ইনসাইড থট

"উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে বাজারজাতকরণ কৌশল"


Thumbnail

মুদ্রাস্ফীতির অতি সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে বিগত সময়ে ১০০ টাকা দিয়ে আমি যে পণ্য পেতাম এখন ১০০ টাকা দিয়ে একই পণ্য আরো কম পাচ্ছি। এতে সীমিত আয়ের লোকদের জীবন নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক পণ্য কেনাকাটা বাদ দিতে হয় অথবা কম কিনতে হয়। বর্তমানে স্থিমিত তিন বছর মেয়াদী "ওমিক্রন সংক্রমণ" এবং পরবর্তীতে চলমান "ইউক্রেন সংকটের" কারণে সৃষ্ট বিশ্ব সরবরাহ ব্যবস্থার বিপত্তি, জ্বালানি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এই মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। মূল্যস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতি এবং সমাজ জীবনে ব্যাপক। মুদ্রাস্ফীতির সুফল এবং কুফল দুটোই আছে। এ বিষয়ে সমষ্টিক অর্থনীতির ছাত্রদের পরীক্ষায় প্রশ্নও  আসে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ এবং এর পরিমাপ পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক আছে। সরকারি হিসেবেই আমাদের চলমান মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশেপাশে। পৃথিবীর অনেক দেশে এই হার ৩০, ৫০, ৭০ এবং ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত আছে। 

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এমনটি হচ্ছে এই বিষয়টি সরকার এবং ব্যবসায়ের পক্ষ থেকে জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করা হলেও যেহেতু এই বিষয়টি দ্বারাই জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত,  এই বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে এবংসরকার এবং ব্যবসায়কে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা লুটপাট এবং কথিত বিদেশে পাচার, ঋণ খেলাপীর পরিমাণ বাড়লেও এতে সাধারণ জনগণের আপাতত সরাসরি কোন ক্ষতি হচ্ছে না । একজন গ্রাহকও বলতে পারবেনা সে ব্যাংকের টাকা রেখেছিল,  কিন্তু  ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে টাকা পায়নি। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর কারণে শতকরা একজন লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। প্রস্তাবিত উপাত্ত সংরক্ষণ আইনের কারণে ব্যক্তি বিশেষ তাঁর উপাত্ত চুরি হওয়ার আতঙ্কেও নেই।  বিভিন্ন প্রকল্পের বড় বড় দুর্নীতি এবং ঘুষ দ্বারা দেশের ক্ষতি হলেও ক্ষীণদৃষ্টিতে ব্যক্তি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মনে করে না। মুদ্রাস্ফীতির কারণে যারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাঁরা এ বিষয়টাকেই বেশি মনে রাখবে। বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু, ট্যানেল, যোগাযোগ ও সরকারের অন্যান্য পরিসেবা থেকে যে উপকার পাচ্ছে সেটাকে ছাড়িয়ে যাবে মুদ্রাস্ফীতির ক্ষতি। মানুষ উপকার অপেক্ষা অপকার বেশি মনে রাখে। ২০০২ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ক্যায়েনম্যান বলেছেন, "মানুষ ঝুঁকি নিতে চায় না, লাভের চেয়ে ক্ষতিকে অনেক বেশি ঘৃণা করে। উপকারের চেয়ে অপকারকে বেশি গুরুত্ব দেয়।...মানুষ পুরাতন অতীত ভুলে যায়, বর্তমানের প্রতি বেশি সংবেদনশীল"।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আলোচনায় গণমাধ্যম এবং টেলিভিশনে অধিকাংশ আলোচনাতেই ক্রেতাদের দুর্দশার কথাই উঠে আসে ।  অন্যান্য পক্ষগুলো যেমন শিল্প উৎপাদনকারী, ছোট ব্যবসায়ী, ছোট ও নুতন উদ্যোক্তা, এমনকি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমস্যা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। সীমিত আয়ের ক্রেতাদের মুদ্রাস্ফীতি জনিত দুর্দশার প্রতি সহানুভূতি রেখেই আজকের বিষয় উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মার্কেটারদের সমস্যা আলোচনা করা।

বর্তমানে যে মুদ্রাস্ফীতি চলছে তা সহসা আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না। বৈশ্বিক পর্যায়ে সেটা ১৯৮০ দশকের মুদ্রাস্ফীতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা উভয়ের জন্যই এটা একটা দারুন সংকট। ৪০ বছর আগে যারা (আকিজ সাহেব) এই মুদ্রাস্ফীতি দেখেছিলেন তাঁদের অনেকেই এখন বেঁচে নেই, এখন যারা ব্যবসা করছেন তাঁরা (নাসির, বশির) কখনো এমন দুরাবস্থা মোকাবেলা করেনি। বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপকগণ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা সময় অতিক্রম করছেন। এক সময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ১৪-১৫ শতাংশ হারে ব্যাংকের ঋণ পেলেও বলতো, "আলহামদুলিল্লাহ"। এখন সর্বোচ্চ নয় শতাংশ  সুদেও ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে চাচ্ছেন না (যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি সেজে বিদেশে টাকা পাচার করতে চায় তাদের বাদ দিতে হবে। তবে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়লেও এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কিছু ব্যবস্থাও দেখা যাচ্ছে। গত ১ এপ্রিল দৈনিক সমকাল পত্রিকায় খবরে বলা হয়েছে, 'জেল থেকে বাঁচতে এবং আদালত কর্তৃক রিসিভার নিয়োগ এবং  দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা এড়ানো সহ পাঁচ কারণে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের ৫৪২ জন ঋণ খেলাপি ১২শ কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়েছে)।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বজজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্টজনদের ইতিহাসের নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই কান্তিকালে কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ক্রেতা কি আচরণ করছে বা করবে এবং এর সাথে বারজাতকরণ কৌশলের সমন্বয় করে তাঁদের নিকট ভ্যালু পৌঁছে দেয়া এবং প্রতিযোগীদের সাথে তার ভিন্নতা বজায় রাখা। এই সংকট মোকাবেলায় একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগকেই এই সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দিতে হবে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময় কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের লোকদের কাজ হচ্ছে ক্রেতার অবস্থা অনুধাবন করে, ক্রেতার অবস্থা মূল্যায়ন করে উপযুক্ত কর্মকৌশল নির্ধারণ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে টিকে থাকার সবচেয়ে বড় কৌশলী হচ্ছে, 'কম খরচে ব্যবসা করা'। অধ্যাপক Michael  Porter যেটাকে বলেছেন, "overall cost leadership"। এর জন্য যা করতে হবে:

(১) নির্মোহভাবে খরচ ও মুনাফা  পর্যালোচনা করতে হবে।
(২) magnifying glass দিয়ে খরচকে দেখতে হবে। ইতোমধ্যেই না করে থাকলে খরচ পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনে "QuickBook" এর মত সফটওয়্যার ব্যবহার হবে।
(৩) সৃজনশীল হোন। প্রয়োজনে খরচ স্থিতিশীল রাখার জন্য পণ্য ও সেবার সংখ্যা কমিয়ে দিন। যেমন সাপ্তাহে একদিন সার্ভিস সেন্টার বন্ধ রাখুন। ক্রেতাদের জন্য সেলফ সার্ভিস এর ব্যবস্থা করুন। যেমন রেস্টুরেন্টে QR পদ্ধতিতে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। (Domino's ক্রেতা এসে পিজ্জা নিয়ে গেলে ডিসকাউন্ট দেয়। কিছু কিছু হোটেল অতিথি অনুরোধ জানালেই কেবল হোটেলের পক্ষে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঠায়।)
(৪) লেনদেন প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষিপ্ত এবং স্বয়ংক্রিয় করুন। প্রযুক্তির সাহায্যে কি কোন কাজ করা যাবে, যা আপনি বা আপনার কর্মচারী করছে ? বড় ধরনের প্রভাব না হলে কিছু কাজ কি বাদ দেয়া যাবে?
(৫) কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ান। কর্মীদেরকে সন্তুষ্টও রাখতে হবে। কর্মী হারানোর ঝুঁকি নেয়া যাক ঠিক হবে না। তাঁদের জন্য কার্যসম্পাদন ভিত্তিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। 
(৬) অপচয় রোধ করে নির্মোহভাবে খরচ কমাতে হবে। এমন কিছু ক্রয় করবেন না, যা থাকলে আপনার ভালো লাগে (nice to have)। জিনিসটা কি কাজে লাগে তা পরখ করে দেখুন। এমন কিছু কি কিনেছেন যা আপনি সহসায় ব্যবহার করবেন না। কোথাও কি এমন চাঁদা দিচ্ছেন, যাদের সেবাটি এ সময়ে আপনার না নিলেও চলে।
(৭) জুম মিটিং করুন। সামনাসামনি ভ্রমণ করা বা দেখা হওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা ভেবে দেখুন। কৌশলগত খরচ এবং মামুলি ধরনের খরচের পার্থক্য নির্ণয় করুন।
(৭) যদি নিশ্চিত হন দাম আরো বাড়বে সেক্ষেত্রে সুযোগ থাকলে এখনই কাঁচামাল মজুদ করুন। বাল্ক/লট ধরে কিনুন।
(৮) মুদ্রাস্ফীতির সময় নগদ টাকা ধরে রাখলে লোকসান বাড়বে, নগদ দ্রুত অবমূল্যায়িত হয়। অপব্যবহারযোগ্য নগদ থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য সম্পদ সংগ্রহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করুন। মুদ্রাস্ফীতি স্বল্প বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে চিরস্থায়ী হবে না। সুযোগ থাকলে ঋণ বা বাকিতে ক্রয়ের পরিশোধ বিলম্বিত করুন। এতে আপনার আর্থিক দায় পরিষদের পরিমাণ কমে যাবে। সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, সুযোগ থাকলে সেটা নেয়ার চেষ্টা করুন। 
(৯) কোম্পানির বর্তমান ক্রেতাদের প্রণোদিত করুন। নতুন ক্রেতা ধরার চেয়ে পুরাতন ক্রেতাকে ধরে রাখার খরচ অনেক কম। কাস্টমার লয়ালিটি প্রোগ্রাম,  বাট্টা এবং অন্যান্য অফার অব্যাহত রাখুন (Mitchell Leiman,2022)।

বাজারজাতকরণ মিশ্রণ কৌশল 

(১) পণ্য (product): উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময়ে পণ্য এবং ব্যবসায় খাতের সমন্বয় অব্যাহত রাখতে হবে। যেকোনো ব্র্যান্ডের মধ্যমণি হচ্ছে পণ্য। ব্র্যান্ডের অবস্থানের জন্য মৌলিক উপাদানই হচ্ছে পণ্য। এ সময়ের উদ্ভাবনই হতে পারে মূল ভরসা। ক্রেতার কথা শুনতে হবে, পণ্য হচ্ছে ক্রেতার সমস্যার একটি সমাধান। Big data বিশ্লেষণ করে ক্রেতাদের মনোভাব ট্র্যাকিং করা এখন অনেক সহজ। যেমন সুপার সপ থেকে পণ্য ক্রয়ের সময় ক্রেতারা কোন্ দিক থেকে কোন্ দিকে ঝুঁকছে তা আজকাল সহজেই জানা যায়। সেই অনুযায়ী পন্য পোর্টফলিও সমন্বয় করতে হবে। উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। পণ্য বা সেবা কোন ক্ষেত্রেই উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। যেহেতু আর্থিক চাপ সামলাতে গিয়ে ভোক্তাদের পছন্দ বদলে যাচ্ছে তাই পণ্যকে আপডেট রাখা আরো বেশি প্রয়োজন। উদ্ভাবনী কাজে ভোক্তাকে 'কো-ক্রিয়েটর' হিসেবে গ্রহণ করুন। এতে নতুন উদ্ভাবিত পণ্য ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। 

অস্থিরতা (volatility) অনেক সময় সুযোগ নিয়ে আসে। ভিন্ন সেগমেন্টে কম খরচের সরবরাহকারী হিসেবে যাওয়ার কথা ভাবুন। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিতে বিরক্ত হবেন না। এতে আপনার দৃষ্টির বাইরে থাকা ক্রেতার সন্ধান পেয়ে যেতে পারেন। এটা বাজারজাতকরণ প্রচেষ্টা কমানোর সময় নয়। ক্রেতাকে প্রদেয় আবশ্যকীয় সেবার ব্যাপারে অবহেলা করা যাবে না। বহু শিল্পে কাস্টমার সার্ভিসের উপরেই ক্রেতার সন্তুষ্টি বহুলাংশে নির্ভর করে ।

(২) মূল্য(Price): সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। মূল্যবৃদ্ধিকে ক্রেতা, ডিলার, এমনকি নিজস্ব বিক্রয় কর্মীরাও ভালোভাবে নেয় না; তা জেনেশুনেই কোম্পানিগুলো মূল্য বৃদ্ধি করছে। মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদন ও বিতরণ খরচ বেড়ে যাওয়া। ক্রমবর্ধমান খরচ কোম্পানির মুনাফাকে কমিয়ে দেয়, আর কোম্পানি তখন বাধ্য হয় নিয়মিত মূল্য বাড়াতে থাকে। কোম্পানি অনেক সময় খরচ আরো বৃদ্ধি পাবে এ আশঙ্কায় যতটুকু খরচ বেড়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে মূল্য বাড়ায়। কোম্পানিগুলো এ সময়ে সাধারণত তার ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী মূল্য চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায় না। কারণ তাঁদের ভয় থাকে খরচ বৃদ্ধির কারণে  মুনাফা নাও হতে পারে। অন্য যে উপাদানটি অবদান রাখে তা হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে (রোজা, ঈদ, পূজা) উপলক্ষ করে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা। যখন কোন কোম্পানি তার ক্রেতাদের চাহিদার পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে না তখন মূল্য বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো ক্রেতাদের জন্য পণ্যের কোটা নির্ধারণ করে দেয়। ক্রমবর্ধমান খরচের সঙ্গে তাল রাখার উদ্দেশ্যে কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো পথ খোলা আছে। যে পণ্যটি বেশি চলে তার বাট্টা প্রত্যাহার করে এবং পণ্য লাইনে বেশি দামি পণ্য যোগ করে প্রায় অদৃশ্যভাবেই মূল্যবৃদ্ধি করা যায়। অথবা খোলাখুলি ভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ানো যায়। অতিরিক্ত বর্ধিত মূল্য ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায় করার সময় পণ্যটি যেন "বাটালি" বা "মূল্য ডাকাতের" ভাবমূর্তি না পায় সেদিকে কোম্পানিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোম্পানি কেন মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে তা ব্যবসায়ী এবং শিল্প ক্রেতাদেরকে (business and industrial buyers) জানানোর জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে । কোম্পানির বিক্রয় কর্মীদের উচিত ক্রেতারা কিভাবে পণ্যটি মিতব্যয়িতার সাথে পেতে  এবং ব্যবহার করতে পারে সে ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ দেয়া।

অনেক কোম্পানি মূল্যবৃদ্ধি না করেও উচ্চ খরচ অথবা চাহিদাকে মোকাবেলা করে। কোম্পানি পণ্যটিকে সংকুচিত করতে পারে। মিষ্টি বা চকলেটের  ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটি করা হয়।  বিগত বছরগুলোতে দুধের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেলেও ঢাকা শহরের কিছু দোকানে রসগোল্লার একক প্রতি দাম বাড়েনি,  ক্রমশ আকৃতি ছোট হচ্ছে। আগের দামে প্যাকেটে কম পণ্য দেয়া কৌশলটাকে বাণিজ্যিক পজিশন হিসেবে "shrinkflation" বলা হয়। দাম না বাড়িয়ে খরচ কমানোর  জন্য আরও যেসব পদক্ষেপ নেয়া যায় সেগুলো হচ্ছে কম দামি উপকরণ ব্যবহার করা (পুস্তকের ক্ষেত্রে অফসেট কাগজের বদলে সাধারণ সাদা কাগজ বা নিউজ প্রিন্ট ব্যবহার করা), পণ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে  তৈরি (খাবারের ক্ষেত্রে দুই একটি মসলা বাদ দেয়া), প্যাকেজিং খরচ কমানো (কন্টেইনারের বদলে সাদামাটা পলিথিনের  প্যাকেট ব্যবহার), অথবা সেবার পরিমাণ কমিয়ে দেয়া (বিনা খরচায় ক্রেতার বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেয়ার বদলে ক্রেতাকে দোকান থেকে পণ্য নিয়ে যেতে বলা), অথবা কোম্পানিটি তার পণ্য ও সেবার একক বান্ডিল খুলে পণ্য ও সেবা প্রত্যেকটির জন্য পৃথক মূল্য ধার্য করা (যেমন IBM এখন প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক মূল্য ধার্য করে, আগে যা কম্পিউটারের বান্ডেলে অন্তর্ভুক্ত ছিল), অনেক রেস্টুরেন্ট ডিনার ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ থেকে সরে এসে মূল্য নির্ধারণের  cafeteria approach, 'যা খাবেন তার মূল্য দিতে হবে' ব্যবহার করছে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্রেতার ব্যয়ের ইচ্ছা অনুধাবন (willingness to pay)। বর্ধিত দামে ক্রেতা কতটুকু পণ্য কিনবে সেটা নির্ভর করবে পণ্যটি তাঁর নিকট যতটা গুরুত্বপূর্ণ(ভ্যালু)। প্রতিযোগীর পণ্যের সাথে তুলনা করেই তাঁরা কোন কোম্পানির পণ্যকে 'বেটার অপশন' হিসেবে নির্বাচন করবে। মূল্য সমন্বয়ের যথার্থ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা (মূল্য ,আয় ও আড়াআড়ি) যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। বিক্রেতা তাঁর পণ্যের মূল্য এক ধাপে অথবা দফায় দফায় বাড়াতে পারে। যেখানে পণ্যের ব্যাপক মানোন্নয়ন সম্ভব নয় সেখানে একধাপে বাড়ানোই ভালো। ক্রেতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকলে তার নিকট মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, অন্যথায় ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। B2C এর তুলনায় B2B ক্ষেত্রে মূল্য সংক্রান্ত ব্যাখ্যা প্রদান বেশ ফলপ্রসূ। মূল্য সংক্রান্ত যোগাযোগ সচ্ছ হতে হবে, ঘোষণা আকারে প্রকাশ করতে হবে এবং মূল্যবৃদ্ধির গল্পটা ক্রেতার নিকট বোধগম্য হতে হবে। মূল্যস্ফীতিকে দোষারোপ করবেন না। নতুন বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করুন। পন্য সংক্রান্ত দুই একটি গোপন তথ্য থাকলে বলুন, যা আগে বলেননি। উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ী না করে পণ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে মূল্য সম্পর্কে  ক্রেতাকে অবহিত করুন। উচ্চমূল্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না। 

বিনীতভাবে শর্তগুলো বর্ণনা করুন। আপনার বার্তা স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার হতে হবে এতে গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। তাঁদের জানিয়ে দিন (এসএমএস করুন)। একটি নতুন বিষয়বস্তু বা বৈশিষ্ট্য অফার করুন যা ইতিমধ্যেই ছিল, কিন্তু গ্রাহকদের জানানো হয়নি। আপনি যে মান অফার করেন তার উপর ফোকাস করুন। পন্যের গুণমান হাইলাইট করুন। ক্ষমাপ্রার্থনা না করেও বিনয়ী হোন; একটি প্রশংসিত উপায়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করুন।

(৩) স্থান (place): উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে পণ্য সুবিধাজনক স্থানে পাওয়া ব্র্যান্ড সফলতার অন্যতম শর্ত। মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রেতা ভিন্ন খুচরা চ্যানেলে চলে যেতে পারে। করোনা কালের মত ই-কমার্স বাড়তে পারে । নিম্ন চ্যানেলে ক্রেতা চলে যেতে পারে (এই সময় ফুটপাতে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে)।

(৪) প্রমোশন (promotion): উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময়ও বিজ্ঞাপন খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করা যাবে না। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভোক্তার সাথে কোম্পানির আবেগীয় বন্ধন সুদৃঢ় রাখা যায়। বিজ্ঞাপনে ব্যয় হ্রাস বা বন্ধ করলে ব্র্যান্ডের অপরনীয় ক্ষতি হতে পারে। মার্কেট শেয়ার কমে যাওয়া, ক্রেতা সচেতনতাকে দুর্বল করা, বাজারে অবস্থান এবং ক্রেতার সংযোগ দুর্বল করে দিতে পারে। ২০১৮ সালে পরিচালিত  Ehrenburg -Brand Institute এর এক গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘদিন যাবত যে সকল ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপন বন্ধ রেখেছে তাদের গড় বিক্রি কমেছে প্রথম বছরে ১৬ শতাংশ, দুই বছরে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির সময় প্রমোশনের চ্যানেল সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। সংকটের সময় ক্রেতারা যে মিডিয়া বেশি ব্যবহার করে সে অনুযায়ী মিডিয়ার প্ল্যান সমন্বয় করতে হবে। ক্রেতারা আবেগীয় পন্য সহজে ছাড়তে পারে না। অপর দিকে এময়ে আর্থিক সংকটে থাকা ক্রেতারা নিম্নস্তরের ব্র্যান্ডের পন্য কেনে, যেগুলো গ্রহণযোগ্য মানের। বিজ্ঞাপনে গল্প বলার সময় ক্রেতা যে দুর্ভোগে পড়েছে তার প্রতি সহমর্মিতা (empathy) দেখাতে হবে (যেমন- "এ মাসে দুধ আর মাসের বাজারের টাকা একসাথেই শেষ হয়েছে...")। দুরবস্থার সময় ক্রেতা তাঁর নিকট জনের সাথে পরামর্শ করে। 'Word-of-mouth' এ সময়ে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ব্যবহারকারীর নির্মিত কনটেন্ট ব্যবহার করে ইনফ্লুএন্সার মার্কেটিং এর উপর জোর দিতে হবে (Rafael Schwarz, 2022)। ক্রেতার অগ্রাধিকার জেনে এবং সে অনুযায়ী সাড়া দিয়েই এই দুর্মূল্যের বাজারে টিকে থাকতে হবে। ক্রেতাকে জানাই হচ্ছে মার্কেটিংয়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু। মুদ্রাস্ফীতি এক পর্যায়ে কমে যাবে, যদিও গত কয়েক মাস ধরে এটা দেখা যাচ্ছে না। কিছু সমন্বয় করে এবং এজাইল থেকে ব্যবসায় চালিয়ে নেয়া এবং ব্যবসায় বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখুন এই দুঃসময়ে।


লেখক: অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান 
মার্কেটিং বিভাগ, 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন