ইনসাইড থট

১৫৪তম জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি: মহাত্মা গান্ধীর ভাবনায় স্বচ্ছতা এবং এর প্রাসঙ্গিকতা

প্রকাশ: ১২:৩২ পিএম, ০২ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

গান্ধীজির নেতৃত্বে ভারতীয়রা স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, কিন্তু তাঁর একটি পরিচ্ছন্ন ভারতের স্বপ্ন এখনও অপূর্ণ। অবশ্য ভারত সরকার দ্বারা প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’’(২০১৪) ইতোমধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে লিখেছিলেন-‘‘গত চার বছরে(২০১৪-২০১৮) ১৩০ কোটি ভারতীয় স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মধ্য দিয়ে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছেন। প্রত্যেক ভারতীয়ের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আজ স্বচ্ছ ভারত অভিযান চার বছর পূর্ণ করছে এবং এই অভিযান এক গতিশীল ও সুফলদায়ী প্রশংসনীয় গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের সাড়ে আট কোটিরও বেশি পরিবারে বর্তমানে শৌচালয়ের সুবিধা রয়েছে। ৪০ কোটিরও বেশি ভারতীয় নাগরিককে আর প্রকাশ্যে মলত্যাগ করতে হয় না। চার বছরের এই ক্ষুদ্র সময়ে দেশে পরিচ্ছন্নতার সুবিধা ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। একুশটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং সাড়ে চার লক্ষ গ্রামকে বর্তমানে প্রকাশ্যে মলত্যাগহীন স্থানে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।’’ দৃশ্যত গান্ধীজির ভাবনা ও কর্মের অনুপ্রেরণা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র অন্যতম দিক।

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ‘‘স্বাধীনতার চেয়ে স্যানিটেশন বেশি গুরুত্বপূর্ণ’’। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশনকে গান্ধীবাদী জীবনযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সবার জন্য সম্পূর্ণ স্যানিটেশন। শারীরিক সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি জনসাধারণের এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির উপর প্রভাব ফেলে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন এবং দুর্বল স্বাস্থ্যকর অবস্থার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য। অল্প বয়সে শেখা অভ্যাসগুলো একজনের ব্যক্তিত্বের মধ্যে গেঁথে যায়। খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং অল্প বয়স থেকেই স্নান করার মতো কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেও আমরা দেশের পাবলিক প্লেস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে মাথা ঘামাই না। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘আমি কাউকে তাদের নোংরা পা দিয়ে আমার মনের মধ্যে দিয়ে যেতে দেব না।’’

গান্ধীজি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ভাল অভ্যাসে গড়া জীবন নিয়ে বাস করতেন এবং সুস্বাস্থ্যের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নির্দেশ করেছিলেন। কেউ রাস্তায় থুতু বা নাক পরিষ্কার করবেন না। কিছু ক্ষেত্রে, থুতু এতটাই ক্ষতিকর যে জীবাণুগুলি অন্যদের সংক্রামিত করে। কিছু দেশে রাস্তায় থুথু ফেলা একটি ফৌজদারি অপরাধ। যারা পান ও তামাক চিবিয়ে থুথু ফেলেন তাদের অন্যের অনুভূতির প্রতি কোন বিবেচনা থাকে না। থুতু, নাক থেকে শ্লেষ্মা ইত্যাদিও মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। (নবজীবন তারিখ ২ নভেম্বর ১৯১৯)

