প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
মানব জাতির সমৃদ্ধি এবং সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাপী ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়ে আসছে। জলাভূমিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা যথাযথভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জলাভূমি হ্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং সংরক্ষণে জাতিসংঘের আয়োজনে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়। জলাভূমি এবং মানুষের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “মানব জাতির কল্যাণে জলাভূমি” (Wetlands and Human Wellbeing)
জলাভূমি, এক লাখেরও বেশি প্রজাতির আবাসস্থল, অত্যাবশ্যকীয় মিঠা পানি সরবরাহ করে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভ’মিকা রাখে, যেমন জলাভূমিতে জন্মানো চাল, যা ৩০০ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়। অধিকন্তু, জলাভূমি প্রাকৃতিক শক শোষণকারী হিসেবে কাজ করে, বৃষ্টিপাতের প্রভাব প্রশমিত করে এবং বন্যা ও ঝড়ের ঝুঁকি হ্রাস করে। জাতিসংঘের ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী অষ্টাদশ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। মূলত কৃষি, বসবাসের জন্য বাড়িঘর তৈরী, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শিল্প-কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর নানা জায়গায় জলাভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে এসব জলাভূমির উপর নির্ভরশীল মানুষ এবং জীব‣বচিত্র্যের জীবনযাত্রা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনভূমির চেয়ে তিনগুণ হারে জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। জার্নাল নেচার জিওসায়েন্সের ২০২১ সালের ৮ মার্চের সম্পাদকীয়তে বিগত ৫০ বছরে পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রুত হারিয়ে যাওয়া থেকে জলাভূমি রক্ষা, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে এখনই সচেষ্ট হওয়া জরুরি।
জলাভূমি জনপদের সঞ্জীবনী, প্রাকৃতিক ও সামাজিক সম্পদ এবং জীব‣বচিত্র্য, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদ, ফল ও খাদ্যশস্যের আধার। এখানে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। আমাদের কৃষিকাজ জলাভূমির পানির উপর নির্ভরশীল। জলাভূমি ভূগর্ভের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু দ্রুত নগরায়নে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের অধিকাংশ জলাভূমি। আর শহরে জলাভূমি ভরাটের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। জলাভূমি অপব্যবহারে ইতিমধ্যে অনেক জলাভূমি হারিয়ে গেছে। বিকাশমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে জলাভূমিগুলোর শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামোয় রূপান্তরিত হচ্ছে। জলাভূমির পানি প্রকৃতির অফুরন্ত দান নয় বরং একটি সীমিত সম্পদ। আমাদের কৃষি ও পরিবেশের প্রয়োজনে পানি সম্পদ ও জলাভূমি সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। দেশে মোট ৩৭৩টি জলাভ’মি রয়েছে, যার মোট আয়তন ৮,৫৮,৪৬০ হেক্টর। এই জলাভূমির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে।
বাংলাদেশে জলাভূমি আজ তীব্র সঙ্কটের মুখে। ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলাভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, জলকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবন কোনো না কোনোভাবে এইসব জলাভূমির অস্তিত্বের সাথে যুক্ত। বিপন্ন জলাভূমির উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন-জীবিকা। বিভিন্ন গবেষণা তথ্য অনুযায়ী জলাভূমি দেশের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। জলাভূমির আয়তন কমে এখন ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। কৃষি এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড। বাংলাদেশ কৃষি পরিসংখ্যান তথ্য অনুসারে দেশের মোট আবাদী জমির পরিমাণ ৮৫.৭৭ লক্ষ হেক্টর যার মধ্যে ৭৪.৪৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ এর মাধ্যমে কৃষিকাজ চলমান। এই সেচ এর প্রায় ৭৮% শতাংশ পুরোপুরি ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে মাটির উপরে পানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, হ্রদ ও জলা, হাওর, বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর, প্লাবিত কৃিষজমি, পরিত্যক্ত নদীখাত, শুকনো নদীপৃষ্ঠ, খাড়ি, ঝর্ণা ও স্রোতজ বা গড়ান জলাভূমি। দখল ও দূষণের কারণে পানির আধার ধ্বংস হয়ে পানি সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাভূমি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে। পানির স্তর ভয়াবহ পরিমানে নেমে শুকনো মে․সুমে আমাদের দেশের সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য এ জলাভূমির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে হাওরা অঞ্চল থেকে।
জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র, জীব‣বচিত্র্য, স্থানীয় ও আ লিক তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মিঠাপানির আধার, ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরাট, কার্বন আধার, জলবায়ুর অভিঘাত প্রশমন ও অভিযোজন, জীবিকার উৎস, অর্থনীতি ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জলাভূমিকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা প্লাবন ভূমি সংশ্লিষ্ট জলাভূমি, ভ’গাঠনিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জলাভূমি, উপক’লীয় এলাকার জলাভূমি এবং মানবসৃষ্ট জলাভূমি। আমাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড যেমন- পানি উত্তোলন, নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন, কৃষি সম্প্রসারণ, বন নিধন, অনিয়ন্ত্রিত পাথর ও বালু উত্তোলন, মাটি ও পানি দূষণ ইত্যাদি কারণে জলাভূমির পরিবর্তন হয়েছে এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান। জলাভূমি এলাকায় বিগত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গড়ে উঠেছে মানব বসতি, পর্যটন শিল্প। এতে ধানের উৎপাদন, মাছ চাষ, সড়ক যোগাযোগের উন্নতিতে আর্থসামাজিক উন্নতির পাশাপাশি জলাভ’মির পরিমাণ কমেছে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হয়েছে, জীব‣বচিত্র্য বিলুপ্তি বা হ্রাস বা হুমকিতে পড়েছে, কোথাও কোথাও জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সুন্দরবন সংকুচিত
হওয়া, টাঙ্গুয়ার হাওর ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্ধিত হারে পর্যটকের আগমন এবং তাদের অনেকের অবিবেচনাসুলভ কর্মকান্ডের ফলে মাটি ও পানি দূষিত এবং জীব‣বচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন অতি দ্রুত গতিতে জলাভ’মিগুলোয় পরিবর্তন আনছে। যা মানুষের জীবন-জীবিকা ও জীব‣বচিত্র্যের উপর বড় মাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলাভূমি আমাদের পানি সম্পদ বিশুদ্ধ ও ভূগর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরাট করে এবং কোটি কোটি মানুষের মাছ ও ভাতের যোগান দেয়।
খাদ্য উৎপাদন, সেচ, পর্যটন, বিনোদন, কর্মসংস্থান ও জীবিকা, পানি নিরাপত্তার জন্য জলাভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলাভূমি মানুষ তথা জীবজগৎ ও প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বাস্তুতন্ত্র। নদীনালা, খালবিল, হাওর, বাওড়সহ বহু জলাভূমি এ দেশকে জালের মতো ঘিরে রেখেছে। দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৫০ ভাগ কোনো না কোনোভাবে জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। জলাভূমি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীব‣বচিত্র্য, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য, পানি দূষণরোধ, পশু খাদ্য, ঔষধি গাছ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সাইক্লোন থেকে রক্ষা, পলি ধারণ, নৌচলাচল ও যোগাযোগ, পর্যটন ও বিনোদন, প্রতিবেশ, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। কাজেই আমাদের অস্তিত্বের সাথে জলাভূমি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। এ দেশের প্রাকৃতিক স্বাদু মাছের প্রধান উৎস হলো হাওর অঞ্চল। জীব‣বচিত্র্যের ক্ষেত্রে এ দেশে সবচেয়ে সমৃদ্ধ হলো হাওর অঞ্চল ও সুন্দরবন। এছাড়া বিভিন্ন বিল বিশেষ করে আড়িয়ল বিল ও চলন বিল এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। সুন্দরবন শুধুমাত্র জীব‣বচিত্র্যেই সমৃদ্ধ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড়, জলোচ্ছাস, সাইক্লোনের হাত থেকে এ দেশকে বাঁচানোর এক অতন্দ্রপ্রহরী। ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে প্রথম রামসার সাইট (রামসার কনভেনশন কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলাভূমি) এবং ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ, পরিবেশ দূষণ, জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জলাভ’মির গুরুত্বকে খাটো করে দেখা ও অনুধাবনে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে এ দেশের জলাভ’মিগুলোর প্রায় প্রতিটিই কমবেশি বিপদের সম্মুখীন। হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী।
সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদী-নালা-খাল-বিল-হাওর-বাঁওড়-জলাশয়গুলো বাংলাদেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাস থেকে প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। জলাভূমির বিপন্নতার জন্য বিশেষজ্ঞরা যে তিনটি বিষয়কে মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন-সেগুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন, দখল-দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রচেষ্টা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা, ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাবনির্ভর সিদ্ধান্ত, দূর্বল তদারকি, অনিয়ম এবং রাজ‣নতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জলাভূমি দখল বেড়েছে, জলনির্ভর জীব‣বচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে জলাভূমি সমৃদ্ধ ১৩টি এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে। ২০১১ সালে সংবিধানে ১৮ ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে জলাভূমি সংরক্ষণে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব‣বচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে। আমাদের জীবন
জীবিকার প্রয়োজনেই জলাভ’মির পরিবেশ ও জীব‣বচিত্র্য সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর ১৩টি এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এসব এলাকায় মাটি,পানি ও বায়ু দূষণকারী শিল্প স্থাপন, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোন প্রকার কার্যাবলী, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক ‣বশিষ্ট্য নষ্ট/ পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কাজ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে আইন অনুযায়ী পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণে তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। জীববেচিত্র্য সংরক্ষণসহ হাওরা লের উন্নয়নে সরকার ২০ বছর (২০১২-২০৩২ সাল) মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করেছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন
অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। যার গতি বাড়ানো খুবই জরুরী। জীব‣বচিত্র্যসহ কৃষি, মৎস্য, পর্যটনের জন্য টেকসই জলাভূমি ব্যবস্থাপনার কেনো বিকল্প নেই। ভূপ্রাকৃতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জলাভূমির অবক্ষয় বা হ্রাস বা বিলুপ্তি আমাদের দেশের আয়ত্তে নেই বললেই চলে। সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সহনীয় পর্যায়ে রেখে জলাভ’মির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। জলাভ’মির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আন্তরিকতার সাথে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
জলাভূমি ভরাটসহ নানাভাবে জলাশয় দূষণের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছি। জলাভূমি না বাঁচলে, পরিবেশপ্রতিবেশ ভারসাম্য বিপন্ন হলে আমরা ভাল থাকবো না। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জলাভূমি রক্ষা করতে হবে। সুরক্ষিত রাখতে হবে পরিবশগত ভারসাম্য। সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় সর্মথন ও স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জলাভূমি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য জলাভূমিকেন্দ্রিক এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া দরকার, যাতে সেগুলো থেকে স্থানীয় জনগণ সরাসরি লাভবান হতে পারে। তাহলে নিজ স্বার্থেই তারা জলাভূমি রক্ষায় উদ্যোগী হবে।
জলাভূমি সংরক্ষণ ও দেখাশোনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এসব কর্তৃপক্ষের দায়সারা দায়িত্ব পালনের কারণে গ্রাম ও শহরের বিদ্যমান জলাভ’মি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। উন্মুক্ত প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেওয়ায় সেগুলো ডোবা ও নালায় পরিণত হচ্ছে। ফলে মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলাভ’মি রক্ষায় স্থানীয়, আ লিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলাভূমি চিহ্নিত করা, নির্বাচিত জলাভ’মি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা, জলাভ’মি ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষেণে র্সবস্তরে টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, বাড়াতে হবে গণসচেতনতা। জলাভ’মি উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অর্পিত দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া জলাভ’মি রক্ষার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সমন্বয় অত্যাবশ্যক।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।