প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক যতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন এবং দেশ পরিচালনা করছেন, ততদিন বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে আছে। এটা বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের অধিকাংশের ধারণা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাও তা-ই বলে। অল্প কিছু মানুষের কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য না। তারা এর বিপরীত কথা বলেন।
এরা কারা? এরা হচ্ছেন বুদ্ধিজীবী। আরও পরিষ্কারভাবে বলার সময় এসেছে। এরা হচ্ছে ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো কর্তৃক তৈরি বুদ্ধিজীবী। কারণ উদাহরণ হিসেবে একটা আর্টিকেল পরে দেখলাম। আনু মুহাম্মদ একজন ভাল ইকনমিস্ট এবং দেশের জন্য খুব চিন্তা করেন। তার ব্যবহার খুবই ভাল। অনেকদিন আগে বিবিসি বাংলা সার্ভিসে আমি তার সাথে আলাপ করেছিলাম। সে জায়গায় আমি খুব কঠিন একটি কথা বলেছিলাম। যখন পরিচালক বললেন যে, এই আনু মুহাম্মদ একজন ইকনমিস্ট এবং এই ব্যাপারে জানেন। ওই সময়ে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কে তিনি একটা স্ট্যান্ট নিয়েছিলেন। তার স্ট্যান্টটাকে আমি অবশ্যই রেসপেক্ট করি। কারণ, ডেমোক্রেসির এটাই সৌন্দর্য যে, এক একজনের একেক মত। কিন্তু আমি যেটা বলেছিলাম পরে মনে করেছি যে, বিষয়টা ওইভাবে না বললেই ভাল হতো। আমি বলেছি যে, উনি তো এই বিষয়ে একমাত্র বিজ্ঞ না। আরও অনেক বিজ্ঞ লোক আছে। আমি বলেছিলাম এবং সেটা এখনও আমার মনে আছে। এখন মনে হচ্ছে যে, ওই সময়ে আমি আসলে ভুল বলিনি। কারণ, এদেশে বুদ্ধিজীবী বানানোর একটি কারখানা আছে। এই কারখানার মালিক হলো এই প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার। আরও স্পেসিফিক্যালি বলা চলে যে, এখানে মতিউর রহমান সাহেব আর মাহফুজ আনাম। এরা ছাড়া এই পত্রিকায় যদি আপনি না লেখেন, এদের ফাংশনে যদি ঠিক মতো না যান তাহলে আপনি বুদ্ধিজীবী হতে পারলেন না। এমনকি বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রীও সেখানে যেত কিন্তু, তাদের সংখ্যা এখন একটু কম। তা বিশাল বিজ্ঞাপন দেয়, খাতিরও রাখে। কারণ, তারা জানে যে, এত কিছু করেও বুদ্ধিজীবী হতে পারবে না। তবুও তাদের বিরুদ্ধে যেন না লেখে। এই তেলটা তারা ঠিক মতোই দেন। এই প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারা যেহেতু বুদ্ধিজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী তৈরি করেন, মানবাধিকার রক্ষার নেতা তৈরি করেন, বলা চলে তারা এ দেশের আরও একটা কাউন্টার সরকার।
তাদের কথা, তারা বিশ্বে যেটা প্রচার করবে সেটাই। তারা আইনেরও উর্ধ্বে এবং বাংলাদেশে যে মানবাধিকার তারও ঊর্ধ্বে। কিন্তু একটি দেশ এইভাবে চলতে পারে না। সম্প্রতিকালে এই ডেইলি স্টারের একজন সিনিয়র পার্সন তার বাসায় পরপর দুইজন কাজের মেয়ে মারা গেল এবং এই নিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। সেই জায়গায় আমি অবাক হয়ে গেলাম যে, আনু মুহাম্মদের মত লোক, তিনি যেসব ইস্যু নিয়ে ডেইলি স্টারে লিখছেন, আমি এর কোন আগা-মাথা বুঝলাম না। হয়তো আমার বুদ্ধি কম। তিনি এই বিষয়টি না লিখে বাচ্চাদের কোথায় খাটছে, কোথায় বাচ্চাদের কী করা হয়েছে? তা নিয়ে লিখলে, এটা তো সেই ইস্যু না। আসলে, ওই বাসায় বাচ্চাদের প্রতি আইন অমান্য করেছে কি না বলতে পারছি না। এরপরও আইনকে বাঁচিয়ে বলছি, সাধারণের ধারণা যে নিশ্চয়ই এখানে কোন ব্যাপার আছে। সেটা আইন রক্ষাকারী অর্থাৎ যারা দায়িত্বে তারা দেখবেন, কোর্ট দেখবেন। এটা আগের থেকেই আমার তো নয়ই কারও রিমার্ক করা ঠিক না। তবে একটা জনধারণা আছে, যেটা সকলে প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু তা প্রকাশ করা হয় তারা অ্যাফেকটেড হলে। এটি যদি অন্য কোন পত্রিকা হতো তাহলে আনু মুহাম্মদের মতো লোক এই সকল বুদ্ধিজীবী এবং মানবাধিকার নেতাদের খোঁজ পাওয়া যেত না। এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তাদের পাওয়া যায় না।
সেই জিয়াউর রহমান সাহেবের সময় থেকে শুরু করে বিএনপির সময় ২০০১ সালে যেরকম ভাবে মানুষের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে, নির্বাচনের নামে বিভিন্ন কিছু হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে কিছু বলে না। অথচ, এরপরও তারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে এদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে চিফ গেস্ট হন, অ্যাউয়ার্ড পান। কিছুই পেতেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা কয়বার লেখেন? তা নিয়ে তো উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। আপনারা হচ্ছেন আসলে ফ্যাক্টরিতে তৈরি। সুতরাং, ফ্যাক্টরির মালিক সেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। যেমন তুলা যদি তৈরি করা হয়, সেই তুলার যেমন মূল্য থাকে, আপনাদের মূল্যও সেইভাবে। যদি কাগজ তৈরি করে, কাগজের মূল্য যেমন আপনারও তাই। একটা কাগজ, সুতা কিংবা কাপড় বানানো হয় একটি কারখানায়। আর আপনারা এই দুই পত্রিকার কারখানায় তৈরি বুদ্ধিজীবী এবং একই সাথে আপনারাই আবার সিভিল সোসাইটির মেম্বার। আপনারাই আবার মানবাধিকার সংগঠনের সোল এজেন্ট।
আজ ড. ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি কি কি আইন ভঙ্গ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি করলো কারা? তাদের সম্পত্তি তাদের অধীনে থাকবে না, সেখানে আপনারা এসব বাইরে পর্যন্ত প্রচার করা শুরু করে দিয়েছেন। আপনাদের সকলের রুট তো এক! দালালি আর কতকাল করবেন? উপরে ভাব দেখাবেন বাম দলের, আর পয়সা-বেনিফিট নেবেন আমেরিকায়।
উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, আজকে যদি আনু আহম্মদের মতো একটা লোক ভিসা চায় আমেরিকায় বা ওয়েস্টার্ন দেশে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভিসা দিয়ে দেবে সময় লাগবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলাম পাঁচ বছর। আমি গেলেও এতো তাড়াতাড়ি দেবে না, সময় লাগবে। কারণ, আমি তো বুদ্ধিজীবী না। আমি তো আর আপনাদের মতো না। মানুষের বিবেক হিসেবে আপনারা পরিচিত। একটা গরীব মানুষের বাচ্চা প্রাণ হারিয়েছে, আর তারা ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের লোক। আজ যদি ইত্তেফাকের কারও ক্ষেত্রে এমন ঘটতো? তাহলে তো ফাটিয়ে দিতেন। তাহলে দেখা যেত যে, যত বুদ্ধি আছে এবং প্রয়োজনে ভাড়া করে বা লোক নিয়ে চালিয়ে দিতেন।
আমার মনে হয়, দেশে এখন আইনের শাসন সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। এর আগেও আমি একটা লেখায় লিখেছি, এখনো বলি। তাতে যদি আমাদের প্রতি স্যাংশন আসে, না খেয়েও থাকতে হয় তবুও সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে দেশে আমি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং আমি মৃত্যু পর্যন্ত নিজেকে গর্বিত ভাবি। রাষ্ট্র বা কোন ব্যক্তি আমায় মূল্যায়ন করে কি করে না বা অ্যাউয়ার্ড দেয় নাই, এটা কোন বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, আমার বিবেক বলে যে আমি ঠিক কাজ করেছি। অন্তত আপনাদের মতো কোন ফ্যাক্টরিতে তৈরি মুক্তিযোদ্ধা আমি না। আপনারা তো ফ্যাক্টরিতে তৈরি হন। যে কারণে, আপনাদের প্রত্যেকের রোল জানা দরকার।
টাকা পয়সার কথা নিয়ে বলি। প্রথম যখন একতা চালাতেন, তখন বিজনেস ম্যানদের কাছ থেকে টাকা পয়সা খুঁজতেন। আমি তো ওপেন চ্যালেঞ্জ করি। আমি এবং আমার ছেলে-মেয়ে; এমনকি দেশের বাইরে যারা আছে তাদের সম্পূর্ণ সম্পত্তি সম্বন্ধে যে কোন ডিসক্লোজার দিতে রাজি আছি। আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করেছি তারাও রাজি আছে। কারণ, এখানে কোন হারাম পয়সা নাই। কিন্তু, আপনাদের যদি বলা হয় যে, মতিউর রহমান সাহেব একতায় থাকতে আপনার কি ইনকাম ছিল, আর এখন আপনি সর্বোচ্চ ট্যাক্সপেয়ার কিভাবে হন? আপনারা তো আলাদিনের প্রদীপ দেখেন। আপনারা মানুষ আটকে কিভাবে বিজ্ঞাপন নেওয়া যায় তাও দেখেন। আর আমাদের মন্ত্রীরাই আপনাদের দেখে ভয়ে খুত খুত করে। তারাই বড় বড় বিজ্ঞাপন দেয়, অন্যরা তো দূরের কথা। আপনাদের পত্রিকা চলে, তো দেবে না কেন।
স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে, যে কোন দেশে যারা সরকারে থাকে তাদের বিরুদ্ধে বললে সকলে তা আগ্রহ নিয়ে পড়ে। এটা ঠিক এবং স্বাভাবিক সাইকোলজি। এটা আমার মধ্যেও আছে, আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু, সরকারের ভালোটা দেখার জন্য অবজেকটিভ হতে হয়, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে হয়। যে কোন কাজ পছন্দ না হলে তা আমি বলি। কিন্তু, আপনাদের কি কোন কাজই কি চোখে পড়ে না যা লেখার মতো? এই পত্রিকায় একটা এডিটোরিয়াল লিখে একটা অন্যায়কে আপনাদের জাস্টিফাই করতে হবে। আপনারা কি এতো পঁচে গেছেন? আপনারা হচ্ছেন দুর্গন্ধযুক্ত বুদ্ধিজীবী, দুর্গন্ধযুক্ত সিভিল সোসাইটির মেম্বার এবং দুর্গন্ধযুক্ত মানবাধিকার নেতা সাজা মানুষ। এই দুর্গন্ধ যদি সমাজ থেকে দূর না হয় তাহলে সমাজ সঠিক হবে না। সব সরকারি দুর্নীতি যদি ঠিক হয়ে যায় তাতেও আমি বিশ্বাস করি না বাংলাদেশের দুর্নীতি বন্ধ হবে। কারণ, আমি বিশ্বাস করি এই সমস্ত দুর্নীতির গোড়াপত্তন করেন আপনাদের মতো ভাড়াটিয়া, কারখানায় তৈরি বুদ্ধিজীবীরা।
আমি বলবো এখন আর দেরি করার নতুন এক্সপেরিমেন্ট করার সময় নাই। সমাজ দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। আগে ছিল একদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ, আরেকদিকে রাজাকার আল-বদর। তারা রয়ে গেছে, তাদের ভাগ হয়নি। কিন্তু যেটা নতুন উপদ্রব সৃষ্টি হয়েছে দিনে দিনে সেটা হচ্ছে প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারের বদান্যতায় এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সিভিল সোসাইটি আর মানবাধিকার কর্মী এই তিনদল। এদের যদি ঠিক মতো আইনের আওতায় না রাখা যায় তাহলে বিপাক। সরকার কিছু করে না, করে আইন। যেমন ড. ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের কিছু করণীয় নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক ক্ষমতাশালী এবং অনেক কিছু করতে পারলেও আইন এবং কোর্টের ব্যাপারে তার কোন ক্ষমতা নাই। তিনি সম্পূর্ণভাবে এর বাইরে থাকেন। ব্যাপারটা এমন না যে, মাহফুজ সাহেব ডিজিএফআইয়ের কাছ থেকে রিপোর্ট এনে লিখে দিলেন যে, শেখ হাসিনা চুরি করেছেন। এরকম রেকর্ড নাই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। তিনি দর্শন দিয়ে দেশ পরিচালনা করে, বিশ্ব পরিচালনা করেন। যার জন্য কেউ যে পয়েন্ট বলতে সাহস করেন নাই, অথচ তিনি খুব দামি কথা বললেন এবার জার্মানিতে গিয়ে। ইউক্রেনকে যুদ্ধ থামাতে বললেন। আর অফ দ্যা রেকর্ডে আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে বুঝেছি যে, শুধুমাত্র ন্যাটো মেম্বারশীপের জন্য অগণিত মানুষ যুদ্ধে মারা যাবে, বিশ্বের বহু মানুষ এর ভুক্তভোগী হবে, এটা কাম্য হতে পারে না। সুতরাং, এই বিষয়টি ফয়সালা করুন। এটা কেবল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের পক্ষেই সম্ভব, শুধু শেখ হাসিনা হলে তিনি এটা পারতেন না। আর আমরা এরকম একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কই চাই এবং অনেকদিন পর্যন্ত চাই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনেও এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিবেন এবং আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমাদের দেশ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে কিন্তু এর আগে এই আগাছা পরিস্কার করতে হবে। সব জায়গায় আগাছা পরিস্কার না করলে কোন ফসল ঠিক মতো হয় না। আমার মতে এই আগাছা হচ্ছে এই দুই পত্রিকা। আমি এই দুই পত্রিকা বন্ধ করার পক্ষে না। যে যার ভিউ তারা লিখুক। কিন্তু, আইনের যারা সামান্য একটু বাইরেও যারা যাবে তাদের সাথে সাথে এর আওতায় নেওয়া উচিত। বিএনপির দুইজন নেতা যদি এতোদিন জেল খাটতে পারে, তাদের নিয়ে কয়টা লেখা লিখেছে এসব বুদ্ধিজীবীরা। আমার তো একটাও চোখে পড়ে না। বুঝলাম আমি বিএনপির আদর্শে বিশ্বাস করি না। কিন্তু, যে দুইজন জেলে থাকলে তাদের নিয়ে তো লেখা যেত। তা নিয়ে কোন এডিটোরিয়াল বের হয় না। আপনাদের কারখানা যখন এফেকটে হলো তখন এডিটোরিয়াল বের হলো। এই আপনাদের বুদ্ধিজীবী। আর কতকাল এই সব ভাঁওতাবাজি করবেন? আমরা ভাঁওতাবাজি ফ্রি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক আইনের শাসন এবং একই সাথে সিভিল সোসাইটি যেন সুসংগঠিত হয়, মানবাধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সংগ্রামে প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই শেষ বয়সে এসেও যুদ্ধে নামতে প্রস্তুত আছি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক আইন শাসন মানবাধিকার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।