মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি
আদরের ‘রাসেল সোনা’, শেখ রেহানার ‘রাসুমণি’
আর বঙ্গবন্ধুর প্রাণের সহচর শহীদ শেখ
রাসেল আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসার নির্মলতার প্রতীক; দুরন্ত, প্রাণবন্ত ও নির্ভীক শিশুর
প্রতিনিধি। ‘শেখ রাসেল দিবসে’
তোমার ৬০তম জন্মদিনে এই
বাংলাদেশ তোমাকে স্মরণ করছে। মায়াবী দুঃখের মুখ নিয়ে তোমার
স্মৃতি ঘেরা আঙিনাগুলো জেগে
উঠেছে। শ্বেত কপোতের ডানা ঝাপটানো তোমার
সকাল, পুকুরে রূপালি মাছের সঙ্গে সাঁতরানো দুপুর, বিকেলে পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
গণভবনের লেক মাড়ানোর গল্প
অথবা সন্ধ্যা-রাতের বত্রিশ নম্বরের বাড়িটির হৈচৈ আর শাসন-বারণের নানা আদর তোমাকে
জড়িয়ে রেখেছে যত্নে। তুমি নেই তাই
৩২ নম্বরের বাড়িটির অবকাঠামো তেমনি থাকলেও পাল্টেছে অনেক কিছুই। বঙ্গমাতা
শেখ মুজিবের কোলে শুয়ে তোমার
ঘুম, বড় বোন হাসু
আপার মমতা মাখানো চেয়ে
থাকা দৃষ্টি, আর ভাবিদের সঙ্গে
দুষ্টামি করে তোমার দিন
কখন গড়িয়ে গেল রাসেল। তোমার
জন্মের পরও বঙ্গবন্ধুকে জেলে
যেতে হয় বারবার। তখন
তুমি ছোট ছিলে বলে
সকলের চোখের মণি হয়ে ওঠ।
তুমি একটু ব্যথা পেলে
সকলের মন কেঁদে উঠত।
সুন্দর তুলতুলে একটা শিশু কার
না প্রিয় হয়। তুমি ছিলে
এদেশের সকলের আপনজন, তুমি ছিলে আগামীর
বাংলাদেশ।
২.
ধানমন্ডি
৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটিতে ১৯৬৪
সালের ১৮ অক্টোবর তোমার
জন্ম সেখানে এখন সুনসান নীরবতা।
অথচ হেমন্তের সেই দিনটি ছিল
উৎসবের। শেখ হাসিনা লিখেছেন,
‘আমাদের পাঁচ ভাইবোনের সবার
ছোট রাসেল। অনেক বছর পর
একটা ছোট্ট বাচ্চা আমাদের বাসায় ঘর আলো করে
এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা
বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন,
রাসেলের বই পড়ে মাকে
বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা
রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত
ভক্ত হয়ে যান যে
নিজের ছোট সন্তানের নাম
রাসেল রাখেন।’ ১৯৬৪ সালটি ছিল
গুরুত্ববহ বছর। পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু
উপেক্ষা করে এ বছরই
একমাত্র বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন বঙ্গবন্ধু।দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত
করার জন্য স্বাধীনতার পথে
হাঁটা এবং রাসেলের বেড়ে
ওঠা এজন্য সমান্তরাল। আসলে বাঙালির জেগে
ওঠা আর মুক্তিসংগ্রামের প্রতীকী
শিশু শেখ রাসেল।এই শিশু
যে সহিংসতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে
তার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য
আজকে আমাদের শপথ নেবার দিন।
৩.
প্রাণবন্ত
রাসেল ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বা ‘হাসুপা’র
অতি কাছের। অবসর সময় কাটত
তাকে নিয়ে। বাসার সামনের ছোট্ট সবুজ লনে ভাইবোনরা
এই শিশুর সাথে খেলায় মেতে
উঠত। তার হামাগুড়ি দেওয়া,
হাঁটার চেষ্টা সবই স্পষ্ট ছবি
হয়ে আছে এখনো। শেখ
হাসিনাকে ‘হাসুপা’বলে ডাকত। কামাল
ও জামালকে ভাই, আর রেহানাকে
‘দেনা আপু’। কামাল
ও জামালের নাম কখনও বলত
না। অনেক চেষ্টা করার
পর ডেকেছিল-‘কামমাল’, ‘জামমাল’। তবে সব
সময় ‘ভাই’ বলেই ডাকত
তাদের।
শিশুকাল
থেকে চলাফেরায় রাসেলের ছিল সাহসী আর
সাবধানি আচরণ। তার অতি প্রিয়
দুটি সাইকেল এখনও রয়েছে ধানমন্ডির
৩২ নম্বরের বাড়িটিতে। যে সাইকেল নিয়ে
ব্যস্ত সময় কাটতো তার।
১৯৬৬ সালে ৬-দফা
দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার
হলে রাসেলের মুখের হাসি মুছে যায়।
সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে
রাসেল তার আব্বাকে খুঁজত।
আর তখন তার মহীয়সী
মা বেগম মুজিবও ব্যস্ত
স্বামীর মামলা-মকদ্দমা সামলাতে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সংগঠনের
নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে।
ফলে রাসেলের যত্ন না পাওয়ারই
কথা। কিন্তু শেখ হাসিনা তার
কাছে থেকেছেন। বত্রিশ নম্বর বাড়ির আঙিনা জুড়ে কবুতর ঘুরে
বেড়াত। আর রোজ সকালে
রাসেলকে কোলে নিয়ে বেগম
মুজিব তাদের খাবার দিতেন। রাসেল বড় হতে থাকলে
খেলার সাথি হিসেবে কবুতরের
পেছনে ছোটা আর নিজে
হাতে করে খাবার দেওয়া
অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু ওকে
কখনো কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেননি
কেউ। যেন পোষা পাখির
প্রতি বাল্যকাল থেকে তার অন্তরে
মমতা জেগে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু
জেলে থাকার সময়গুলো পিতার অভাব ভুলিয়ে রাখার
জন্য পরিবারের সকলের চেষ্টা থাকত নিরন্তর। বাসায়
পিতার জন্য কান্নাকাটি করলে
বেগম মুজিব তাকে বোঝাতেন এবং
তাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘মাকেই আব্বা বলে ডাকতে শুরু
করে।’ বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে ১৯৬৭ সালের ৮
ফেব্রুয়ারি স্মৃতির আয়নায় বেদনাসিক্ত বয়ানে প্রিয় পুত্র রাসেলের কথা লিখেছেন- ‘দুই
বৎসরের ছেলেটা এসে ‘আব্বা বালি
চলো’। কি উত্তর
ওকে আমি দেবো? ওকে
ভোলাতে চেষ্টা করলাম। ওতো বুঝে না
আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম তোমার
মার বাড়ি তুমি যাও,
আমার বাড়ি আমি থাকি।
আবার দেখতে এসো। ও কি
বুঝতে চায়! কি করে
নিয়ে যাবে এই ছোট্ট
ছেলেটা ওর দুর্বল হাত
দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ
প্রাচীর থেকে?’ ১৯৬৮ সালের ১৮
জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলায় আসামি করে অজ্ঞাত স্থানে
আটক রাখা হলে পরিবারে
নেমে আসে দুশ্চিন্তার কালো
ছায়া। সেসময় রাসেলের শরীর খারাপ হয়ে
যায়। যেন শিশু মন
টের পায় পিতার সংকট
কতটা গভীর।
১৯৬৮-৬৯ সালের
দিকে সবাই যখন আন্দোলনে
ব্যস্ত তখন সে বাড়ির
কাজের লোকদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে। এমনিভাবে
সে কাজের লোকদের সাথে ভাত খেতে
পছন্দ করতে শিখেছিল। চার
বছর বয়সেই সে বাড়ির পোষা
কুকুর টমির সঙ্গে বন্ধুত্ব
গড়ে নিয়েছিল। টমিকে সে খুবই ভালোবাসতো।
হাতে করে খাবার দিত।
নিজের পছন্দমতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেওয়া ছিল
একটি কাজ। ১৯৬৯ সালে
২২ ফেব্রুয়ারিতে প্রায় তিন বছর পর
বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলে রাসেল খেলার
ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ পরপরই পিতাকে দেখে আসত। পিতা
বাড়ির নিচে অফিস করতেন।
সারাদিন নিচে খেলা করত
সে আর কিছুক্ষণ পরপর
বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেত।
১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ ভয়াল
রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে পরদিন
হামলার মুখে পড়ে মা’র সঙ্গে রাসেলকেও
দেওয়াল টপকে পালাতে হয়।
তারপর দীর্ঘ নয় মাস ধানমন্ডির
১৮ নম্বর বাড়িতে বন্দি থাকতে হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর পাহাড়ায়। তখন রাসেলের দিনগুলো
কেটেছে নিরানন্দে। প্রথমদিকে রাসেল বঙ্গবন্ধুর জন্য খুব কান্নাকাটি
করত। তার ওপর ভাই
কামাল মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় তাকে পায়নি, সেটাও
তার জন্য কষ্টকর ছিল।
মনের কষ্টে চোখের কোণে সব সময়
পানি থাকত তার। তবে
ছোটবেলা থেকে মনের কষ্ট
নিজেই বহন করতে শিখেছিল
রাসেল। ১৯৭১ সালে সজীব
ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হলে
বন্দিখানায় তার আনন্দ সঙ্গী
জুটেছিল। সারাক্ষণ তার পাশেই থাকত
সে। একাত্তরে ঢাকায় বিমান হামলার সময় রাসেল তুলা
নিয়ে এসে জয়ের কানে
গুঁজে দিত। স্নেহ-মমতায়
অন্তরপূর্ণ সার্থক মানুষ হয়ে উঠছিল সে।
৪.
শেখ
রাসেল, একাত্তরে তুমি ছিলে তোমার
প্রিয় সব খাবার থেকে
বঞ্চিত, খেলার সাথি ছাড়াই তোমাকে
বন্দিশালার জানালা দিয়ে পাকসেনাদের অস্ত্রশস্ত্র
পরিষ্কার করা দেখতে দেখতে
নয় মাস কাটাতে হয়েছে।
যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা দেখার সুযোগ না হলেও রাজনৈতিক
পরিবারের সন্তান হওয়ায় তোমার ভেতর মানুষের জন্য
ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল
গভীর মমত্ববোধ। ১৭ ডিসেম্বর(১৯৭১)
তুমি হৃদয় দিয়ে অনুভব
করতে পেরেছিলে মুক্তির আনন্দ। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে শত্রু
তাড়ানোর সেই উল্লাস পরিবারের
সদস্যদের চোখের পানিতে ধুয়ে গেছে। তাদের
দুঃখ দেখলে তোমার মন খারাপ হয়ে
যেত। অবশ্য যুদ্ধ শেষে কামাল ও
জামালকে পুনরায় কাছে পেয়ে পৃথিবী
ঝলমল করে উঠলেও তখনও
পিতাকে তুমি খুঁজে ফিরছিলে।
১৯৭২
সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু
ফিরে এলেন। এয়ারপোর্টে গিয়েছিলে পিতাকে আনতে। সেদিন লাখো মানুষের ঢলে
পিতাকে নিয়ে তোমার খুব
গর্ব হয়েছিল রাসেল? সবচেয়ে আনন্দের সেই দিনটি কেবল
তোমার নয় সমগ্র বাঙালি
জাতির ছিল। এজন্য তুমি
যেমন পিতাকে ছেড়ে এক মুহূর্ত
থাকতে চাইতে না তেমনি আমাদের
জনগণও। তুমি যেন হয়ে
উঠলে জনগণের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে এদেশের মানুষ ভালোবেসেছিল নিঃস্বার্থভাবে; যেমন তুমি পিতাকে।
তোমার ভালোবাসার সারণিতে এখনো আমরা দাঁড়িয়ে
আছি রাসেল।
স্বাধীনতার
পর ৩২ নম্বর সড়কের
বাড়িতে পুনরায় তোমার হাসি মুখে ঘুরে
বেড়ানো শুরু হয়। সাইকেলে
চড়ে তুমি
ব্যস্ত হয়ে ওঠ সারা
দিন। দুরন্ত তুমি তখন সাঁতার
জানো, ফুলবল ও ক্রিকেট খেলতে
শিখেছো। তারপর পুরনো গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ছোটছেলের সার্বক্ষণিক আনাগোনা। বিকেলে সাইকেলটাও সাথে থাকত। তোমার
খুব শখ ছিল মাছ
ধরার। তা ছিল খেলা।
কারণ মাছ ধরে আবার
ছেড়ে দিতে তুমি। নাটোরের
উত্তরা গণভবনেও তোমাকে সেরকমই দেখা গেছে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিলে। সেখানে তোমার নাম ছিল- শেখ
রিসালউদ্দীন।শিষ্টাচার ও সৌজন্য শিখেছিলে
তখনই। বাসায় তোমাকে পড়াতে গিয়ে শিক্ষককে তোমার
কথাই শুনতে হতো বেশি। তোমার
কথায় পড়াতে আসা শিক্ষয়িত্রীকে প্রতিদিন
দুটো করে মিষ্টি খেতে
হতো। মানুষকে আপ্যায়ন করতে খুবই পছন্দ
করতে তুমি। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে তোমার খেলাধুলার
অনেক সাথি জুটে যেত।
প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে
দিতে। বেগম মুজিব ও
চাচা শেখ আবু নাসের
তাদের জন্য জামা-কাপড় নিয়ে
যেতেন। গ্রামের শিশুদের সঙ্গে তোমার সেই মৈত্রীর বন্ধন
অনেকেই এখনো স্মরণ করেন।
তুমি হতে চেয়েছিলে আর্মি
অফিসার। কামাল-জামালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে তার অনুপ্রেরণা
জন্মেছিল।
৫.
পিতার
সঙ্গে ‘নির্মলতার প্রতীক’ রাসেলের সম্পর্ক ছিল চিরন্তন পিতৃ
হৃদয়ের মমতা মাখানো। পিতাকে
মোটেই ছাড়তে চাইত না সে।
শেখ রেহানা ‘রাসেল আমাদের ভালোবাসা’ নিবন্ধে লিখেছেন- ‘রাসেলের জন্মের পর দীর্ঘ সময়
আব্বার জেলে কেটেছে। আব্বাকে
দীর্ঘ সময় দেখতে না
পেয়ে রাসেল মন খারাপ করত।কাঁদত
আব্বার কাছে যাবার জন্য।
ওর জন্য আমাদেরও খারাপ
লাগত।’ একাত্তরে বন্দিজীবনেও তার অবস্থা একইরকম
ছিল। শেখ রেহানা আরো
লিখেছেন- ‘আব্বারও কোনো খবর নেই।
রাসেল একাকী বসে বসে কাঁদত।
কাউকে কিছু বলতে পারত
না। মনের মধ্যে কষ্ট
চেপে রাখত, প্রকাশ করতে চাইত না।
চোখে পানি কেন জানতে
চাইলে বলত, ধুলো লেগেছে।’
তবে একাত্তরের পর যেখানে যেখানে
নিয়ে যাওয়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তাকে নিয়ে যেতেন।
বেগম মুজিব তার জন্য প্রিন্স
স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ পিতা প্রিন্স
স্যুট যেদিন পরতেন রাসেলও পরত। পোশাকের ব্যাপারে
ছোটবেলা থেকেই তার নিজের পছন্দ
ছিল। ‘কোথায় কোন পোশাক পরে
যেতে হবে এ ব্যাপারে
যথেষ্ট সচেতন ছিল।’ ছেলেবেলা থেকেই তার চরিত্রে দৃঢ়তা
গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর জাপান, মস্কো, লন্ডন সফরের সময় রাসেলও সেসব
জায়গায় যেতে পেরে আনন্দে
মেতে উঠেছিল। তবে মাকে ছেড়ে
কোথাও তার থাকতে খুব
কষ্ট হতো। বাইরে পিতা
সান্নিধ্যে থেকেও মার কথা মনে
পড়লেই মন খারাপ করত
সে। কারণ বঙ্গবন্ধুর অধিকাংশ
সময় জেলে কেটেছে। এজন্য
মাকে কেন্দ্র করে তার প্রাত্যহিক
জীবন গড়ে উঠেছিল। ১৯৭৫
সালের জুলাই মাসে কামাল ও
জামালের বিয়ের অনুষ্ঠানে রাসেল ওর সমবয়সীদের সাথে
মিলে রঙ খেলেছিল। বিয়ের
পর সব সময় ভাবিদের
পাশে ঘুরঘুর করত সে; কার
কী লাগবে খুব খেয়াল রাখত।
১৯৭৫-এর ৩০ জুলাই
শেখ হাসিনা জার্মানিতে স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার পর রাসেলের খুব
মন খারাপ হয়ে যায়।
৬.
শেখ
হাসিনা জার্মানি যাওয়ার সময় রাসেলকে সাথে
নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু
তার হঠাৎ জন্ডিস হওয়ায়
শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। সে
কারণে বেগম মুজিব তাকে
আর শেখ হাসিনার সাথে
যেতে দেননি। রাসেলকে যদি সেদিন তিনি
সাথে নিয়ে যেতে পারতেন
তা হলে তাকে আর
হারাতে হতো না। ১৯৭৫
সালের পনের আগস্ট ঘাতকের
নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত করা হয় ছোট্ট
রাসেলকে। মা, বাবা, দুই
ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে
নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে
হত্যা করা হয় শেখ
রাসেলকে। তার আগে সে
বারবার বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাবো’।
তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও
চেয়েছিল। মায়ের কাছে নেওয়ার নাম
করেই হত্যা করা হয় শিশু
রাসেলকে। মাত্র ১০ বছর ৯
মাস ২৭ দিনের স্বল্পায়ু
জীবন ছিল তার।
আজ জন্মদিনে তাকে আমরা স্মরণ
করছি- একটি রাজনৈতিক পরিবারে
বেড়ে ওঠা শিশুর অন্তরবেদনা,
তার মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বোঝার জন্য। প্রাণোচ্ছল শিশু শেখ রাসেল
মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিল, বঙ্গবন্ধুর আনন্দের সঙ্গী ছিল আর বাঙালির
চিরন্তন পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে তার অনাবিল উচ্ছ্বাস
ছিল অফুরন্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট শেখ রাসেল পিতা-মাতা
ও অন্যদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুরতার নির্মম
শিকার হয়েছিল তা এখনো বিশ্ব
মানবতাকে বিচলিত করে। আমরা সেই
সহিংসতা থেকে আলোর পথে
বের হয়ে আসতে চাই।
তাই স্মরণ করি শেখ রাসেলকে।
শেখ রেহানার ভাষায় বলতে হয়- ‘রাসেল
আমাদের ব্যথা, আমাদের শোক এবং আমাদের
ভালোবাসা।’
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।