ইনসাইড থট

দিল্লির মাতৃভাষা দিবস ও মেডিক্যাল ট্যুরিজম

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে দেশীয় সংস্কৃতির উপস্থাপনা দেখার অনুভূতি অন্যরকম। ভারতের দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে এমনই এক অনুভূতিতে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। রোমের কোলোসিয়াম, জার্মানি-অস্ট্রিয়া-সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে লেক কনস্টেন্সের তীর, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, নিউইয়র্কের মেডিসিনস্কয়ার, এমনকি লন্ডনের টেমস নদীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে বাংলায় কথা বলা মানুষ পেলে চমকে উঠেছি। উপযাচক হয়ে আলাপ করেছি। তাদেরকে বড্ড আপন মনে হয়েছে। আলাপের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকের সঙ্গে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্ব। দিল্লিতে বিশেষ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান।

এই একুশ আমাদের আবেগ, আমাদের অনুভূতির জায়গা। শৈশবে গ্রামের স্কুলে কলাগাছ দিয়ে রাত জেগে শহীদ মিনার তৈরি, মানুষের বাগান থেকে ফুল চুরি করে ভোরে প্রভাতফেরির পর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর স্মৃতি আজও জ্বলজ্বলে। রাজধানীতে পড়ালেখা করতে এসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রথম অভিজ্ঞতা জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি সারাদিন বরাদ্দ ছিল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এবং বাংলা একাডেমি বইমেলার জন্য। এমন একটি দিনে দেশমাতৃকা থেকে হাজার মাইল দূরে দিবসটি উদ্যাপন করতে পারার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে জীবনের অন্যতম ঘটনা।

ঘটনাক্রমে সেদিন আমাদের অবস্থান ছিল দিল্লিতে। প্রিয়তমা স্ত্রীর একটি জটিল রোগের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল সেখানে। তাঁর বুকের বাম পাশে ব্যথা থেকে শুরু সেই দুঃসহ তিনটি সপ্তাহ। ডাক্তারের কাছে যাওয়া, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে একটি আশঙ্কার জানান দেওয়ার পর আমার পরিবারের কি অবস্থা হয়েছিল তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। তিনটি সপ্তাহের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের কেটেছে উদ্বেগ এবং অজানা আতঙ্কে।

দৈনন্দিন সব কাজই হয়েছে অনুভূতিহীন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে। রাস্তা হেঁটেছি যেন গন্তব্যহীন উদ্দেশ্যে। খাদ্য গ্রহণ করেছি ক্ষুধা ও চাহিদাহীন রুটিন কাজে। কথা বলেছি আবেগ-অনুভূতিহীন কণ্ঠে। শীলার মুখের দিকে তাকানো যেত না। ছেলে-মেয়েরা হাসতে ভুলে গিয়েছিল। পৃথিবীর সবকিছু মনে হয়েছে অর্থহীন। 

২৫ বছর আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হৃদয় দেওয়া- নেওয়ার প্রক্রিয়ায়। এর পর আমার ছোট্ট একটি সংসার হয়েছে। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকার পরও সে ছোট্ট সংসারকেই বেছে নিয়েছিল কর্মক্ষেত্র হিসেবে। তিলে তিলে গড়ে তুলেছে সাজানো-গোছানো একটি সংসার। আমার ভূমিকা শুধু তাকে সঙ্গ দেওয়া। ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি, মান-অভিমান বাদ দিলে আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমরা একটি সুখী পরিবার। এর মধ্যে তার অসুস্থতা যেন সবকিছু উলট-পালট করে দিতে চেয়েছে।

বাড্ডা এএমজেড হাসপাতালের তরুণ ডাক্তার সায়েমের চিকিৎসা পদ্ধতি, গভীর আত্মবিশ্বাস আমাদের সাহস যুগিয়েছে। পাশে ছিলেন আরও তিন ভাগ্নে ডাক্তার সামিদ, মনির এবং ফারহান। সিটি স্ক্যানের মারাত্মক ইঙ্গিতেও ডা. সায়েম খুব আত্মবিশ্বাসী। আরও পরীক্ষায় যাওয়ার আগে তিনি মাত্র এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। শুরু হলো তার চিকিৎসা। এর মধ্যে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, আমাদের সম্পাদক এবং নিজের মনের তাগিদে ভারতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেই।

ভারতের হাসপাতাল নির্বাচন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং যাওয়ার সকল প্রস্তুতিতে দারুণভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম সহকর্মী-বন্ধু, বর্তমানের কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, সাংবাদিকতা পেশায় খুব আদরের ছোট ভাই, বর্তমানে দিল্লির প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ। সন্তোষ আমাকে এই বলেন, ‘যাই হয়ে যাক, যত অর্থের প্রয়োজন হয় আমি পাশে আছি।’ তিনিই দিল্লি মেদান্ত হাসপাতালের বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বে নিয়োজিত অমায়িক, সদাহাস্য এবং মনোবল জোগান দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী প্রীতিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন।

যোগাযোগ করি এক সময় বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অন্ধ এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শে আপোসহীন শাবান মাহমুদ সোজাসাপ্টা কথা বলা এবং মাথা উঁচু করে চলা মানুষ। এসব গুণ এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তাকে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা দিয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ ভোটে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এ কারণেই। প্রধানমন্ত্রী তাকে দিল্লির প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব দিয়েছেন।

দিল্লি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে এই দায়িত্ব তিনি সঠিকভাবেই পালন করছেন। শাবান আমাকে সাহস যুগিয়েছেন প্রচ-ভাবে। বলেছেন, ‘ভাবীকে নিয়ে দিল্লিতে আসেন, বাকি দায়িত্ব আমার।’ 

শাবানের কাছে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তিনি দুটি হাসপাতাল থেকে মতামত জোগাড় করে দিয়েছেন। সন্তোষ এবং শাবানের মতামতে শেষ পর্যন্ত ‘মেদান্ত দি মেডিসিটি’ হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেভাবেই শুরু হয় ভিসা জোগাড়ের প্রক্রিয়া। এএমজেড হাসপাতালের তরুণ ডাক্তার সায়েমের চিকিৎসায় শীলার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়। তিনি আরও আত্মবিশ^াসী হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে যে ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে আমার বিশ্বাস তেমন কিছু নয়।’ এর মধ্যে ভিসা পেয়ে যাই।

সময় নষ্ট না করে একদিনের নোটিসে বিমানের টিকিট কেটে রওনা হয়ে যাই দিল্লির পথে। বাসায় দুটি ছেলে-মেয়ে অয়ন-অন্তিপা। আগে কখনো একা থাকেনি। বিপদে তারাও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। আমাদের সাহস জোগায়। খুব আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলে, ‘তোমরা যাও, আমাদের জন্য চিন্তা করো না। আমরা সব কিছু ম্যানেজ করে থাকতে পারব।’ বিকল্প কিছু নেই। তাদের আত্মবিশ^াসের প্রতি ভরসা রেখে চললাম দিল্লি মেদান্ত হাসপাতলের উদ্দেশে। মেদান্ত হাসপাতাল দিল্লি শহর থেকে একটু দূরে হরিয়ানা রাজ্যে গুরুগ্রাম এলাকায়। প্রীতিশ আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন হাসপাতালের ঠিক উল্টোদিকে ‘গাজিবো ইন’ হোটেলে। হোটেল বললে ভুল হবে, অনেকটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউস। ওখানেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। খরচ নাগালের মধ্যেই। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় বিমানবন্দরে গাড়ি অ্যাটেনডেন্স পাঠানো হয়। ফেরার পথে আবার পৌঁছে দেওয়া হয় বিমানবন্দরে।

বিমানবন্দরে আমাদের রিসিভ করলেন অ্যাটেনডেন্স সৌরভ। হোটেলে পৌঁছে দিয়ে একটি সিম কার্ডের ব্যবস্থা করে রাতে চলে যায় সৌরভ। হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ হলে প্রীতিশ আমাদের জন্য গাড়ি পাঠায়। অনেকটা শঙ্কা, কিছু ভরসা নিয়ে দুরু দুরু বুকে পৌঁছে যাই হাসপাতালে। প্রথম ডাক্তার  থোরাসিক সার্জন বেলাল বিন আসাফ। তিনি ঢাকায় করা সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এর মধ্যে শীলার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

তিনি আবারও সিটি স্ক্যান করতে পাঠান। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেওয়ার কথা পরদিন। তিনি বললেন, আপনারা স্ক্যান করে চলে আসেন, আমি হাসপাতালের সার্ভার থেকে রিপোর্ট দেখে নেব। স্ক্যান করার সিরিয়াল পাওয়া গেল দুপুরের পরে। স্ক্যান করে আবারও ডা. বেলালের কাছে। রোগীদের সিরিয়াল ভেঙে তিনি ডেকে নিলেন আমাদের। সার্ভার থেকে রিপোর্ট নিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করলেন সময় নিয়ে। আমাদের তখন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। সুখবর দিলেন ডাক্তার।

আগের চেয়ে ভালো, ওষুধ রেসপন্স করেছে। ঢাকার চিকিৎসার লাইন সঠিক ছিল। আশ^স্ত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার তরুণ ডাক্তার সায়েমের জন্য কিছুটা গর্বও অনুভূত হলো। বুক থেকে নেমে গেল জগদ্দল পাথর। ওষুধ সমন্বয় করার জন্য তিনি পাঠালেন চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ভিবেক সিং-এর কাছে। তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। তাকে আর পাওয়া গেল না। পরদিন তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেল দুপুরের পরে। তখনো সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পাইনি।

তিনিও হাসপাতালের সার্ভারেই স্ক্যান ফিল্ম পরীক্ষা করলেন। তিনিও বললেন ঢাকার চিকিৎসা ঠিক আছে। তিনি আর দুটো ওষুধ যুক্ত করে বললেন, আমরা আরও নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য চার সপ্তাহ পর আবার স্ক্যান করব। অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে হোটেলে ফিরলাম। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতের বেশ কিছু হাসপাতালের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। মেদান্ত একটু আলাদা। গুছানো, পরিচ্ছন্ন, রোগীদের প্রতি যত্নশীল, আধুনিক ও পরিকল্পিত রোগী ব্যবস্থাপনা। দেশী-বিদেশী প্রচুর রোগী রয়েছে সেখানে। সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে কারও তেমন ভোগান্তি নেই।

বিশ্বের অনেক নামি-দামি চিকিৎসক রয়েছেন। তারা খুব যত্ন করে সময় নিয়ে রোগী দেখেন। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি, ভুল রিপোর্টের সম্ভাবনা কম। খরচ বাংলাদেশের বড় কয়েকটি হাসপাতালের চেয়ে বেশি নয়। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা সবাই সন্তুষ্ট। বিশেষ করে প্রীতিশের সার্ভিস অনন্য। এমন অভিজ্ঞতায় দেশ ছেড়ে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার কারণ বুঝা যায়।

বিমানের ফিরতি টিকিটে আমাদের জন্য আরও ২/৩ দিন সময় রয়েছে। শাবান চলে গেছে দিল্লির বাইরে সরকারি কাজে। হোটেলে দেখতে এলেন শীলার ছোটবেলার বান্ধবী ফারাহ নাজিয়া সামি (ঝুমু)। ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ২৫ বছর পর যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ঝুমুর স্বামী আহমেদ সামি বর্তমানে দিল্লিস্থ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর। ছোটবেলার বন্ধুর অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে দুজন ছুটে আসেন আমাদের হোটেলে।

ততক্ষণে আমাদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমেছে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে দুই বন্ধুর পুনর্মিলন আমরা উপভোগ করি দারুণ আড্ডায়। সামি ভাই আমার মতোই আড্ডাবাজ এবং আমুদে মানুষ। বাম ছাত্র রাজনীতি এবং স্কাউট অতীতের সামি ভাই দারুণভাবে মিস করেন বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ আড্ডার পর আমাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা গভীর রাতে বাসায় ফিরেন।  দেশে ফিরতে আমাদের হাতেও দুইদিন সময় ছিল। ঝুমুর বাসায় যেতে আপত্তি জানালাম না। অভিজ্ঞতার জন্য দিল্লি মেট্রোরেলের ইয়েলো লাইনে চড়ে চলে গেলাম তার বাসায়। ঝুমু ছাত্রজীবন থেকেই ভালো গান করেন। তাঁর গানে সামি ভাইয়ের দারুণ উৎসাহ। বাসায় হোম মিউজিক সিস্টেম স্থাপন করে দিয়েছেন। সামি ভাই চাকরির সূত্রে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। দিল্লির আগে পাঁচ বছর ছিলেন ফিজি। এর আগে মালয়েশিয়া। আরও আগে বিভিন্ন দেশ।

বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হস্তশিল্প দিয়ে গোটা বাসা নিপুণ হাতে সাজানো। শুরু হলো আড্ডা। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতি আড্ডার বিষয়বস্তু। একুশের আগের সারারাত নিয়মিত শহীদ মিনারে কাটানো। চেতনায় দীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৩৭ দিন বয়সের মেয়েকে নিয়ে মধ্য রাতে প্রভাতফেরির গল্প। বন্ধুর মন ভালো করার জন্য ঝুমু পরিবেশন করলেন বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান। ভরাট গলায় নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ কবিতা আবৃত্তি করলেন সামি ভাই। ঝুমুর নিজ হাতে রান্না করা দেশীয় খাবারে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম আমরা। দিল্লি ফিরে শাবান মাহমুদ আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশ দূতাবাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। সামি ভাইয়ের পরিবারকেও যুক্ত করে নিলাম। তাদের সেকি উত্তেজনা। এতদিন পর তারা একুশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন, তাও আবার বিদেশের মাটিতে। আমরা গিয়েছি চিকিৎসার জন্য। একুশের সাজসজ্জা নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ঝুমু ‘অ আ ক খ,  শহীদ সালাম রফিক বরকতের নাম লেখা সাদা-কালো প্রিন্ট শাড়ি বের করে দিলেন নিজের আলমারি থেকে। নিজের জন্যও তেমনই একটি পছন্দ করলেন। শাড়ির সঙ্গে কালো রঙের ব্লাউজ, পেটিকোট। এগুলো নিয়ে আমরা চলে এলাম হোটেলে। পরদিন বিকেলে দুই বান্ধবী এবং সামি ভাই একুশের সাজে সজ্জিত হয়ে দূতাবাসে উপস্থিত। ভারতে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হলো একুশের সন্ধ্যা। তিনি তার বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করে শোনালেন দিল্লিতে নিয়োজিত ইউনেস্কো প্রতিনিধি।

এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আলোচনা সভা। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ গণসংগীত এবং সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের নৃত্য দিয়ে শুরু হয় সন্ধ্যার মাল্টি কালচারাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ছাড়াও কিরগিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, জাপান ও হাঙ্গেরীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল এতে অংশগ্রহণ করে। মঞ্চের পিছনের স্ক্রিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, জাতীয় পতাকা হাতে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী বাংলার গণসংগীত। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দিল্লিতে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক, আমন্ত্রিত অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মহান একুশের এই অনুষ্ঠানে বসে মনে হলো হাজার মাইল দূরে যেন এক খ- বাংলাদেশ।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন