবে তারচেয়েও বড় উদ্দেশ্য ছিল বাংলা নামের দেশটিকে চিরতরে শেষ করে দেয়া।
এটি মনে রাখতে হবে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যত ভোট পড়েছিল তার ৭৫ শতাংশ পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২৫ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে; জামায়াত, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি আওয়ামী লীগ বিরোধী পার্টিকে ভোট দিয়েছিল। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা, যার অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা। নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে এটি বোঝা যায়, যারা বাংলার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেছিলেন তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন আর যারা করেননি তারা অন্য দল বা অন্য মার্কা বেছে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম তো থাকবেই।
১৯৪৭ সালের পর থেকেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কখনো চায়নি এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, যেখানে পাকিস্তানের সব প্রদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাগ্য প্রদেশগুলো নিজেদের মতো করে নির্ধারণ করতে পারে। যদি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিরঙ্কুশ করা যেত, তাহলে এসব সমস্যার কিছুটা সমাধান হতো। তারা সব সময় চেয়েছে সব প্রদেশের ওপর পাঞ্জাবিদের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা চালু থাকুক। শাসকদের দৃষ্টিতে পাঞ্জাবিরা হচ্ছে পাকিস্তানের একমাত্র এলিট শ্রেণি আর বাকিরা তাদের প্রজা। এলিটরা প্রজাদের ওপর ছড়ি ঘোরাবে, তাইতো হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা ছিল আগের বাঙালিদের নিয়ে। একে তো তারা পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আর অন্যদিকে শিক্ষা-দীক্ষায় তারা অনেক অগ্রসর ছিল। এ কারণে পূর্ব বাংলার বাঙালিরা সেই ১৯৪৭ সাল থেকে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারের জন্য নিরন্তর লড়াই করেছে। পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ তেমন একটা রাজনীতি সচেতন ছিল না, এমনকি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা ছিল অনুল্লেখ্য। আর পাঞ্জাবের মুসলমানরা তো ব্রিটিশদের খেদমত করতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। দেশভাগের পর পাঞ্জাবে যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, তা ছিল অনেকটা লুটপাট ও জায়গা জমি দখলের জন্য। শুরুতে পাকিস্তানের অর্থনীতিও বহুলাংশে পূর্ব বাংলার পাট ও চা রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। পাকিস্তানের প্রথম ২৩ বছর বাঙালিরা নিজেদের ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, বাঙালি রাজনৈতিক নেতারা জেল খেটেছেন, যাদের মধ্যে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মোজাফফর আহমদ অন্যতম।
বাঙালি সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে নিজের অধিকার আদায় করতে চেয়েছে; কিন্তু তারপরও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রোষানলে পড়ে তারা নিগৃহীত হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যারা সত্তরের নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দেননি, তাদেরও অনেকেই এই যুদ্ধে গেছেন, রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। আর অন্যদিকে যারা সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, নৌকার সমর্থন করেছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধ শুরু হলে তার বিরোধিতা করেছেন, শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন আর বাংলাদেশ যাতে স্বাধীন না হয় তার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। তাদের মধ্যে খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষী, সংসদ সদস্য কাজী জহিরুল কাইয়ূম অন্যতম। অন্যদিকে দেশের ভেতর যারা কট্টর বামপন্থী, সহজ ভাষায় যাদের পিকিংপন্থী বাম বলা হয়, তারাও ছিলেন। তাদের দৃশ্যমান গুরু ছিলেন ন্যাপের মাওলানা ভাসানী; কিন্তু তাদের সব নির্দেশনা আসত চীনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে। চীন তখন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অন্যদিকে মাওলানা ভাসানী মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভাপতি হয়েছিলেন। প্রবাসী সরকারকে প্রত্যহ এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়েছে। আর এই কাজ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে করেছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ।
শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো বটে; কিন্তু যারা দেশের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক ষড়যন্ত্র করেছেন তারা বসে থাকবেন কেন? একদিকে একটি নতুন দেশের কঠিন যাত্রা। ভরসা একজনের ওপরই, যার নির্দেশে এই দেশের কোটি মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তার সামনে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ, যার অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি। একদিকে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করছেন, অন্যদিকে দেশ গড়ার কাজে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। আর এসবের মাঝে ষড়যন্ত্রকারীরা দ্বিগুণ উৎসাহে পরিশ্রম করেছে তাদের আগের ভেস্তে যাওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে। যেহেতু বাংলাদেশ এরইমধ্যে স্বাধীন হয়ে গেছে, সেহেতু বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানো সম্ভব নয়। সুতরাং যে মানুষটি বাংলাদেশের সমর্থক হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে, সেই বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দিতে পারলেই কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মৃত্যু ঘটবে বলে তারা ধারণা করে নিয়েছিল। কিন্তু যেভাবে বঙ্গবন্ধু একটির পর একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন আর দেশটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তাকে সরানো ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল। তাদের এই কাজে সহায়তা করতে এগিয়ে এলো তৎকালীন মার্কিন সরকার, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ আর পাকিস্তান সরকার ও তাদের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হলো জাতির জনককে।
নির্বোধরা উপলব্ধি করেনি একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করলেই একটি দেশ বা একটি জাতিকে হত্যা করা যায় না, বিশেষ করে সেই দেশ বা জাতি যদি মানুষের অন্তরে গেঁথে থাকে। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরপরই দেশব্যাপী তার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করল। গ্রেফতার হলেন প্রবাসী সরকারে নেতৃত্ব দানকারী নেতারা। স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়লেন প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারীদের মূল হোতা খন্দকার মোশতাক ও তার দোসররা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরপরই তিনি নিজেকে দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করলেন। যদিও এই সময় সংবিধান অনুযায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার কথা । সংসদও তখন বহাল ছিল। বহাল ছিল সংবিধান । পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের রক্তাক্ত লাশ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে তখন খন্দকার মোশতাক দেশে সামরিক আইন জারি করেন। ওই রাতে শপথ গ্রহণ করে ২১ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যার মধ্যে ১০ জন ছিলেন মন্ত্রী আর ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবাই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মাহমুদউল্লাহকে মোশতাক তার উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনর্বহাল করেন। তবে মোশতাকের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে অবাক করা অন্তর্ভুক্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী, যাকে বঙ্গবন্ধু রাতারাতি কর্নেল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষাসচিব ও ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার এবং দেশের দ্বিতীয় অর্থমন্ত্রী ড. এ আর মল্লিক, আর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা হাইকোর্টের এক সময়ের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে। এই তিনজন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু সব সময় স্যার বলে সম্বোধন করতেন। শিক্ষকদের কিভাবে সম্মান করতে হয় তা বঙ্গবন্ধু ঠিকই জানতেন, যেমনটি জানেন তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তারা আরো অনেকের মতো জীবনের মোহের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। মোশতাকের দুর্ভাগ্য, তিনি বঙ্গবন্ধু বিহীন যে বাংলাদেশের হর্তাকর্তা-বিধাতা হবেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ৬ নভেম্বর তাকে বুটের লাথির আঘাতে ফেলে দিয়ে এসব ষড়যন্ত্রের অন্যতম খেলোয়াড় ও বেনিফিশিয়ারি জেনারেল জিয়া নিজে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এই দেশে যতগুলো নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সবগুলোই হয়েছে জিয়া আর তার স্ত্রী বেগম জিয়ার শাসনামলে। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল ১৯৭৭ সালে বিমান বাহিনীতে সংগঠিত এক বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে হাজারের উপর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে গণফাঁসিতে ঝুলিয়ে অনেকটা বিনা বিচারে হত্যা করা যাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ।
১৫ই আগস্টের ঘাতকরা টের পেয়েছিল একজন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে বাংলাদেশের মৃত্যু হবে না। বাংলা নামের দেশটির জন্মদাতাদের মধ্যে আরো তো অনেকেই ছিলেন, যাদের মধ্যে আছে এক অনন্য উচ্চতার দেশপ্রেম আর মানুষের ভালোবাসা। একবার মোশতাক চেষ্টা করেছিলেন, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মনসুর আলী জানতে চেয়েছিলেন কোন ক্ষমতাবলে মোশতাক তাকে এই অফার দিচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে! মুখের ওপর মনসুর আলীর উত্তর ‘ইউ আর নট মাই প্রেসিডেন্ট’, আপনি আমার প্রেসিডেন্ট নন। ফিরে গেলেন মনসুর আলী কেন্দ্রীয় কারাগারে। সুযোগ পেলে আবার তাদের হাতেই জন্ম নেবে বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। মোশতাক আর ঘাতকরা সবাই বুঝে গেছে, তাদের সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ায়ন করতে হলে তাদের সবাইকেই সরাতে হবে। কিন্তু তাদের সবাই তো কারাগারে। আর কারাগার হচ্ছে সবার জন্য একটি স্বীকৃত নিরাপদ স্থান। কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকার রেওয়াজ নেই। তাহলে কিভাবে জাতির জনকের এসব সিপাহসালারকে পৃথিবী থেকে সরানো যায়? আবার শলাপরামর্শ, আবার ষড়যন্ত্র। একমাত্র রাষ্ট্রপতিই পারেন কারাগারে ঘাতকদের অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ অনুমোদন করতে। মোশতাকের সঙ্গে কথা বলে ৩ নভেম্বর ঘাতকরা রওনা হলেন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে। প্রাপ্ত সূত্র মতে, নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন মুসলেম উদ্দিন। তখনো ভোর হতে কিছু সময় বাকি। কারা ফটকে এসে কারারক্ষীকে হুকুম দিলেন কারাগারের দরজা খুলতে। দায়িত্ব সচেতন কারারক্ষী সাফ জানিয়ে দিলেন রাতের বেলায় কাউকে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়ার নিয়ম নেই আর অস্ত্র হাতে তো নয়ই। কিছু সময় বাকবিতণ্ডা চললো। অনড় কারারক্ষী। ঘাতকরা বলেন, বঙ্গভবনে ফোন করে রাষ্ট্রপতির আদেশ নিতে। অনন্যোপায় হয়ে কারারক্ষী ফোন করেন বঙ্গভবনে। ফোন রিসিভ করেন মেজর আবদুর রশিদ। তার হাত ঘুরে ফোন যায় মোশতাকের হাতে। মোশতাক হুকুম দেন, ‘ওরা যা করতে চায় করতে দাও।’ এই হুকুম দেয়ার জন্য মোশতাক আর তার পোষা দুর্বৃত্তরা অত রাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন।
মোশতাকের নির্দেশ পেয়ে কারারক্ষী কারা ফটক খুলতে বাধ্য হন। ভেতরে প্রবেশ করেন মুসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে কালো ড্রেস পরা এক দল ঘাতক। জাতীয় চার নেতাকে বিভিন্ন সেল থেকে এনে জড়ো করা হয় ১ নম্বর সেলে। তারপর ব্রাশফায়ার। বেজে ওঠে কারাগারের পাগলা ঘণ্টা। জেগে ওঠেন নাজিমউদ্দিন রোডের আশপাশের বাড়ির বেশির ভাগ মানুষ আর কারাগারের ভেতরের কয়েদিরা। ততক্ষণে সব শেষ। বঙ্গবন্ধুর চারজন সেনাপতি তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আর কামরুজ্জামানের পবিত্র আত্মা উড়ে যায় আকাশের দিকে। ইতিহাসের অনেক হত্যাকাণ্ড আর রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে রইল বিশ্ব। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হত্যাকাণ্ড ছিল নজিরবিহীন। আর এসব ঘাতককে পরবর্তীকালে নানা ভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী বেগম জিয়া ।
৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার জন্য বিচারপতি কে এম সোবহানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। জিয়া ক্ষমতা দখলের কিছুদিন পর সেই কমিশন বাতিল করে দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালতে। দীর্ঘ আট বছর শুনানির পর ২০০৪ সালে আদালত তার রায় দেন। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়। রায়ে অভিযুক্ত ২০ জন সেনা সদস্যের মধ্যে ১৫ জনকে শাস্তি দেয়া হয়, যার মধ্যে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড (তারা সবাই তখন পলাতক) আর ১২ জনের যাবজ্জীবন। উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ফলাফল হয় উল্টো। শুধু সার্জেন্ট মুসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। জেলে ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো নিরবে কাঁদছে ।
দণ্ডপ্রাপ্তদের অনেকেই এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা পলাতক। বলা বাহুল্য, এই রায়ে চার জাতীয় নেতার পরিবার তো বটেই, দেশের সাধারণ মানুষও খুশি হতে পারেনি।
ঘাতকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে জন্ম লাভকারী বাংলাদেশের মৃত্যু হয়েছিল ঠিক, তবে সেই মৃত বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তবিধৌত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পুনরুত্থান শুরু হয় ১৯৯৬ সালে, যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করেন। আবার ছন্দঃপতন হয় ২০০১ সালে, যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবার সরকার গঠন করে তার পিতার ও জাতীয় চার নেতার প্রত্যাশিত পথে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, যদিও নানা কারণে এবার তার পথচলা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন। কারণ এখন নিজ দলে অনেক ছোট-বড় খন্দকার মোশতাকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তিনি হাত দিয়েছেন দল থেকে সেসব জঞ্জাল অপসারণে। তবে যা যথেষ্ট নয় বলে আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষিরা ও বঙ্গবন্ধুর অনুসারিরা মনে করেন । জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের এই দিনে প্রার্থনা করি যেন তার হাত দেয়া কাজে তিনি সফল হন। তার হাতেই বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তার পিতা আর জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আত্মার শান্তি কামনা করছি।
জেলহত্যা দিবস মুক্তিযুদ্ধ ১৫ই আগস্ট
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:১১ পিএম, ০৮ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।
গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।
প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।
আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।
আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।
আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।
ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?
উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।
প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।
আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।
অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম
উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র।
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য।
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।