সেদিন বাংলাদেশের পত্রিকায় পড়লাম চিনির দাম নাকি বাড়তে পারে। সেই খবর পড়ে আমি দারুন খুশী!! আশ্চর্য হবার কথা, আমি কেন খুশী!! এটা আমাকে বাংলাদেশের সেই সব আকর্ষণীয় মিষ্টির দোকানের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা বাঙালিরা মিষ্টি খুবই পছন্দ করি। আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার সময়, মিষ্টির একটি বাক্স উপস্থাপন করা আবশ্যক (ভাল জিনিস হল এখন আমরা কখনও মিষ্টির পরিবর্তে ফুল নিয়ে যাই)। তেলে থই থই করা মাংস, ঘিয়ে ভরা কাচ্চি বিরানি, আর বেশী লবন না হলে তো চলেই না আমাদের। সবুজ সবজি? ওহ না, ওগুলো ছাগলের জন্য!
সারাদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অফিসে বসে কাজ করে রিক্সা বা গাড়ি বা বাসে চড়ে বাসায় আসার পর মনে হয় আমরা যথেষ্ট ব্যায়াম করেছি। বাসায় ফেরার পর, আরাম করে চেয়ারে বসে তেলে ভাজা কিছু খাবার সহ দুই চামচ চিনে দিয়ে এক কাপ চা খেতে খেতে সন্ধ্যা থেকে টিভি দেখা, অথবা ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে খেলা করা, রাত ১০টার পর ডিনার করা এবং পরপরই ঘুমাতে যাওয়া। এটাই আমাদের জীবনের নতুন নিয়ম হয়ে উঠেছে। আজ আমরা এমন এক ভয়ংকর অভ্যাসে পৌঁছেছি যে সেই পরিবর্তনকে আপনি শরীরের স্থূলতা বলতে পারেন, আপনি এটিকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ বলতে পারেন। অথবা আপনি এটিকে আমাদের অতীতের সামাজিক নিয়মের ভাঙ্গন, ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, অভ্যাস পরিবর্তন, বড় খাবার (BIG FOOD) এবং বড় চিনির (BIG SUGAR) পূর্বাভাস বলতে পারেন। এই তো সেদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, মানুষ এখন সবজি বা মাছের চেয়ে মাংস বেশি খেতে চায়। এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে, তৈলাক্ত, নোনতা এবং চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। কৃষক বা রিকশা চালক বা দিনমজুর আর দিনের আয়ে দিনে খাবার লোকদের ছাড়া শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাচ্ছে। আজ দেখি রান্নার তেলের দাম বাড়লে মানুষ অভিযোগ করতে শুরু করে, চিনির দাম বাড়লে গোলমাল হয়, লবণের দাম বাড়লে দাঙ্গা হয়। বিরোধী দল বিক্ষোভ মিছিল করে বা মানববন্ধন করে, আর মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা দুঃস্বপ্ন দেখেন। পিছনের দরজায় দিয়ে বা দলীয় অনুদানের মাধ্যমে অর্থ হারানোর ভয়ে, ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এই বড় মুনাফা অর্জনকারী খাদ্য শিল্পের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলতে সাহস করে না। ভাগ্যিস তামাক ও সিগারেটে কর বাড়লেও কেউ কোনো বেশী প্রতিবাদ করছে না।
এখন বাংলাদেশে মানুষ প্রতিদিন নিজ শরীরের বিপদের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, কোকা কোলা বা ফান্টা বা সেভেন আপ বা অন্যান্য চিনিযুক্ত ফিজি ড্রিঙ্কের ঝুলন্ত ফ্লাস্ক নিয়ে গাড়িতে উঠে, দুপুরের খাবারের জন্য ভ্যানের পেছন থেকে বা পাশের রাস্তা থেকে স্থানীয় ফাস্ট ফুড কিনে। এবং সন্ধ্যায় কেএফসি বা রেস্তোঁরাগুলিতে সারিবদ্ধ হয়। আধুনিক সুবিধার বিশ্বের আশীর্বাদে আজ বাংলাদেশে দারুন পরিবর্তনের ঘটছে, যার ফলে হৃদ আর ফুসফুসের রোগের কারনে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ বেড়েই চলছে। আর অন্য দিকে প্রাইভেট ডাক্তারদের প্র্যাকটিস, ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগার এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রমরমা ব্যাবসা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। প্রশ্ন হল, এই সন্ধিক্ষণে, আমাদের কি বালিতে মাথা লুকিয়ে থাকা উটপাখির মতো আচরণ করা উচিত?
দ্রুত নগরায়ণ এবং জনসংখ্যার গতিবিধির কারনে ভেঙে যাচ্ছে পরিবারিক, সামাজিক রীতিনীতি। অনেক লোক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছে, প্রতিদিনের শ্রমিকদের রাস্তার ধারের ইটালীয়ান রেস্টুরেন্টে (একজন পুরুষ বা মহিলা তাদের বড় রান্নার হাঁড়ি, তৈলাক্ত এবং নোনতা খাবার রাস্তার পাশে ইঁটে বসে থাকা রিকশাচালক, দিনমজুর বা নিম্ন পর্যায়ের অফিস কর্মী বা হকাদের খাবার পরিবেশন করে) খাবার খাওয়া ছাড়া তাদের কোন বিকল্প নেই। তাই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার আজ আর শুধু ধনীদের রোগ নয়। আজ ধনী বা দরিদ্র, শহুরে বা গ্রামীণ সবাই পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের শিকার। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছে।
২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের জনগনের সাধারণ স্থূলতা (obesity), পেটের স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের সামগ্রিক প্রবণতা যথাক্রমে ১৮.২, ৪১.৯ এবং ৩০.৯%। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে সাধারণ স্থূলতা (২৫.২%), পেটের স্থূলতা (৫৬.১%) এবং উচ্চ রক্তচাপ (৩২.৩%) যা পুরুষ তুলনায় যথাক্রমে ১২.২, ২৯.০ এবং ২৯.৭% বেশী। গ্রামীণ লোকদের তুলনায় (যথাক্রমে ১৩.৮ এবং ৩৫.১%) শহুরে লোকদের (যথাক্রমে ২১.৭ এবং ৪৬.৬%) মধ্যে সাধারণ এবং পেটের স্থূলতার প্রাদুর্ভাব বেশি। গ্রামীণ লোকদের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা (৩৫.১%) শহুরে অংশগ্রহণকারীদের (২৭.৫%) তুলনায় বেশী।
আইসিডিডিআর,বি রিপোর্ট অনুসারে অনুমান করা হয়েছে যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০% অসংক্রামক রোগের কারণে হয়েছে। বাংলাদেশে ৫২% এখনও ধূমপান করে এবং ৫ জনের মধ্যে ১ জনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তাদের রিপোর্ট অনুসারে ২০২১ সালে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখের উপরের লোক ডায়াবেটিসের রোগী। আর ২০২১ সালে ৭৫,৬০০ এরও বেশী লোক ডায়াবেটিসের কারনে মারা গেছেন। WHO/বাংলাদেশের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ঐ সালে ৩০% মৃত্যু রক্তচাপ জনিত রোগ, ১২% ক্যান্সার, ১০% ফুসফুসের রোগ এবং ৩% মৃত্যু ডায়াবেটিসের কারণে হয়েছে। WHO অনুমান করেছে ২০১৮ সালে অসংক্রামক রোগের কারণে ৫৭০,০০০ এরও বেশি মানুষ অকালে মারা গেছে। অসংক্রামক রোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বেশিরভাগ দেশই সংক্রামক রোগ থেকে অসংক্রামক রোগে রূপান্তরিত হচ্ছে।
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ এবং ব্যয়ের বোঝা নিয়ে ভেঙে পড়ার আগে এই মহামারী বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। বৃহৎ জনসংখ্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার উভয়ের মধ্যে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য একটি ব্যাপক এবং সমন্বিত হস্তক্ষেপ কর্মসূচির প্রয়োজন। এই হস্তক্ষেপগুলি অসংক্রামক রোগের বোঝা কমানোর জন্য সম্প্রদায় স্তরে দৈনন্দিন জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে পারে।
থাইল্যান্ডে আমি সরকারকে মদ এবং সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করতে দেখেছি, তারা একে “সিন ট্যাক্স” বলে এবং একটি স্বাধীন সংস্থাকে (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়) গণপ্রচার চালাতে, জনসংখ্যার সচেতনতা তৈরি করতে, প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা করতে এবং অসংক্রামক রোগের একটি নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত করের (সিন ট্যাক্স) অর্থ প্রদান করতে। রুয়ান্ডায় আমি দেখেছি, রাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী খাতের কর্মকর্তা এবং কর্মীদের বাধ্যতামূলক ৩০ মিনিটের আউটডোর শরীর চর্চা অনুশীলনের আদেশ জারী করেছেন। এবং প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় তার আদেশ অনুসরণ করছে। চিলিতে, খাদ্য শিল্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও, সমস্ত খাদ্য প্যাকেজের সামনের পাতায় ‘চিনির উচ্চ’, ‘লবণে উচ্চ’, ‘চর্বিযুক্ত উচ্চ’ মাত্রার কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। যেমন প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটে ক্যান্সার এবং খারাপ প্রভাব সম্পর্কে পরিধান করা হয়। সব তথ্য বিবেচনা করে, জনগণকে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৮-২০২৫ সালের বহুক্ষেত্রীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ হিসাবে এটি সময়ের একটা চমৎকার উদ্যোগ। এখন, ২০২৩ সালে চলমান কৌশলের কার্যকারিতা, বর্তমান পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও কৌশল গ্রহণের সময় এসেছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হতে পারে না। অন্যান্য সমস্ত আপেক্ষিক মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই জড়িত এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।
নামিবিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি থাকা কালিন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মাধ্যমে সমন্বিত অর্থমন্ত্রী সহ একটি বৃহত্তর মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি গঠন, দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও কৌশল তৈরি করতে সফল হয়েছিলাম। আমরা রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি ফার্স্ট লেডির আশীর্বাদ, অঙ্গীকার, সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশেরও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে, দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও কৌশল তৈরি করতে, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এমন বহু-মন্ত্রণালয় কমিটি তৈরি করতে হবে। যেহেতু শতাব্দীর দীর্ঘ আচরণ পরিবর্তন সহজ বা সরল নয়, তাই আমাদের কাজটি অবশ্যই টপ-ডাউন প্রক্রিয়ায় না হয়ে বরং সাধারণ জনগণের পূর্ণ অংশগ্রহণের সাথে তা করা উচিত। বেসরকারি খাত, অলাভজনক সংঘটন, ছাত্র, যুব ও ধর্মীয় নেতা সহ সম্প্রদায়ের নেতা, সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই কর্ম পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।
প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর আমাদের সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে। আজ প্রাথমিক সনাক্তকরণের প্রযুক্তি আরও সঠিক এবং সস্তা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আমাদের ১৪,০০০ টিরও বেশি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য একটি উপায় হিসাবে আমরা সেই কেন্দ্রগুলিতে ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রনিক রক্তচাপ এবং সহজ রক্তে শর্করা সনাক্তকরণের মেশিন সরবরাহ করতে পারি এবং নির্দিষ্ট বয়সের লোকদের, ধরুন প্রতি ছয় মাস অন্তর, বিনা খরচে রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরীক্ষার জন্য আসতে বলতে পারি এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা করনিয় পরামর্শ দিতে পারে বা সেই পরিক্ষার ফলাফল অনুযায়ী প্রয়োজনে তাদের উচ্চ স্বাস্থ্য সুবিধায় পাঠাতে পারে। একবার রোগ নির্ণয় করা হলে এবং উচ্চতর স্বাস্থ্য সুবিধার দ্বারা চিকিত্সা শুরু করলে, এই কমিউনিটি সেন্টারগুলি মানুষকে বাড়িতে বসে তাদের চিকিত্সা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। এইভাবে আমরা কমিউনিটি সেন্টারের উপর আরও আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে পারি।।
প্রতিটি সম্প্রদায়ের সমাবেশে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা যখন তাদের সম্প্রদায়ের কাছে যান বা সমাবেশে কথা বলেন তখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কেও কথা বলতে পারেন। বলতে পারেন কেন চিনি, লবণ, তৈলাক্ত খাবার এবং ধূমপান স্বাস্থ্য খারাপের আর অকাল মৃত্যুর কারন হতে পারে। এনজিওগুলি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে সংসদ সদস্যদের সেমিনার আয়োজন করতে পারে এবং উচ্চতর বাজেট বরাদ্দের পক্ষে তাদের সমর্থন অর্জন করতে পারে। শুধু খাবারের দাম, বিশেষ করে চিনি, তেল ও লবণের উচ্চ বৃদ্ধির অভিযোগ না করে বিরোধী দলের সদস্যদেরও এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।
আমাদের অনেক প্রিন্ট, সোশ্যাল এবং টিভি মিডিয়া রয়েছে। এই মিডিয়াগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে। তারা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার সাথে এবং বিনামূল্যে মিডিয়া সময় প্রদান করে, জনগনের সচেতনতা তৈরি করে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে, উপযুক্ত ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে। তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রককে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অসংক্রামক রোগের বিষয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় চিনি, চিনিযুক্ত খাবার, রান্নার তেল, লবণ এবং সিগারেটের ওপর কর আরোপ বা আরও বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে। ট্যাক্সের অর্থ কোষাগারে যাওয়ার পরিবর্তে থাইল্যান্ডের মতো উপযুক্ত, অনুপ্রাণিত, প্রতিভাবান ব্যক্তিদের সহ রোগ প্রতিরোধ একটি স্বাধীন সংস্থা গড়ে তুলতে পারে। অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রালয় অধ্যক্ষ বা অডিটিং ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমাদের সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে অনন্য এক সত্তা হিসেবে দেখা ভুল হবে কারন এক জেলার মানুষের অন্য জেলা বা সম্প্রদায়ের চেয়ে ভিন্ন সাংস্কৃতিক রীতি ও অভ্যাস থাকতে পারে। তাই এক আকার সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। তাই প্রতিটি জেলা বা ইউনিয়ন তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের অবশ্যই একটি বিশ্বাসযোগ্য নজরদারি এবং প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সমস্ত সংস্থা এবং সেক্টরের একটি জবাবদিহিতার কাঠামো তৈরি করতে হবে।অসংক্রামক রোগের গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করতে হবে।
গবেষণা ও প্রমাণ আমাদেরকে বলে যে কোনো পণ্যের দাম বাড়ালে তার ব্যবহার কমতে পারে। তাই চিনির দাম বাড়লে মিষ্টি ও চিনিযুক্ত পানীয়ের দামও বাড়বে। তাই মানুষ এর ব্যবহারে আরো অর্থনৈতিক হতে পারে। রান্নার তেল ও লবণের দাম বাড়ালে এর ব্যবহার কমতে পারে। বিশেষ করে সেই লোকেদের মধ্যে যারা ব্যয়বহুল জীবনব্যাপী চিকিৎসা সেবা এবং জরুরী অবস্থা বহন করতে পারবে না। সময়ের সাথে সাথে এই মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে সুস্থ থাকতে এবং দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করতে পারে। তাই চিনির দাম বৃদ্ধি পাবার খবর পড়ে আমি খুশি হয়েছিলাম।
সাফল্যের জন্য আমাদের টপ-ডাউন পদ্ধতি এড়িয়ে প্রোগ্রামের সাথে আপামর জনগন কে সাথে নিয়ে চলতে হবে। আলোচনা, নীতি প্রণয়ন এবং কৌশল উন্নয়ন এবং প্রোগ্রাম পর্যবেক্ষণের টেবিলে সব অংশীদারদের (stakeholders) আসন দিতে হবে। আচরণগত পরিবর্তনে সময় লাগে, তাই আমাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে। জীবন বাঁচাতে, মানব উন্নয়ন এবং জাতির পিতাদের একটি সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অসংক্রামক রোগের এই মহামারীকে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসাবে দেখা দরকার। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে জাতির জন্য ভবিষ্যতে বিশাল মূল্য দিতে হবে।
লেখক: প্রফেসর মনির ইসলাম, সিনিয়র স্পেশালিস্ট, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মাইগ্রেশন, হেলথ এণ্ড ডেভেলপমেন্ট।
চিনি দাম খুশি মহামারী মোকাবেলা
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।
গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।
প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।
আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।
আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।
আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।
ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?
উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।
প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।
আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।
অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম
উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য।
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।