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গান্ধীর দ্বিতীয়বার ভারত সফরটি ছিল তাৎপর্যবহ। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশদের দ্বারা ভারতীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবিধানের জন্য কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেস ক্যাম্পের স্যানিটারি অবস্থা ছিল ভয়াবহ। কিছু প্রতিনিধি তাদের কক্ষের সামনের বারান্দাকে ল্যাট্রিন হিসেবে ব্যবহার করেন, অন্যরা এতে আপত্তি করেননি। গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা বললে তারা বললেন; ‘‘এটি আমাদের কাজ নয়, এটি একজন ঝাড়ুদারের কাজ।’’ সেসময় গান্ধী একটি ঝাড়ু চেয়ে ময়লা পরিষ্কার করেছিলেন। তখন তিনি পশ্চিমা পোশাক পরিহিত। স্বেচ্ছাসেবকরা অবাক হয়েছিলেন কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। কয়েক বছর পরে, যখন গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পথপ্রদর্শক ও নেতা, স্বেচ্ছাসেবকরা কংগ্রেস ক্যাম্পে একটি ভাঙি (ঝাড়ুদার) স্কোয়াড গঠন করে যেখানে একসময় ব্রাহ্মণরা ভাঙ্গি হিসেবে কাজ করেছে। হরিপুর কংগ্রেসে ময়লা ফেলার জন্য দুই হাজার শিক্ষক ও ছাত্রকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। নোংরা এবং ময়লা পরিষ্কার করার জন্য একদল লোককে অস্পৃশ্য হিসাবে চিহ্নিত করার কথা গান্ধীজি কখনো ভারতে পারেননি। তিনি ভারতে অস্পৃশ্যতা দূর করতে চেয়েছিলেন। গান্ধী যখনই একটু পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সুযোগ পেতেন, তখনই তিনি খুশি হতেন। তার কাছে, জনগণের পরিচ্ছন্নতার মান পরীক্ষা ছিল তাদের ল্যাট্রিনের অবস্থা। তিনি নিজেকে একজন ভাঙ্গি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন যে তিনি ঝাড়ুদার হিসেবে মরতে পারলে সন্তুষ্ট হবেন। এমনকি তিনি গোঁড়া হিন্দুদেরকে অস্পৃশ্যদের সাথে সামাজিক বয়কটে সহানুভূতি দেখাতে বলেছিলেন।

গান্ধীজি ৪৬ বছর বয়সে তাঁর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। সেই বছর হরিদ্বারে কুম্ভ মেলায় যাওয়ার সময়, তিনি তাঁর ছেলেদের সাথে মেলায় ভাঙ্গি হিসেবে সেবা প্রদান করেন।একই বছর গান্ধী পুনাতে সার্ভেন্টস অফ ইন্ডিয়া সোসাইটির কোয়ার্টার পরিদর্শন করেন। ছোট কলোনির সদস্যরা একদিন সকালে তাকে ল্যাট্রিন পরিষ্কার করতে দেখেছিল। তারা এটা পছন্দ করেনি। কিন্তু গান্ধী বিশ্বাস করতেন যে এই ধরনের কাজ স্বরাজের জন্য যোগ্যতম। একাধিকবার তিনি সারা ভারত সফর করেছেন। যেখানেই এবং যখনই তিনি যেতেন, তিনি কোনও না কোনও আকারে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা দেখতে পান। তিনি বলেছিলেন, যদিও খুব কম লোকই জুতা কিনতে পারে, ভারতে খালি পায়ে হাঁটা কল্পনা করা যায় না। এমনকি বোম্বাইয়ের মতো শহরে, আশেপাশের বিল্ডিং দখলকারীদের দ্বারা থুথু ফেলার ঘটনা ছিল দুঃখজনক।রেলস্টেশন এবং ধর্মশালায় পাবলিক শৌচাগারগুলির নোংরা এবং দুর্গন্ধ ছিল ভয়াবহ। গান্ধী রেলের বগি নোংরা করা যাত্রীদের অভ্যাসের নিন্দা করেছিলেন।

দরিদ্র গ্রামবাসীদের ব্যবহৃত রাস্তা এবং তাদের গৃহপালিত ষাঁড়গুলি সর্বদা খারাপ অবস্থায় রাখা হতো। স্নানের জায়গা বা জল কতটা নোংরা তা না জেনে তিনি মানুষকে তথাকথিত পবিত্র পুকুরে ডুব দিতে দেখেছেন। তারা নিজেরাই নদীর পাড় নোংরা করেছে। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের মার্বেল মেঝেতে রৌপ্য মুদ্রা দিয়ে ময়লা সংগ্রহ করা দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন এবং বিস্মিত হয়ে ভেবেছিলেন কেন মন্দিরের প্রবেশদ্বারগুলি সরু পিচ্ছিল গলি দিয়ে করা হয়। পৌরসভার সাথে আলাপকালে গান্ধী প্রায়ই বলতেন; ‘‘আমি আপনাকে আপনার প্রশস্ত রাস্তা, আপনার দৃষ্টিনন্দন আলো এবং আপনার সুন্দর পার্কগুলির জন্য অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এমন একটি পৌরসভার অস্তিত্বের যোগ্য নয় যেখানে পানীয় জলের কল নেই এবং যেখানে দিনরাত সব সময় রাস্তা ও গলি পরিষ্কার রাখা হয় না। আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে ঝাড়ুদাররা কী অবস্থায় থাকে?’’

গান্ধীজি জোর দিয়েছিলেন যে ভৃত্যদের ঘরগুলি প্রভুদের বাংলোর মতো পরিষ্কার হওয়া উচিত। ‘‘এটা বলে লাভ নেই যে আমরা ইংরেজদের মতো বাহ্যিক স্যানিটেশনের শিল্প শিখিনি। খুবই কষ্টের বিষয় হল ভাইসরয় হাউজে নিয়োজিত নিচুজাতের ঝাড়ুদারদের বাসস্থান অত্যন্ত নোংরা।’’ এই অবস্থা আমাদের নতুন সরকারের মন্ত্রীরা সহ্য করবেন না। যদিও তারা একই সুসংরক্ষিত বাংলো দখল করবে, তবে তারা দেখবে যে তাদের ভৃত্যদের বাসস্থান তাদের নিজেদের মতো পরিষ্কার রাখা হয়েছে। কর্মীদের স্ত্রী ও সন্তানদের পরিচ্ছন্নতার দিকেও তাদের নজর দিতে হবে। জওহরলাল এবং সর্দার তাদের নিজস্ব শৌচাগার পরিষ্কার করতে কোন আপত্তি নেই। কিভাবে তারা তাদের পরিচারকদের থাকার ঘর পরিষ্কার করতে পারে? জওহরলালের এক সময়ের হরিজন সেবক এখন ইউপি অ্যাসেম্বলির সদস্য। আমি তখনই সন্তুষ্ট হব যখন মন্ত্রীদের কর্মীদের থাকার জায়গাগুলি তাদের নিজেদের মতো পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন হবে।’’

গান্ধীজি বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আপনি ঝাড়ু এবং বালতি হাতে না নেবেন, আপনি আপনার গৃহ এবং শহরগুলিকে পরিষ্কার করতে পারবেন না।’’

তিনি যখন একটি মডেল স্কুল পরিদর্শন করেন, তখন তিনি শিক্ষকদের বলেছিলেন: ‘‘আপনারা আপনার প্রতিষ্ঠানকে আদর্শ করে তুলবেন, যদি ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি আপনি তাদের রাধুনি এবং ঝাড়ুদার তৈরি করেন।’’ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে, তাঁর পরামর্শ ছিল, ‘‘তুমি যদি নিজের মেথর হও, তবে তুমি তোমার চারপাশকে পরিষ্কার করবে। ভিক্টোরিয়া ক্রস জেতার চেয়ে একজন বিশেষজ্ঞ মেথর হওয়ার জন্য কম সাহসের প্রয়োজন নেই।’’

তাঁর আশ্রমের কাছের গ্রামবাসীরা মাটি দিয়ে মলমূত্র ঢেকে দিতে অস্বীকার করে। তারা বলেছিল-‘‘নিশ্চয়ই এটা ভাঙ্গির কাজ।’’ গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে গ্রামে ময়লার কাজ তদারকি করতেন। দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তিনি কয়েক মাস ধরে বালতি, ঝাড়ু নিয়ে গ্রামে গ্রামে যেতেন। বন্ধু ও অতিথিরা তাঁর সঙ্গে থাকতেন। তাঁরা বালতিভর্তি ময়লা ও মল এনে গর্তে পুঁতে দিতেন।তাঁর আশ্রমে সমস্ত ময়লা পরিচ্ছন্নতার কাজ বাসিন্দারা করত। গান্ধী তাদের পথ দেখান। সেখানে বিভিন্ন বর্ণ, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বসবাস করত। তাঁর আশ্রমের মাঠে কোথাও কোনো দিন কোনো ময়লা পাওয়া যায়নি। সমস্ত আবর্জনা সবজির খোসার গর্তে পুঁতে দেওয়া হতো এবং অবশিষ্ট খাবার সারের জন্য একটি পৃথক গর্তে ফেলে দেওয়া হতো। মলও পুঁতে দেওয়া হতো পরে সার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। বাগান করার জন্য ব্যবহৃত হতো ব্যবহৃত বা দূষিত জল। কোনো পাকা নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলেও আশ্রমের খামারটি মাছি ও দুর্গন্ধমুক্ত ছিল।

গান্ধী এবং তাঁর সহকর্মীরা পালাক্রমে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি বালতি ল্যাট্রিন এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ট্রেঞ্চ ল্যাট্রিন চালু করেন। গান্ধী গর্ব সহকারে সমস্ত দর্শনার্থীদের কাছে এই নতুন উদ্ভাবনটি দেখিয়েছিলেন; ধনী-গরিব, নেতা-কর্মী, ভারতীয় ও বিদেশি সবাইকে এই ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হতো। এই পরীক্ষাটি ধীরে ধীরে গোঁড়া সহকর্মী এবং আশ্রমের মহিলা বাসিন্দাদের মন থেকে ময়লা সংগ্রহকারী সম্পর্কে সংস্কার সরিয়ে দেয়। মলের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ভাঙ্গিকে দেখলে তিনি অস্বস্তিতে পড়তেন, অসুস্থ বোধ করতেন। তিনি স্বচ্ছতাকে ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যায়। ময়লা সংগ্রহ একটি সূক্ষ্ম শিল্প এবং তিনি নিজে নোংরা না হয়ে এটি করেছিলেন।

তিনি লিখেছেন, ‘‘গ্রামের পুকুরগুলি স্নান, জামাকাপড় ধোয়া এবং পানীয় এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। অনেক গ্রামের পুকুর গবাদি পশুদের দ্বারাও ব্যবহার করা হয়। মহিষগুলিকে প্রায়শই তাদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হল, পুকুরের জলের এই অপব্যবহার সত্ত্বেও গ্রামগুলি মহামারি দ্বারা ধ্বংস হয়নি। অথচ চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রমাণ দেখায় যে গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অভাব গ্রামবাসীদের অনেক রোগের জন্য দায়ী।’’ (হরিজন, ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৫)

মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে উপলব্ধি করেছিলেন যে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রামীণ ভারতে স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতার বিরাজমান শোচনীয় অবস্থা বিশেষত পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাব স্বরাজ অর্জনের পথের কাঁটা। তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ না আমরা ‘‘আমাদের নোংরা অভ্যাস থেকে নিজেদেরকে পরিত্রাণ না করি এবং ল্যাট্রিন উন্নত না করি, ততক্ষণ আমাদের জন্য স্বরাজের কোনো মূল্য থাকতে পারে না।’’ তিনি তাঁর জীবদ্দশায়(১৮৬৯-১৯৪৮) দক্ষিণ আফ্রিকায় মানুষের মুক্তির লড়াই এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সাথে, স্যানিটেশন, পরিচ্ছন্নতা এবং সমস্ত শ্রেণির বর্জ্যের দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অবিরাম সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি স্যানিটেশনের প্রযুক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক-এবং এর ব্যক্তিগত, গার্হস্থ্য ও কর্পোরেটের প্রায় সমস্ত দিক নিয়ে কাজ করেছেন।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই গান্ধী শহীদ হন। স্বাধীনতার পর বিক্ষিপ্তভাবে স্যানিটেশনের বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর পরিচ্ছন্নতার ধারণাগুলোর আরও প্রসারিত বাস্তবায়ন দরকার।তিনি বলেছিলেন যে মশা এবং মাছির মতো এজেন্টরা রোগ ছড়ায় এবং আমরা নিজেরাই বোম্বাইয়ের খারাপ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তিনি সকলকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছিলেন ‘‘ময়লা পরিষ্কার করা এবং স্বরাজের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’’ তিনি বলেছিলেন, ‘‘মহামারির জন্য ঈশ্বরকে দায়ী করা অযৌক্তিক।’’ গ্রামীণ জীবনে অভ্যস্ত  যেখানে ‘‘কর্পোরেট স্যানিটেশনের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি অনুভূত হয় না’’- সেখানে ‘‘পশ্চিম থেকে পৌর স্যানিটেশনের বিজ্ঞান’’  আমাদের অবশ্যই শিখতে হবে। অবশ্যই ‘‘আমাদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে স্যানিটেশনের পশ্চিমা পদ্ধতিগুলি সংশোধন করতে হবে।’’ মানুষের মলমূত্রকে ‘‘মূল্যবান সার’’-এ রূপান্তরিত করে কাজে লাগানোর সবচেয়ে সস্তা এবং কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি নিজেই ডাঃ পুরের কাছে ঋণী ছিলেন। ইংরেজদের মতো, তিনি ময়লাকে ‘‘ম্যাটার ডিসপ্লেসড’’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। তিনি নিজেকে একজন ‘ময়লা সংগ্রহকারী’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ‘‘পৌরসভার পরিষেবাকে উপেক্ষা করা আমাদের জনজীবনের একটি প্রবণতা’’ বলে নিন্দা করেছিলেন।

তিনি মাদ্রাজের শ্রমিকদের উন্মাদনা, নোংরামি এবং রোদ-বাতাসহীন নোংরা বাড়িতে বসবাস ত্যাগ করতে বলেছিলেন। একটি ‘‘শৌচাগার একটি ড্রয়িং রুমের মতো পরিষ্কার হতে হবে।’’ খোলা জায়গায় মলত্যাগ শুধুমাত্র নির্জন স্থানে মাটিতে খনন করা গর্তে করা যেতে পারে এবং ল্যাট্রিনে একটি কমোড ব্যবহার করা দরকার। তিনি ‘‘পশ্চিম থেকে এটি শিখেছিলেন।’’ তিনি ‘‘একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হয়েছিলেন’’ বলে দাবি করেছিলেন এবং ফিনিক্স সেটেলমেন্টে (দক্ষিণ আফ্রিকা) মলকে জৈব সারে রূপান্তরিত করার পরীক্ষা করেছিলেন এবং সবরমতী আশ্রমে এই পদ্ধতিটি চালিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ‘‘পুরনো কুসংস্কার এবং পুরানো অভ্যাস’’- এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে, টেকসই শিক্ষা এবং আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।

‘‘আমাদের উন্মাদনা’’ শিরোনামে একটি লেখায় তিনি বলেছিলেন, বেশ কয়েকটি রোগের প্রকোপ সরাসরি উন্মাদনার সাথে সনাক্ত করা যেতে পারে এবং ‘‘স্বরাজ কেবল সাহসী এবং পরিচ্ছন্ন লোকদের দ্বারাই হতে পারে।’’-‘‘একটি পরিষ্কার শরীর একটি অপরিষ্কার শহরে বাস করতে পারে না।’’ ‘‘পরিচ্ছন্নতাই ধার্মিকতা’’। তিনি চেয়েছিলেন স্যানিটারি অ্যাসোসিয়েশনগুলি নোংরা পরিষ্কার করার জন্য ‘‘ঝাড়ু, বেলচা এবং বালতি’’ গ্রহণ করুক। আমাদের চারপাশ নোংরা করে আমরা গীতার শিক্ষা লঙ্ঘন করি।ময়লা স্থানচ্যুত পদার্থ, যেমন মানুষের মলমূত্রকে ‘‘সোনার সারে’’ রূপান্তরিত করা যেতে পারে এবং একটি শহরের চওড়া ও পরিষ্কার রাস্তা উন্নত স্বাস্থ্য, আয়ুষ্কাল এবং ভালো কিছুর মাধ্যমে ‘‘একটি অর্থনৈতিক লাভ’’ সম্ভব। এমনকি তিনি বলেছিলেন, ‘‘যেখানে নোংরামি, কলঙ্ক এবং দুঃখ সেখানে কোন সঙ্গীত হতে পারে না।’’

মায়াভরমে একজন নারীকে দুর্গন্ধভরা পুকুর থেকে তার পাত্র ভর্তি করতে দেখে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘যেকোনো পৌর জীবনের প্রথম শর্ত হল শালীন স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের অবিরাম সরবরাহ।’’ তিনি স্মরণ করেন কিভাবে তার জন্মস্থানে একজন ইংরেজ প্রশাসক একদিনে রাস্তা থেকে ‘‘ভয়ংকরভাবে অশুদ্ধ গোবরের স্তূপ’’ সরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মূলত দৈনিক স্নান এবং আমাদের ঘর পরিষ্কার রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সুতরাং, আমাদের গ্রামগুলি গোবরের স্তূপ, আমাদের রাস্তাগুলি হাঁটার অযোগ্য, এবং আমাদের নদীগুলি অপরিষ্কার। কৃষ্ণা নদী পার হওয়ার সময় তিনি শত শত লোককে তীরের কাছে মলত্যাগ করতে দেখেন কিন্তু একই স্রোত থেকে স্নান ও পানীয় জল গ্রহণ করতেও দেখা যায় সেখানে। তিনি বলেছিলেন, মলকে সারে রূপান্তরিত করা ‘‘একটি অর্থনৈতিক বর্জ্য’’ এবং ‘‘জাতীয় স্যানিটেশন সংরক্ষণ স্বরাজের কাজ।’’ স্যানিটেশনের এই সংস্কার শেষ পর্যন্ত অর্থকরী হয়ে উঠেছিল।হরিদ্বার সম্পর্কে, তিনি বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে ‘‘চিন্তাহীন অজ্ঞ’’ লোকেরা এমনকি পবিত্র নদীগুলিকেও অপবিত্র করেছে এবং ‘‘ধর্ম, বিজ্ঞান এবং স্যানিটেশন আইন লঙ্ঘন করেছে।’’ তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কীভাবে ল্যাট্রিন এবং রান্নাঘর ‘‘একই কাজের বিভিন্ন দিক’’ এবং বিস্তারিতভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন কীভাবে দুটি গর্ত তৈরি করতে হবে এবং এগুলিকে পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করতে হবে শৌচাগার থেকে সারে রূপান্তরিত করার জন্য।

তিনি সম্ভবত প্রথম নেতা যিনি বারবার জোর দিয়েছিলেন যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের দায়িত্ব ব্যক্তিগত, গার্হস্থ্য এবং কর্পোরেট স্তরে সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি এমনকি বলেছিলেন, আমরা যদি ‘‘আমাদের নোংরা অভ্যাস থেকে নিজেকে পরিত্রাণ না করি এবং ল্যাট্রিন উন্নত না করি, আমাদের জন্য স্বরাজের কোন মূল্য থাকতে পারে না।’’  তিনি বর্জ্য বা ময়লাকে ‘‘বস্তু স্থানচ্যুত’’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এবং অবিচল ছিলেন যে, যতদূর সম্ভব, সমস্ত বর্জ্যকে দরকারি সম্পদ হিসেবে যথাযথভাবে পুনর্ব্যবহৃত করা উচিত। এভাবে, তিনি চেয়েছিলেন সমস্ত মানুষের বর্জ্য, গোবর, আবর্জনা এবং অন্যান্য জৈব-ক্ষয়যোগ্য বর্জ্য ‘সোনার মতো’ সারে রূপান্তরিত হোক। তিনি স্যানিটেশনের সমস্ত দিকগুলিতে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দিয়ে সমর্থন করেছিলেন এবং স্যানিটেশনের বিষয়ে পশ্চিমের কাছ থেকে শিখতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন ছাত্র হিসেবেও ‘‘পরিচ্ছন্নতা ধার্মিকতার পাশে’’ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু পরে এটিকে ‘‘পরিচ্ছন্নতাই ধার্মিকতা’’য় পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে তার অনুসারীরা প্রতিরোধযোগ্য রোগ, ভুল ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য হিসেবে মূল্যবান সম্পদের ক্ষতির মতো উপায়গুলির মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ‘‘অর্থনৈতিক অপচয়ের পুরো বিষয়’’ গ্রহণ করুন। তিনি ময়লা ফেলার কাজটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেছিলেন, এমনকি একজন মা তার সন্তানের জন্য যা করতে পারেন তার চেয়েও উচ্চতর।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির পাশাপাশি কিছু বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে ড. বিন্দেশ্বর পাঠকের সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, ভারতে স্যানিটেশন বিপ্লবের কাজ করছে। সরকারি সংস্থাগুলি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে, যা অবশ্যই জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে, কিন্তু চাহিদা ক্রমবর্ধমানভাবে বেশি। গান্ধীজি ১৯১৫ সালে ভারতে স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য তাঁর আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তখন থেকে ভারতের জনসংখ্যা ৭ থেকে ৮ গুণ বেড়েছে, ভারতীয় সমাজ ক্রমবর্ধমানভাবে নগরায়ণ হয়েছে এবং আর্থ-সামাজিক কাঠামো আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলির বৈশ্বিক মানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই, স্যানিটেশনের অভাব এবং বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলির জটিলতা বাড়ছে। অবশ্য ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’’(২০১৪) পরিচ্ছন্নতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।আগেই বলা হয়েছে, গান্ধীজির সবরমতী আশ্রম যেসব ইতিহাসের সাক্ষী তার সঙ্গে নৈমিত্তিক পরিচ্ছন্নতার একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেখানে পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে কোনরকম সমঝোতা করা হতো না। সবরমতী আশ্রম থেকে প্রেরণা নিয়ে আজ পরিচ্ছন্নতাই সকল ভারতীয়দের স্বভাব হয়ে উঠেছে। তাদের শিরা ও ধমনীতে, অস্তিত্ব ও ভাবনায়, আচার-আচরণে পরিচ্ছন্নতা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। গান্ধীজি বলতেন, স্বাধীনতা ও পরিচ্ছন্নতার মধ্যে তাঁর প্রথম পছন্দ পরিচ্ছন্নতা। তার মানে তিনি স্বাধীনতাকে অপরিচ্ছন্নতার হাত থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। এই অগ্রাধিকার ছিল মনোজগতের বিষয়। তিনি সুন্দর মন, সুস্থ চিন্তার পূজারি ছিলেন। আর এখানেই তাঁর স্বচ্ছতার ধারণা মহিমান্বিত।  


মহাত্মা গান্ধী   জন্মদিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন