প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
শান্তিতে
নোবেল প্রাইজ বিজয়ী ড. ইউনুস বিশ্বে
খুবই পরিচিত এবং অধিকাংশ
লোকের কাছে শুধু সম্মানিত না একজন প্রিয়
ব্যক্তিও বটে। অথচ তিনি বাংলাদেশের সিটিজেন হলেও আইনের প্রতি
বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে চলেছেন। যেহেতু তিনি
বাংলাদেশের এখনও একজন সিটিজেন,
এই কারণে তাকে বাংলাদেশের আইনে
যেকোনো বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে,
কোনও বিচারের আশা করলে বাংলাদেশের
কোর্টে যাওয়া উচিত। তিনি অবশ্য তার
যে কোনও প্রয়োজন থাকলে বাংলাদেশের
কোর্টে যান। যেমন সরকার যখন
তাকে একটি সরকারি ব্যাংকের
এমডির পদে বয়স পার
হয়ে যাওয়ায় তাকে সরিয়ে দেন,
তিনিও আইনের আশ্রয় নেন। এদেশের কোর্ট তাকে চেয়ারম্যান থাকতে
আর এমডি থাকতে পারেন
না বলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত
দেন। সুতরাং, তিনি তখন থেকে
আর গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নাই। কিন্তু গ্রামে একটি কথা
আছে, গ্রামের গরিবের সুন্দরী বউ সবার ভাউস।
অর্থাৎ ওই সুন্দরী যেহেতু গরীবের বউ সবার নজর
তার উপরে পড়ে। এজন্যই
বাংলাদেশকে এখনও পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে যে, এই রাজ্যে গরিবের বউয়ের মতো। এদের দিকে যে
কেউ তাকাতে পারে। যে কেউ যা খুশি
তাই করতে পারে। কিন্তু, বাংলাদেশ
এখন আর সেই পর্যায়ে
নাই এটা তারা ভুলে
যায়। এবং, ভুলে যাবার
জন্য ইচ্ছা করে হোক অনিচ্ছায়
হোক বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনও আইন খাটবে
না, এটাই হচ্ছে তাদের মূল বিষয়। এবং ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে তারা একের পর
এক চাপে রাখতে চায়।
যদিও এই চাপে পরিশেষে বাংলাদেশের
কিছুই হবে না। কারণ
বিশ্বের যত দেশেই এই পশ্চিমা
বিশ্ব চাপে রেখেছে, উল্টা
পশ্চিমা বিশ্ব আরও নীচের দিকে
চলে যাচ্ছে।
পশ্চিমা
বিশ্বের অনেক দেশেই এ
রকম অর্থনৈতিক অবস্থা যাচ্ছে যে, আমরা যদি
সঠিকভাবে আমাদের অর্থনীতিকে চালাতে পারি, ১০ থেকে ১৫ বছরের
মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অনেক লোক
বাংলাদেশে চাকরি করতে আসবে, এটা
হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতার মধ্যেই
যে ড. ইউনূস কি
অন্যায় কাজ করেছেন? তা
আমাদের দেশে অনেকেই জানে
না। না জেনে তারা মনে
করে যে সরকার বোধ
হয় ড. ইউনূসকে দেখতে পারে না এবং
তাকে একটু টাইট দিতে
চায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। আমি বিশদভাবে যাব না
কারণ অনেকেই জানেন এবং বিশদভাবে যেতে
হলে একটা বই লিখতে
হয়। সেটা না করে
আমি শুধু পাঠকের সুবিধার
জন্য অল্প কয়েকটি বিষয়ে
বলতে চাই।
আইনের
প্রতি তোয়াক্কা ড. ইউনুস প্রথম
থেকেই করেন না। যার জন্যে
যখন গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে হুসেইন মোহাম্মদ
এরশাদ সাহেবের আমলে একটি বৈধ এবং
স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসাবেই। এবং, এই ব্যাংকের
আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে ড. ইউনূসকে নিয়োগ
দেওয়া হয়। একজন এমডির
বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যে সব ক্ষমতা,
পাওনা দেনা, সেসব ঠিকমতোই চলছিল।
কিন্তু, উনি তার ওই
ব্যবস্থাপনা ক্ষমতাকে ব্যবহার
করে তখনই তিনি বেআইনি পথে যাত্রা শুরু করেন, নিজের অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য। উদাহরণ
হিসেবে বলি, গ্রামীণ ব্যাংক যখন ১৯৮৩ সালে শুরু হয় তখন মাত্র ৩ কোটি টাকা মূলধন দিয়ে
শুরু হয়। এর ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল সরকারের এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল ঋণগ্রহীতার।
এখানে ড. ইউনূসের কোন ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা নাই। অবশ্য এমডির কোন টাকা পয়সা লাগবে, উনি
ব্যাংকের আইন নিয়েও কোন কন্ডিশন নাই, সুতরাং ঠিকই আছে। কিন্তু, এমডি সাহেব চাকরি করছেন।
তাতে কিন্তু তিনি যখনই এমডি হলেন এবং দেখলেন যে, তাহলে তো আমি শুধুমাত্র একটি ব্যাংকের
এমডি থাকার জন্য তো আমার যে উদ্দেশ্য তা সফল হবে না। তখন তিনি প্রচলিত আইনকে বিভিন্ন
পথে ঘোরানো শুরু করলেন। উদাহরণ হিসেবে বলি, এই গ্রামীণ ব্যাংকে ব্যবহার করেই তিনি সরকার
এবং ঋণগ্রস্ত জনগণের টাকাকে তিনি নিজের টাকায় রূপান্তরের পন্থা অবলম্বন করলেন। গ্রামীণ
ব্যাংকের টাকায় ড. ইউনূস গড়ে তুললেন ২৮টি প্রতিষ্ঠান। এবং এতে কোন অসুবিধা হলো নাই।
কিন্তু তিনি ২৮ টি প্রতিষ্ঠান করতে যেয়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক বা সরকারের ১ হাজার কোটি
টাকা নিজের টাকায় পরিবর্তন করলেন। কিভাবে করলেন? যখন প্রতিষ্ঠার পর দাতাগোষ্ঠী অনুদান
বা ঋণ দিল গ্রামীণ ব্যাংকে তখন ড. ইউনূস দেখলেন যে, তাতে তার লাভ কি? এতো গ্রামীন ব্যাংক
পাচ্ছে। তাই তিনি প্রথমে এই দাতাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল
ফান্ড (SVCF)। ১৯৯২ সালের ৭ অক্টোবর ওই ফান্ড দিয়ে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত
নেন। ১৯৯৪ সালে গ্রামীণ ফান্ড নামে একটি লিমিডেট কোম্পানি গঠন করা হয়। তাতে আগের যে
ফান্ড উল্লেখ করা আছে তার ৪৯.১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।
এখন এই গ্রামীণ
ব্যাংক দেখিয়ে বিভিন্নভাবে টাকা আসা শুরু হয়। কিন্তু আসলেও ওই বোর্ডে ছিল ড. ইউনূস
সাহেবের সব ইয়েস ম্যান। তাদেরকে দিয়ে উনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। উদাহরণ
হিসেবে ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায়
সিদ্ধান্ত হয় যে, দাতাগোষ্ঠীর অনুদানের অর্থ এবং ঋণ দিয়ে সোশাল অ্যাডভান্সমেন্ট
(SSF) গঠন করা হয়। কিন্তু দাতারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ সরিয়ে ফেলায় আপত্তি
জানায়। দাতাদের আপত্তির কারণে ড. ইউনূস তার কৌশল বদল করে ২৫ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ
ব্যাংকের বোর্ড সভায় গ্রামীণ কল্যাণ গঠনের প্রস্তাব আনেন। এবং, এই প্রস্তাবে বলা হয়
যে, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য কর্মীদের কল্যাণে কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণের
নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। এটা করা হলো। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় প্রস্তাব
অনুমোদন করা হলো এবং এটা গ্রামীণ ব্যাংকেরই একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
গ্রামীণ কল্যাণ
যে গ্রামীণ ব্যাংকেরই একটি শাখা প্রতিষ্ঠান তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এর মূলধন
গঠন প্রক্রিয়ায়। কেননা গ্রামীণ কল্যাণ এই গ্রামীণ ব্যাংকের সোশাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড
(SSF) থেকে ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করে। গ্রামীণ কল্যাণের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলে গ্রামীণ
ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। মেমোরেন্ডাম আর্টিকেল অনুযায়ী, গ্রামীণ কল্যাণের
৯ সদস্যের পরিচালনা কমিটি পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদের দুইজন হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের
মনোনিত। ড. ইউনূস সাহেব নিজেই তার লোকজনদের মাধ্যমে তিনি তার প্রতিনিধি করলেন এবং নিজেই
চেয়ারম্যান হলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর এক কথায় বলা চলে গ্রামীণ কল্যাণ ড. ইউনূস সাহেবের
সোনার ডিম পারা রাজহাঁসে পরিণত হলো। কারণ, এই গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ
টেলিফোন, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন, গ্রামীণ শিক্ষা ইত্যাদি গঠন করলেন। এর আদলে তিনি গ্রামীন
ক্যাপিটাল ফান্ডসহ অনেক কিছু গড়ে তুললেন। এগুলো গড়ে তুলতে তো কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু,
এগুলোর মালিক তো গ্রামীণ ব্যাংক। এটা তিনি স্বীকার করতে রাজি নন। এজন্যই এইসব প্রতিষ্ঠান
যে সব গ্রামীণ ব্যাংকের তা তিনি স্বীকার করতে রাজি নন। ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ফান্ড
এবং গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পরিষদে তিনি থাকলেও ২০২১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান দুটিতে
তার কোন প্রতিনিধি নাই। এমন হওয়ার কারণ, ড. ইউনূসের ইশারা। এখন তো এই সব প্রতিষ্ঠানে
ড. ইউনূসের ক্ষমতা থাকে না। এই বেআইনিভাবে তিনি চেয়ারম্যান পদে থেকে গেলেন।
এখন প্রশ্ন
ওঠা স্বাভাবিক, তিনি এখন এর চেয়ারম্যান কিভাবে? এইসব ব্যাপারগুলো নিয়েই এখন গ্রামীণ
ব্যাংক যারা চালাচ্ছেন তারা তাদের যে সংগঠনগুলো যেগুলো উল্লেখ আছে যেমন গ্রামীণ আইটি
পার্ক, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ফান্ড এইসবগুলি তারাই নিতে চায় এবং তারাই এগুলিকে এখন আইন
মাফিক গ্রামীণ ব্যাংকের অংশ করতে চায়। এইখানেই ড. ইউনূসের বিরাট আপত্তি। এবং এই আপত্তির
কারণেই তিনি বিভিন্ন সময় কোর্টে যান, হেরে যান এবং তখন তিনি পশ্চিমাদের সাথে কথা বলেন।
একটা কারণ হতে
পারে বলে আমার মনে হয় যে, এইসব টাকাও পশ্চিমা বিশ্বে চলে যাচ্ছে। ব্যাংক ডাকাতি যারা
করে, এদেশ থেকে যারা বিদেশে টাকা নিচ্ছে তাদের মধ্যে ড. ইউনূস একজন। পার্থক্য হচ্ছে,
ইনি নোবেল লরেট, শিক্ষিত। আর অন্য যারা নিচ্ছেন তারা ততটা শিক্ষিত নন। তারা ততটা নামকরা
ব্যক্তি নন। এখন কথা হলো, একই দেশে নামকরা হলে একরকম আইন আর নামকরা না হলে আলাদা আইন;
এটাতো হতে পারে না। সুতরাং, আমি মনে করি, যেহেতু প্রথম থেকেই যারা টাকা দিয়েছে, গ্রামীণ
ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের টাকা এবং সরকারের। সুতরাং, এটা খুব কঠিনভাবে দেখতে হবে।
কারণ, ড. ইউনূসের যে তিনটি ব্যাংক একাউন্ট আছে তার ভেতরে যেটা জানতে পেরেছি, তা হলো-
সাউথইস্ট ব্যাংক একাউন্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক একাউন্ট এবং রূপালি ব্যাংক।
এই তিনটি ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাইথইস্ট ব্যাংকের একাউন্ট তার মূল
ব্যাক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই একাউন্টে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল
পর্যন্ত ১১৮ কোটি ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৮ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিটেন্সের বেশিরভাগ
টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এইটা একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। অর্থাৎ,
তখনই তো এগুলো ড. ইউনূসের ছিল, উনি দলও করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য এখন যখন তার ট্যাক্স
ফাইল থেকে শুরু করে সব কিছুতে দেখা যাচ্ছে যারা বাংলাদেশে থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে তাদের
সাথে মূলত ড. ইউনূসের কোন পার্থক্য নাই। সুতরাং, সরকারের কর ফাঁকি থেকে শুরু করে বিদেশে
টাকা নেওয়া প্রত্যেকটা জিনিস এক এক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। এবং, বাংলাদেশের
আইন যে সকলের জন্য সমান সেই হিসেবে বিচার করা উচিৎ। কে কোন স্টেটমেন্ট দিল তার জন্য
সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলি পশ্চিমাদের পেসারে যদি আমাদের না খেয়েও থাকতে হয় তাহলে একজন
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এদেশ স্বাধীন করেছি সেই হিসেবে আমার দাবি যে, অন্য বিষয়গুলো আমরা
যেমন সত্যের মধ্যে আনতে চাই, ড. ইউনূসের বিষয়গুলোও স্বচ্ছতায় আনতে হবে। এবং, আর যারা
এখন আছেন গ্রামীণ ব্যাংকে তারা যত অবৈধ পথে সংগঠন চালিয়েছেন সেগুলোর প্রত্যেকটা তাদের
দখল করে নিতে হবে। তাহলেই এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
ড. ইউনূস দুর্নীতি ব্যাংক বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।